• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্য, নিন্মগ্রেডের কর্মচারীদের নাভিশ্বাস


নিজস্ব প্রতিনিধি আগস্ট ২৮, ২০২১, ০৩:৪১ পিএম
ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্য, নিন্মগ্রেডের কর্মচারীদের নাভিশ্বাস

ফাইল ছবি

ঢাকা : আবারও বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম। টানা প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির থাকার পর চলতি বছরের জুন-জুলাইতে দাম কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। এদিকে শুধু ভোজ্য তেলই নয়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনি, পেঁয়াজ, মসুর ডালসহ অন্তত সাতটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। দাম কমেছে শুধু প্যাকেট ময়দা, আলু ও আমদানিকৃত আদার। বাড়তি দরে পণ্য কিনতে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে নিন্ম গ্রেডের কর্মচারীদের।

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ ও কাওরানবাজারে খোঁজ নিয়ে নিত্যপণ্যের দামের এ চিত্র পাওয়া যায়। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) শুক্রবার তাদের দৈনন্দিন বাজারদরের প্রতিবেদনে নিত্যপণ্যগুলোর দামের একই তথ্য তুলে ধরেছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম মাঝে কিছুটা কমলেও এখন আবার ঊর্ধ্বমুখী। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। চিনির বাজারেরও একই অবস্থা।

শুক্রবার খুচরাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, পাম অয়েল ১১৪ থেকে ১২০ টাকা ও পাম সুপার ১১৮ থেকে ১২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় লিটারে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেশি। তবে নতুন করে বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়েনি। গতকাল বাজারে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।

টিসিবির হিসেবে গত এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, পামঅয়েল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও পামসুপার ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়েছে। আর এক বছরের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, পাম অয়েল ৬৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, পাম সুপার ৬১ দশমিক ০৭ শতাংশ, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৩৮ দশমিক ১০ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৩৯ দশমিক ১৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় ভোজ্য তেলের বাজার মৌলভীবাজার। এই বাজারে গত বৃহস্পতিবার (শুক্রবার বন্ধ থাকে) প্রতি মণ সয়াবিন ৪ হাজার ৮২০ টাকা, পাম অয়েল ৪ হাজার ৪৮০ টাকা ও পাম সুপার ৪ হাজার ৫৮০ টাকায় বিক্রি হয়। যা ১৫ দিনের ব্যবধানে মণ প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি। এই বাজারের পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, মাঝে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম অনেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার বাড়তি।

তিনি বলেন, ভারত আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রচুর পরিমাণে পাম অয়েল আমদানি করেছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকটে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় গত জুন-জুলাই মৌসুমে পাম অয়েল উত্পাদন আশানুরূপ হয়নি। সামনে ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনায় মৌসুম শুরু হবে। আর একটা আশার কথা হলো, গত বছর বিশ্ববাজার থেকে চীন তাদের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে পাম অয়েল কিনেছিল। কিন্তু এ বছর তারা সেভাবে কিনছে না। তাই দাম আরো নাও বাড়তে পারে।

ভোজ্য তেলের পাশপাশি গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনিতে দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। গতকাল খুচরাবাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয় ৭৭ থেকে ৮০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৭৫ থেকে ৭৭ টাকার মধ্যে।

ছোট দানা মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। ছোলার দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম কমেছে প্যাকেট ময়দার। কেজিতে দুই টাকা কমে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল খুচরাবাজারে আমদানিকৃত আদা ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কম। আর দেশি আদা বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে। দেশি হলুদ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১৪০ থেকে ২৬০ টাকা আর আমদানিকৃত হলুদ ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। আর প্রতি হালি ফার্মের লাল ডিমে দুই টাকা বেড়ে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বাজারে এখন সবজির দামও বেশ চড়া। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৭০ টাকা, করল্লা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে, পটোল, ঢ্যাঁরশ ৪০ টাকা, কাকরোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, লতি ৬০ টাকা, টম্যাটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা, শশা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচাকলার হালি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে। এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আর সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুতে দুই থেকে তিন টাকা কমে ১৮ থেকে ২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মূল বেতন ৮২ হাজার টাকা। এছাড়াও তিনি বাসা ভাড়া হিসেবে পাচ্ছেন ৪১ হাজার টাকা। গাড়ী রক্ষণাবেক্ষনের জন্য পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা। রান্না করার জন্য বাবুর্চির বেতন এবং দারোয়ানের জন্য পাচ্ছেন ১৬ হাজার করে। টেলিফোন বিল এবং সভার সম্মানিসহ মাসে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা পাচ্ছেন তিনি। বছরে তিন থেকে পাঁচটি বিদেশ সফরে পান অতিরিক্ত কয়েক লাখ টাকা।

অথচ ২০ তম গ্রেডের একজন কর্মচারী সর্বসাকুল্যে বেতন পাচ্ছেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই তাকে বাড়ীভাড়া, খাবারসহ সব ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎবিল, গ্যাসবিলসহ সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে ৭ হাজার টাকা। এর পর পুরো মাসের খরচ চালানোর জন্য তার হাতে থাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তাকে পুরো মাসের সংসারের খরচ, পরিবারের কাপড়সহ যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়। এর বাইরে তার আয়ের আর কোনো উৎস নেই। বেতনের আকাশ পাতাল বৈষম্য থাকলেও দৈনন্দিন খরচে নেই খুব বেশি পার্থক্য। ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের মাসের ১৫ দিন না অতিবাহিত হতেই শুরু হয় টানাটানি। সংসারের খরচ নির্বাহ করতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই স্ত্রী সন্তানকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে নানাভাবে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি কর্মচারীরা। তারা পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বহুবার। মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন দীর্ঘদিন।

সোনালীনিউজ/এসআই/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!