• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

কাট-ছাঁট করেই চলছে নিম্নবৃত্তের ইফতার


জনাব আলী, রাজশাহী মার্চ ১৪, ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
কাট-ছাঁট করেই চলছে নিম্নবৃত্তের ইফতার

রাজশাহী: ইফতার রমজান মাসে মুসলিমদের একটি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় নীতি। সাধারণত হালকা খাবার যেমন- খেজুর, পানি ও ফল দিয়ে শুরু হয়। এরপর ভারী খাবার হিসেবে ভাত, রুটি এবং মিষ্টিসহ ফাস্টফুড আইটেমও থাকে। খেজুর ও পানির পরপরই ফাস্টফুড আইটেম খাওয়ার আচার বেশ জনপ্রিয়। রাজশাহীতে প্রতিবারের মতো এবারও ইফতারির বাজার জমে উঠেছে। তবে ইচ্ছে থাকলেও পছন্দের খাবার পাতে তুলতে পারছেন না নিম্ন আয়ের মানুষ। আবার অনেকেই কাট-ছাঁট করেই কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছেন ধর্মীয় এ আচার অনুষ্ঠান। অন্যান্য পণ্যের মতোই লাগামহীন ইফতারির বাজারও। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তরের নমুনা অভিযান এবং জরিমানাও বাজারে স্থিতিশীল করতে পারছে না।

ফাস্টফুডের বাহারি বিভিন্ন পদের ইফতার সামগ্রীতে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সুনাম রয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। নগরীর মোড়ে মোড়ে, হোটেল-রোস্তারাগুলোতেও বাহারি ইফতারির আইটেম বিক্রি হচ্ছে। তবে বিগত সময়ের চেয়ে দাম বেশ চড়া। নেই মূল্য তালিকার বালাই। ইচ্ছেমতো দাম আদায় করার অভিযোগ ক্রেতাদের। এবার খেজুর ও ফলের দাম যেমন অস্বাভাবিক তেমনি ফাস্টফুডের বাহারি পদেও অতি মুনাফার চোট। আর এতেই নাজেহাল মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

নগরীর বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফলের বাজারে আঙ্গুর, আপেল, বেদানা, কমলা প্রতিকেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। এতে ফলের ধারে কাছেও যাচ্ছেন না অনেকেই। গরিবের ফল খ্যাত ‘পেঁপে’ সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। মান একটু ভালো হলে ডাবল সেঞ্চুরি দিয়েই কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। শসা, গাজর ও ইফতারিতে জনপ্রিয় তরমুজের দামও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে।

ইফতারির দ্বিতীয় দিনে ফল কিনতে গিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার চিত্র তুলে ধরে ক্রেতা নাইম হোসেন বলেন, সারাদিন রোজা রাখার পর ফল শরীরের শক্তি জোগায়। তার বাবাকে ডাক্তার ইফতারিতে ফল রাখতে বলেছেন। কিন্তু ফলের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকাও বেড়েছে। প্রথম দিন ফল কিনি নি, হয়তো দ্বিতীয় দিনে দাম কিছুটা কমবে ভেবে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেও আঙ্গুর ৩০০ টাকা কেজি, আর ১০০ গ্রাম নিলে ৩৫ টাকা দাম চাচ্ছে।

এদিন ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। কমলা ১৮০-২০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। তরমুজ ১০০ টাকা কেজি। আর শসা ৮০-৯০ টাকা। আর সারাদেশের মতোই খেজুরের দামও নাগালের বাইরে রাজশাহীতে। ৩০০ টাকার নিচে কোনো খেজুর মিলছে না বাজারে।

এদিকে, বিকেল থেকে ফাস্টফুডের বাহারি পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা। হোটেল-রোস্তারাঁগুলোও রমজানকে সামনে রেখে হোটেলের বাইরে অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন। নগরীর প্রতিটি মোড়ে অস্থায়ী ফাস্টফুডের দোকান। যেখানে ঘিয়ে ভাজা বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, স্পেশাল ফিরনি, ক্ষিরসা, ফালুদা, নবাবী টানা পরোটা, কাশ্মিরী পরোটা, চিকেন মসলা, রেশমি কাবাব, তেহারি, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন ফ্রাই, পিয়াজু, ছোলা, মাঠা-ঘোল ও নানারকমের জুসসহ জনপ্রিয় ইফতার সামগ্রী এবারও মন কাড়ছে রাজশাহীর মানুষের। কিন্তু মন চাইলেও স্বস্তি নেই। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে কোনো কোনো আইটেমের দাম গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আবার ছোলা, মটর থেকে শুরু করে ইফতারির প্রতিটি সামগ্রীর দাম প্রতি ১০০ গ্রামে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। আর যেসব সামগ্রীর দাম বাড়ে নি, সেগুলোর আকার তলানিতে নেমেছে।

নগরীর ভদ্রা এলাকার ঐতিহ্যবাহী অতিথি রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন ধরনের বাহারি ইফতারি কিনছেন হাসান তানভীর। তিনি জানান, একটি রেশমি কাবাব ১৫০ টাকা, বিফের শিক কাবাব ১৪০, চিকেন সাসলিক ১০০, ব্যাংকক চিকেন ৪০, চিকেন জালি কাবাব ৪০, মাটন পরোটা ৫০, শামী কাবাব (বিফ) ৫০ টাকা এবং একটি চিকেন ফ্রাই কিনলাম ৫০ টাকা দিয়ে। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের ইফতার সামগ্রীর দামও বেড়েছে আকারও কমেছে।

নগরীর কোর্ট বাজার থেকে ইফতারির অতি জনপ্রিয় ছোলা ও পিয়াজু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন আসলাম উদ্দিন। তিনি বলেন, এক পিস পিয়াজুর দাম ১০ টাকা। আর ১০ টাকার ছোলা এখন নিলো ১৫ টাকা। আমার যা আয়, তা দিয়ে অন্য আইটেমগুলো দাম জিজ্ঞাসা করার সাহসও করি নি।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ইফতারির সব পণ্যের দাম অস্বাভাবিক। ফলের দাম এক দিনের ব্যবধানে ৫০-১০০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। যা ইচ্ছে তা অবস্থা। এর লাগাম টানা জরুরি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছেন। রোজার প্রথম দিনেও তারা সাহেব বাজারে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি দোকানে জরিমানাও করেছেন।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!