• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ঈদের আনন্দ নেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ১৭ পরিবারে 


এমএস রুকুন, গাজীপুর এপ্রিল ৯, ২০২৪, ০৮:৫০ পিএম
ঈদের আনন্দ নেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ১৭ পরিবারে 

গাজীপুর: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের কারখানা গুলোতে যখন ছুটি ঘোষণার বাকী আছে আরও দুই দিন। এর আগেই শিল্পাঞ্চলের প্রতিটি এলাকায় ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে। তবে ঈদের আনন্দ নেই গাজীপুরের কালিয়াকৈরের তেলিরচালা টপস্টার এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত শ্রমিক কলোনির সোলাইমান মোল্লা, মনসুর আলী, শিশু তায়েবা, আরিফুল ইসলাম, মহিদুল-নার্গিস খাতুন দম্পতি, জহিরুল ইসলাম, মোতালেব, সোলায়মান, রাব্বি, তাওহীদ, ইয়াসিন, মশিউর রহমান ও কমলা খাতুন, নাদিম, লালন মিয়া, কুদ্দুস খানসহ ১৭ পরিবারে। 

গত বুধবার (১৩ মার্চ) ২০২৪ আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ওই বিস্ফোরণে নারী, শিশু ও পুরুষসহ কম পক্ষে ৩২ জন দগ্ধ হয়। এসব আহতদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বাকী গুরুতর আহতরা ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। এর মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।বাকী দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা চলমান থাকে। পরে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়। একে-একে ১৭ জন মারা গেছে। 

দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া এই ১৭ পরিবারের স্বজনদের সূত্রে জানাগেছে,তেলির চালার শফিক কলোনিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে যারা মারা গেছেন। এরা সকলেই শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ ছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন কারখানায় কাজ করতেন। কেউ দৈনিক মজুরিতে কারখানার গোডাউনে কাজ করতেন। অনেকেই স্থানীয় গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক ছিলেন। অল্প বেতন দিয়েই সন্তান ও পরিবারের বাবা-মায়ের খরচ যোগাতেন। এখন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা যাওয়ায় এবারের ঈদের সময় নিহতের সন্তান ও পরিবারের লোকজন কেউ ঠিক মতো দুবেলা ডাল, ভাত খেতে পারছেনা। এক একটি পরিবারের লোকজন একদিকে হারানো শোকে কাতর। অপর দিকে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।  

সরেজমিনে, রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা তেলিরচালার শফিক কলোনিতে গিয়ে দেখা গেছে,এই কলোনির প্রতিটি ঘর যেনো এক নিরবতা পালন করছে। শোন সান,কোন শব্দ নেই কলোনির ভাড়াটিয়াদের। মনে হলো এযেনো এক মৃত বাড়ি এলাকায় এসেছি। তবুও কলোনির প্রথম সারির পাশের রাস্তা দিয়েই সামনে এগিয়ে গেলাম। কিছুদুর অগ্রসর হতেই দেখা পাওয়া গেলো এক নিহত পরিবারের সদস্যদের। 

বেতন-বোনাস পেয়ে প্রতি ঈদে সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক নিয়ে একসঙ্গে বাড়ি যেতেন নাজমা ও কুদ্দুস দম্পতি। গত বুধবার (১৩ মার্চ) ২০২৪ -এ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের দুই দিন আগেও পরিবারের কেনাকাটা নিয়ে পরিকল্পনা সাঝিয়ে ছিলেন। নিয়তির খেলায় প্রিয়তমা স্বামীকে হারিয়ে তিনি এখন নির্বাক হয়ে প্রলাপ করছেন। 

কখনো টিনসেড ঘরের দরজার এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে,আবার কখনো স্বামীর ছবি দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে অঝোরে কাঁদেন নাজমা। গণমাধ্যমে কর্মী দেখা নাজমা বলেন,জীবনের সবকিছুই আমার এলোমেলো হয়ে গেছে। আমি বেঁচে আছি ঠিকই মৃত মানুষের মতো। তিনি আরও বলেন, ঈদের আনন্দ তো দুরের কথা। টাকা পয়সা নেই, কি ভাবে চলমু এই চিন্তায় রাতে ঘুম ধরেনা। কিভাবে ঈদে বাড়ি যাব,ঘরে ঢুকলে বুকটা ফেটে যায়।

একই কলোনির আরেক ভাড়াটিয়া রানী আক্তার। তিনি বলেন, ‘নয় বছরের ছেলে সোলায়মানকে হারিয়ে ফেলেছি। একমাত্র আদরের ধন। আমার ঈদ দরকার নেই। আমি আমার মানিককে ফিরিয়ে চাই। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এর আগের তিন দিন আগেও আমার পুতে আমাকে বলেছিল, আম্মা আমাকে ঈদের মার্কেট করে দিবানা। আমি কই ছিলাম বাবা বাবা ছুটি হোক তহন মার্কে যামু। এখন পুত নাই আমার ঈদও নাই।’ 

নাজমা-রানী আক্তারই নয় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস বিস্ফোরণ দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়েছে অন্তত ৩৬ পরিবারের স্বজনরা। সবার পরিবারেই একবারের ঈদের কোন আনন্দ নেই, আছে শুধু আহাজারি আর শোকের ছায়া। 

এমএস

Wordbridge School
Link copied!