• ঢাকা
  • রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

সোহাগের পরিবারের আহাজারি থামছেই না


বরগুনা প্রতিনিধি জুলাই ১২, ২০২৫, ০৯:৩৩ পিএম
সোহাগের পরিবারের আহাজারি থামছেই না

বরগুনা: বাবার মৃত্যু হয় বজ্রপাতে। বয়স তখন লালচাঁদ সোহাগের সাত মাস। মায়ের সঙ্গে নানা বাড়িতে থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর চরম দরিদ্রতা আকড়ে ধরে সোহাগের পরিবার। 

দুই মেয়ে মানজুরা ও ফাতেমা এবং সোহাগকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান মা খাদিজা বেগম। লালবাগ থানার মেসে রান্না করার কাজ করত। আর বোনদের নিয়ে থানার কাছাকাছি ঘরে থাকতো সোহাগ। 

অভাবের কারণেই ১২ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে নামে সোহাগ। কখনও হোটেল বয়, কখনো বাসা বাড়িতে কাজ করত। এভাবেই মায়ের সঙ্গে আয় করে দুই বোনের বিয়ে দেয়। এরপর ২০০৮ সালে কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুরে বিয়ে করে সোহাগ। 

বিয়ের পর শুরু করে মূলত ব্যবসায় নামে সোহাগ। মিটফোর্ড এলাকায় মাম পানি সরবরাহ করে সংসার চালানো শুরু করে। ২০১২ সালে স্ত্রীর গর্ভে আসে প্রথম সন্তান সোহানা। ২০১৪ সালে জন্ম নেয় ছেলে সোহান। ঐ বছরই ডিসেম্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় মা। 

মায়ের চিকিৎসা ব্যয় করতে গিয়ে দেনা আর পরিবারের ব্যয় বাড়তে থাকায় পানি বিক্রি বন্ধ করে চাকরি নেয় ভাঙ্গারী মহাজনী দোকানে। মহাজন পলাশের দোকানে ৩ বছর কাজ করার পর নিজেই হন ভাঙ্গারী মহাজন। এ ব্যবসা থেকে লালচাঁদ সোহাগ ঘুরে দাঁড়ায়। ৫ বছরের মধ্যে হয়ে ওঠেন টাকা পয়সার মালিক।

সোহাগ রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও বিএনপির রাজনীতিকে সমর্থন করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনীতিতে চুপচাপ থাকলেও ৫ আগস্টের পর সক্রিয় হয়ে যুবদলের কর্মকান্ডে জড়াতো সোহাগ। দলীয় পদ পদবি না থাকায় মুমিন টিটুদের সঙ্গে গড়ে তোলে বন্ধুত্ব। 

নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এনে তাদেরকে আপ্যায়ন করাতো। নিজেও ওদের বাড়িতে দাওয়াতে অংশগ্রহণ করতো। মধুর সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরই মুমিন, টিটু, ফয়সালদের চোখ পড়ে সোহাগের ব্যবসার ওপর। হঠাৎ করে দাবি তুলে ব্যবসা করতে হলে মাসিক দিতে হবে চাঁদা। আর নয় অর্ধেক মালিকানা দিতে হবে তাদের। 

গত দুই মাস ধরে মুমিন, টিপুরা তাদের দাবি নিয়ে চাপ দিতে থাকে। সোহাগ তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে গত ৯ জুলাই তালা ঝুলিয়ে দেয় মুমিনরা। সকাল থেকে ঐদিন দোকানে না আসায় ফয়সালকে দিয়ে ফোন করায় দোকানে তালা ঝুলানো হয়েছে। 

বিকেল সাড়ে তিনটায় খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জের কদমতলীর বি ব্লকের বাসা থেকে বের হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দোকানের তালা খুলতে গেলে জনসম্মুখে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় সোহাগকে। 

এসময় সোহানা আরও জানান, বাবার হত্যার ১ সপ্তাহ আগে একটি বিয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে তার পাশে অচেনা এক লোক বসে বিরক্ত করায় সোহাগ প্রতিবাদ করে। মূলত এই ঘটনার পর শুক্রবারের পর থেকে সব সময় বাবার চোখে মুখে হতাশা দেখতাম। কিছু জানতে চাইলে বলতো তোমরা পড়াশোনা কর। 

সোহাগের স্ত্রী জানায়, চাঁদাবাজ চক্র দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে আসছিল। রাজি না হওয়ায় গত ৯ জুলাই বিকেলে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়। ঘটনার পর মামলা হলেও নিহতের পরিবারের অভিযোগ মূল আসামিদের নাম বাদ দিয়ে মামলায় অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

নিহতের স্ত্রী লাকি বেগম স্বামীর কবরের পাশে আহাজারি আর শোকের মাতন করছে। দুই সন্তানকে নিয়ে যারা এতিম করছে তাদের ফাঁসি দাবি করছেন তিনি। 

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান পরিবারকে স্বান্তনা দিতে আসা বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা। যারা এই ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ড করেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবি করেন। 

সোহাগের মৃত্যুর পর শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে  (১১ জুলাই) বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের রায়ভোগ গ্রামে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। এ ঘটনার সংবাদ বরগুনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আজ সকাল ১১টায় বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার দাবীতে মানববন্ধন করে বরগুনা প্রেসক্লাব।

এআর

Wordbridge School
Link copied!