লালমনিরহাট: কোটিপতি ব্যবসায়ীর নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ দিয়ে ভূমিহীনদের তোপের মুখে পড়েছেন ইউনিয়নের তহসিলদার। এতে প্রশ্নবিদ্ধ উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
সরকারি ঘর বরাদ্দের তালিকায় এলাকার আজাহার আলী নামে এক কোটিপতি ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীদের নাম থাকায় স্থানীয় ভূমিহীনদের তোপের মুখে পড়ে ঘরের চাবি হস্তান্তর না করে ফিরে আসেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার)।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় বিএনপির নেতাদের দলীয় প্রভাব ও টাকার বিনিয়ে ঘর পেয়েছে ওই এলাকার বিত্তশালীরা। এ ঘটনায় গত ১০ জুলাই আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিধান কান্তি রায় বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূমিহীনরা।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের কামারপাড়া গুচ্ছগ্রাম ও পুরান ভেলাবাড়ি গুচ্ছগ্রামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পুরাতন ঘর ভেঙে নতুন করে মোট ৫২টি ঘর নির্মাণ করে সরকার।
এরমধ্যে কামারপাড়া গুচ্ছগ্রামে পূর্বের ১০টি ঘর ভেঙে ৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি ওই এলাকার আজাহার আলী নামে এক কোটিপতি ব্যবসায়ী এবং বিত্তশালী ফজর আমী ও হোসেন আলীর নামে ভূমিহীনদের ওই সরকারি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ভূমিহীনরা।
অভিযোগ উঠেছে, কামারপাড়া গুচ্ছগ্রামে পূর্বের ১ নম্বর ঘরটিতে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন ষাটোর্ধ্ব শেফালী বেগম। স্বামী আজিজ হোসেন মারা গেছেন ১৭ বছর আগে। নতুন ঘর নির্মাণের জন্য পুরাতন ঘর ভেঙে ফেলায় বিধবা সেফালী ঠাঁই নেন অন্যের জমিতে। সে আশায় বুক বেঁধেছিলো নতুন ঘর পাবেন কিন্তু সেই ঘরটি দেওয়া হয় এলাকার বিত্তশালী কোরবানের ছেলে ফজর আলী নামের এক ব্যক্তিকে। যার রয়েছে জমি, অর্থসম্পদ ও আর্থিক স্বচ্ছলতা।
শেফালী বেগম বলেন, “আমি ২৬ বছর ধরে ওই ঘরেই আছি। নতুন করে যখন ঘর বানানো হলো, তখন আমাকে না জানিয়ে অন্য এক জনকে দিয়ে দেওয়া হলো। আমি প্রতিবন্ধী মানুষ, ঘর না পেলে কোথায় যাব? আমি শুধু আমার ঘরটা ফেরত চাই।”
ওই গুচ্ছগ্রামে নতুন ঘর পেয়েছে প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক সওদাগর শেখের ছেলে আজহার আলী (৪৫)। তার ওই ইউনিয়নের ভেলাবাড়ী বাজারে রয়েছে ৪টি দোকান। একটি নিজে করেন, ৩টি দোকান ভাড়া দিয়েছেন। তার রয়েছে বাজার সংলগ্ন ১৭শতাংশ জমির উপর পাকা বাড়ি। রয়েছে ৮বিঘা জমি। এছাড়াও ওই গুচ্ছগ্রামে নতুন ঘরের তালিকায় রয়েছেন ওই এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে বিত্তশালী হোসেন আলী। তার রয়েছে হার্ডওয়ারের দোকান। রয়েছে গরুর খামার।
অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়নের পুরাতন ভেলাবাড়ী গুচ্ছগ্রামে নতুনভাবে নির্মাণ করা ৪৬ ঘরের মধ্যে অনেক বিত্তশালীর নাম রয়েছে। যাদের রয়েছে জমি ও বাড়ি। কিন্তু এলাকার গরীব, ভূমিহীন ও দিনমজুর মানুষ বহু বছর ধরে সরকারি খাস জমি বা অন্যের জমিতে কষ্ট করে বসবাস করলেও তাদের ঘর পাওয়া তালিকায় নাম নেই। নিয়ম ছিলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূর্বে যারা ঘরে বসবাস করছিলেন তারাই নতুন ঘর পাবেন। কিন্তু কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময় ও সুপারিশে বিত্তশালীদের ঘর দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘর না পাওয়া ভূমিহীনদের দাবি, যাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাদের রয়েছে জমি, সহায়-সম্পত্তি, এমনকি রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলে সুসম্পর্ক। এর ফলে প্রকৃত ভূমিহীনরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা প্রকৃত ভুমিহীনদের মাঝে ঘর বিতরণের দাবী জানান। তারা অভিযোগ করে বলেন, ইউএনও ও এসিল্যান্ড তদন্ত করে সঠিক ভূমিহীনদের নিশ্চিত না করে ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিধান কান্তি হালদার বলেন, ঘর বিতরণের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। প্রকৃত ভূমিহীনরাই সরকারি ঘর পাবেন। অভিযোগের তদন্তপূর্বক এ সমস্যা সমাধান করা হবে।
এআর







































