• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ফয়েজের স্মৃতি নিয়ে এখনো কাঁদছেন মা-বাবা 


লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জুলাই ১৭, ২০২৫, ১০:১৮ পিএম
ফয়েজের স্মৃতি নিয়ে এখনো কাঁদছেন মা-বাবা 

লক্ষ্মীপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহতের দিন ফয়েজ আহমদের (৩১) সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় তার 'মা' সবুরা বেগমের। 

ছেলে ফয়েজ বলেছিলেন, মা আওয়াজ শুনেননি, হ শুনি, কিসের আওয়াজরে বাবা? মা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে, এ কথা বলার সাথে সাথে আমি কল কেটে দিয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করি। 

তখন গুলি খাইছে নাকি কখন খাইছে, আমি কইতে পারি না। একটু পরে আমি কল দিলাম। রিসিভ করে বলে, ওমা তুমি ফোন রাখিয়া দাও, আমি বাসায় যেতে পারলে কলও দিমু গো। মায়ের সঙ্গে এটাই ছিল তার শেষ কথা। 

সরজমিনে ফয়েজের বাড়িতে গেলে মা সবুরা বেগম সন্তান হারানোর ব্যথায় বিলাপ করে কান্নাজনিত কণ্ঠে সোনালীনিউজকে এসব কথা বলেন। 

ফয়েজ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ঝাউডগি গ্রামের তাজুল ইসলাম বেপারী বাড়ির আলাউদ্দিন বেপারীর বড় ছেলে। ফয়েজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। 

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিম্নবিত্ত সংসারে ফয়েজের জন্ম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ফয়েজ ছিলেন সবার বড়। কম বয়সেই কাজের উদ্দেশ্যে মালদ্বীপ যান তিনি। করোনার কারণে ২০২০ সালে চাকরি হারিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। পরিবারের হাল ধরতে চাকরি খুঁজতে তিনি ঢাকায় যান। সেখানে স্যানিটারি কাজ করেন। তার উপার্জন দিয়েই চলত পুরো সংসার। 

ফয়েজ গাজীপুরের টঙ্গীতে ভালোবেসে নুরনাহার বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের রাফি নামবে ৩ বছর বয়সী একটি ছেলেও রয়েছে। তারা ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ফয়েজের জন্য এখনো কান্না করেন মা সবুরা বেগম ও বাবা আলাউদ্দিন। ছেলের সঙ্গে সেদিনের ফোনে কথা বলার ও অতীতের নানা স্মৃতি তুলে ধরে বিলাপ করে কাঁদছেন বৃদ্ধা সবুরা বেগম। ফয়েজের স্ত্রী বর্তমানে তিন বছরের শিশু সন্তান নিয়ে ঢাকার টঙ্গির একটি বস্তিতে বসবাস করছেন। 

ফয়েজের বাবা আলাউদ্দিন বেপারী সোনালীনিউজকে বলেন, ২১ জুলাই সন্ধ্যায় আমার চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে আমি ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাই। প্রথমে ছেলের নম্বরে কল দিই। পরে ছেলের বৌকে কল দিই। সে জানায়, আমার ছেলের মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ কথা শুনেই ধরে নিয়েছি, আমার ছেলে আর নেই। 

আমার ছেলের ঠিকাদার আবুল কাশেম তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে মৃত্যু হয়। আমি রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে যাই। চিকিৎসকরা দ্রুতই লাশ নিয়ে যেতে বলে। কাগজপত্র ছাড়া গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসি। আন্দোলনে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, আমি এর বিচার চাই। আমার ছেলেসহ সকল শহীদদের হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি। 

তিনি আরও বলেন, আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে। ফয়েজ সবার বড়। সে কাজ করে যে টাকা পাঠাতো, তা দিয়ে কোনোমতে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাই। ফয়েজের স্ত্রী ও ছেলে আছে। নাতিকে নিয়ে ছেলের বৌ টঙ্গীর একটি বস্তিতে বসবাস করে। আমার ছেলের নামে হায়দরগঞ্জ-ঝাউডগি সড়কের নামকরণ, বটতলীতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও কবরস্থানটি পাকাকরণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। এ কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে ফয়েজ সম্পর্কে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে। 

জুলাই আন্দোলনে নিহতদের সরকারি সহযোগিতার বিষয়ে ফয়েজের বাবা আলাউদ্দিন জানান, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা ও জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফয়েজের ছেলের নামে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। 

ফয়েজের বাড়ির বাসিন্দা মনসুর আহমেদ বলেন, ফয়েজকে ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি, সে অমায়িক এবং ভদ্র স্বভাবের ছিল। পরিবারের লোকজন তার ওপর ভরসা করে চলতো। সে মারা যাবার পরে, তার পরিবারের লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকার যাতে তার পরিবার ও তার ছেলে সন্তানের দিকে নজর দেয়। 

প্রতিবেশী মনির হোসেন বলেন, ফয়েজদের এলাকার গ্রামীণ আঞ্চলিক সড়কটি হায়দারগঞ্জ-ঝাউডগী সড়ক নামে পরিচিত। ওই সড়ক শহীদ ফয়েজের নামে নামকরণের দাবি জানাচ্ছি। 

উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আবদুল গনি সোনালীনিউজকে বলেন, ফয়েজ জামায়াত ইসলামের সমর্থক ছিল। তাই দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। ফয়েজের বাবাকে এক লাখ এবং শিশু সন্তানের জন্য তার স্ত্রীর হাতে এক লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। শহীদ পরিবারটির জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। 

প্রসঙ্গত, শহীদ ফয়েজ আহমদ ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেখানে স্যানিটারি কাজ করতেন। ২০২৪ সালের ২১ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকার নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার একটি ভবনে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। 

স্যানিটারি ঠিকাদার মো.কাশেম গুলিবিদ্ধ ফয়েজকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে বাড়িতে পরিবারের লোকজনকে খবর দেওয়া হলে ২১ জুলাই রাতেই তার লাশ রায়পুর উপজেলার উত্তর চর আবাবিল গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরদিন (২২ জুলাই) দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।   

এআর

Wordbridge School
Link copied!