• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

কুসুমহাটি কৃষি ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি: গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ


শেরপুর প্রতিনিধি জুলাই ২১, ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম
কুসুমহাটি কৃষি ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারি: গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ

ছবি : সংগৃহীত

শেরপুর: শেরপুর সদর উপজেলার কুসুমহাটি কৃষি ব্যাংক শাখার সেকেন্ড অফিসার শামসুন্নাহার ‘আশা’-এর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও ঋণপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। 

স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ব্যাংকের এই কর্মকর্তা দালালের মাধ্যমে অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত গ্রামীণ মানুষের দুর্বলতা ও অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের ন্যায় গ্রামের সহজ সরল কৃষকদের আর্থিকভাবে প্রতারিত করছেন।

বলায়েরচর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের মোছা. খাদিজা খাতুন বলেন, “ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি ভেবেছিলাম। দালাল ইসমাইল ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। কিন্তু পরে জানতে পারি, আমার নামে ঋণ মঞ্জুর হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাকি ৫০ হাজার টাকা কোথায় গেল? জানতে চাইলে কেউ উত্তর দেয়নি। আমি বিশ্বাস করি, এই টাকাটিও ওই ব্যাংক কর্মকর্তার হাতেই গেছে।”

একই ইউনিয়নের বলায়েরচর গ্রামের  হেজাক মিয়া জানান, “আমার নামে ব্যাংকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ ছাড় করা হলেও হাতে পেয়েছি মাত্র ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বাকি ৯৫ হাজার টাকা গেছে দালাল ও কর্মকর্তার পকেটে। আমি একজন সহজ সরল মানুষ। আমাদের মতো সহজ সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা চলছে দিনের পর দিন।”

ডোবারচর গ্রামের কৃষক আব্দুল করিমের অভিযোগ, “৫০ হাজার টাকার ঋণ পেতে গিয়ে জেনেছি আমার নামে ব্যাংক ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যংক। অথচ আমাকে অতিরিক্ত টাকার ব্যাপারে জানানো হয়নি, কোনো কাগজপত্রও আমাকে এখনও বুঝিয়ে দেয়নি।”

একাধিক ভুক্তভোগীদের দাবি, ব্যাংক কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ‘আশা’ ও দালাল ইসমাইল একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে কাজ করেছেন। এ ধরনের অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাৎ ব্যাঙ্কিং সেক্টরের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করছে বলে জানান তারা।

২০ জুলাই বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন গ্রাহক কুসুমহাটি কৃষি ব্যাংক প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে তাদের বঞ্চনার কথা জানান অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার বিচার দাবি করেন। 

বিষয়টি জানতে পেরে শেরপুর সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং স্থানীয়দের সহায়তায় রাত সাড়ে বারোটায় ওই তিনজন গ্রাহককে ৪০ হাজার টাকা ফেরত নিয়ে দেওয়া হয়। বাকি ৬০ হাজার টাকার জন্য অভিযুক্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যাংক ম্যানেজার চেক গ্রহণ করেন। এছাড়াও আজকের মধ্যেই ওই তিনজন গ্রাহককে টাকা ফেরতের আশ্বাস দেন ব্যাংক ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পর রাত দেড়টার দিকে ব্যাংক কর্মকর্তা আশাকে ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ে এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।

এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরও অভিযুক্ত দালাল ইসমাইল ও ব্যাংক কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ‘আশা’র কারও সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। 

কুসুমহাটি কৃষি ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে জানান, “ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার শামসুন্নাহার আশার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ঋণের অর্থ থেকে অতিরিক্ত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে বিষয়টি আংশিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। গতকাল আমরা তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ফেরত নিয়ে তিনজন গ্রাহকের মাঝে বিতরণ করেছি। আরও ৬০ হাজার টাকা আজ (২১ জুলাই) দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ফেরত দেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ইতোমধ্যে ব্যাংক অডিট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অডিটে কারচুপি ও আর্থিক অনিয়মের যথার্থতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শেরপুর জেলা তাতী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “নিরীহ কৃষকদের কাছ থেকে এইভাবে অর্থ আত্মসাৎ করাটা শুধু অনৈতিক নয়, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ জমা হচ্ছিল। অডিটের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষও বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পায়। এখন সময় এসেছে, যাতে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

এসআই

Wordbridge School
Link copied!