ঢাকা: রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে জুলাই থেকে পানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে পদ্মাতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। নদীর চরের বেশিরভাগ অংশও পানিতে তলিয়ে গেছে, ফলে অনেকে নৌকায় মালপত্র নিয়ে রাজশাহী শহরের দিকে বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের শেষ দিকে পদ্মায় পানি বাড়তে শুরু করে। রোববার (১০ আগস্ট) সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ১৩ মিটার। সোমবার (১১ আগস্ট) তা বেড়ে হয় ১৭ দশমিক ৩২ মিটার এবং মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ৬টায় দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার। রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার।
গেজ রিডার এনামুল হক জানান, প্রতিদিন সকাল ৬টা, ৯টা, দুপুর ১২টা, বিকেল ৩টা ও সন্ধ্যা ৬টায় পানি মাপা হয়। আজ সকাল ৬টায় ১৭ দশমিক ৪৩ মিটার পানির উচ্চতা রেকর্ড হয়েছে, যা বিপৎসীমার কাছাকাছি।
পানিবৃদ্ধিতে রাজশাহী শহরের তালাইমারী, কাজলা, পঞ্চবটি, পাঠানপাড়া, লালনশাহ মঞ্চ ও শ্রীরামপুরসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা তালাইমারী ও পঞ্চবটিতে, যেখানে অনেক বাসিন্দা ঘরবাড়ি ছেড়েছেন।
পানি বৃদ্ধির প্রভাবে গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, পবার চরখিদিরপুর ও বাঘার চকরাজাপুর চরের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। দুই পাড়েই ভাঙন দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে চকরাজাপুরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। অনেক বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিতে হয়েছে, এমনকি কবরও নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে।
চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, “প্রতিবছর ভাঙনের কারণে স্কুল তিনবার সরানো হয়েছে। এবারও আতঙ্কে আছি।”
এদিকে, পদ্মাপাড়ের জনপ্রিয় বিনোদনস্থান ‘টি-বাঁধ’ এলাকায় পানি বিপৎসীমায় পৌঁছানোয় গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দোকানপাট সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, “ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও ফারাক্কার অধিকাংশ কপাট খোলা থাকায় পদ্মার পানি বেড়েছে। জনসুরক্ষার জন্য ‘টি-বাঁধ’ এলাকায় প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং টুরিস্ট পুলিশ তা কার্যকর করছে। কেউ দেয়াল টপকে প্রবেশের চেষ্টা করলে আরও কড়াকড়ি করা হবে।”
ওএফ







































