• ঢাকা
  • রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

নড়াইলে নবান্ন উৎসবে দেশি পিঠার সমাহার


নড়াইল প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫, ১২:২০ পিএম
নড়াইলে নবান্ন উৎসবে দেশি পিঠার সমাহার

নড়াইলের মাঠে মাঠে এখন আমন ধান কাটার উৎসব। নতুন ধানে ভরে উঠছে কৃষকের গোলা। সেই ধানের চালেই রাত জেগে কৃষাণীরা তৈরি করেছেন নানা পদের বাহারি দেশি পিঠা। ভোরের আলো ফুটতেই নতুন পোশাক পরে শিশুদের হাত ধরে একে একে তাঁরা হাজির হচ্ছেন উৎসবস্থলে। এরপর যার যার নির্ধারিত দোকানে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখছেন পিঠা। আজ শনিবার সকালে নড়াইল শহরের ধোপাখোলা এলাকার শিশু বিকাশ ও সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র নন্দনকাননে গিয়ে দেখা মিলল এই প্রাণবন্ত চিত্রের।

নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দকে ঘিরে পঞ্চমবারের মতো এবার গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেছে নন্দনকানন। উৎসবে গ্রামের বৌ-ঝিয়েদের হাতে তৈরি নতুন চালের পায়েস, ধপধপে সাদা ভাপা, চিতই, নকশি, দুধপুলি, দুধচিতই, রসপাকান, রসপুলি, ফুলুরি, ক্ষীর পাটালী ও পাটিসাপটাসহ প্রায় ৩০ পদের দেশি পিঠার সমাহার ছিল চোখে পড়ার মতো।

নিজ হাতে নতুন ধানের চাল থেকে পিঠা তৈরি করা নারীদের একজন নীলিমা বাগচী। তিনি বলেন, ‘এই উৎসবে আমিসহ গ্রামে যত নারী আছেন, সবাই আমরা ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে পিঠা তৈরি করে এনেছি। প্রায় ৩০ রকমের রসালো ও সুন্দর সুন্দর পিঠা বানিয়েছি। আমাদের কেউ কেউ মধ্যরাত পর্যন্ত, কেউ আবার ভোর রাত পর্যন্ত জেগে এই পিঠা বানিয়েছেন। অতিথিদের খাইয়ে আনন্দ পাওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।’

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আয়োজন ছিল আরও জাঁকজমকপূর্ণ। আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ বছর নতুন আয়োজন হিসেবে ছিল শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম ও গ্রামীণ নারীদের হস্তশিল্পের প্রদর্শনী, যা উৎসবে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলোর একটি এঁকেছে শিশু প্রত্যয় বিশ্বাস। সে বলে, ‘কৃষকেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের জন্য ফসল ফলান। এজন্য আমাদের উচিত তাঁদের সম্মান করা। আমি তাঁদের নিয়ে একটি ছবি এঁকেছি। সেখানে কয়েকজন কৃষক ধান কাটছেন, আর একটি মেয়ে তাঁদের জন্য ভাত নিয়ে আসছে।’

দিনব্যাপী এই উৎসব দেখতে দূরদূরান্ত থেকে নন্দনকাননে ভিড় জমান শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষ। উৎসব প্রাঙ্গণে বেশির ভাগ নারীর পরনে ছিল লাল শাড়ি। আর শিশু-কিশোরেরা পরেছে বাহারি রঙের পোশাক। সবার সরব উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে নন্দনকানন চত্বর। গ্রামবাংলার এমন আয়োজন উপস্থিত সবার মন কেড়েছে।

উৎসবে আসা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা তপতী সেন বলেন, ‘এমন আয়োজন সাধারণত চোখে পড়ে না। গ্রামবাংলার এই যে ঐতিহ্য, তা আমরা ভুলে যেতে বসেছি। এখানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’

নবান্ন বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে আয়োজকেরা জানান, নবান্ন ও পয়লা বৈশাখ বাদ দিলে বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সময়ের পরিবর্তনে এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। এমন আয়োজনের মাধ্যমে বাঙালির লোকজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব। নবান্ন একটি উদার, সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। সেই সাংস্কৃতিক চেতনাকে টিকিয়ে রাখতেই এই আয়োজন।

নন্দনকাননের সম্পাদক চিকিৎসক মায়া রানী বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা যে সম্প্রদায়েরই হই না কেন, আমরা বাঙালি। বাঙালি সংস্কৃতিই আমাদের আসল সংস্কৃতি। নবান্ন আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব, যা কৃষকের ঘরে ঘরে দীর্ঘদিন ধরে পালিত হয়ে আসছে। যেহেতু নন্দনকানন একটি সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র, তাই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই এই আয়োজন।’

এম

Wordbridge School
Link copied!