• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

দুর্দশায় বিমা খাত: টাকা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা


আবদুল হাকিম আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১২:২০ পিএম
দুর্দশায় বিমা খাত: টাকা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

ঢাকা: দেশের জীবন বিমা খাত ক্রমশ সংকটের মুখে। দেশের ৩৬টি জীবন বিমা কোম্পানির মধ্যে ১৫টি মরণাপন্ন অবস্থায়, আরও ১৫টি মধ্যম ঝুঁকিতে আছে, এবং মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে স্থিতিশীল বলা যায়। এর মধ্যেই গ্রাহকদের পাওনা টাকা পরিশোধে দীর্ঘ বিলম্বের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু দুর্বল প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো খাতের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।

রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় একটি বিমা কোম্পানির অফিসে ঢুকতেই শোনা যায় একজন ক্ষুব্ধ গ্রাহকের কণ্ঠ। তিনি অভিযোগ করেন, “বিমা দাবির টাকা পেতে মানুষ ঘুরে ঘুরে হয়রান হচ্ছে, তবু টাকা পাচ্ছে না।”

প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, ২০২১ সালে মেয়াদ শেষ হওয়া একটি বিমার টাকা এখনও গ্রাহক পাননি। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিপর্যস্ত, তাই নতুন কোনো পলিসি নেওয়া হচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতি শুধু এক বা দুই গ্রাহকেই নয়, আরও কয়েকজন জানান, বিমা ম্যাচিউর হওয়ার পর ৪-৭ বছর ধরে তারা টাকা পাননি। এ কারণে অনেকে পরিচিতজনদের বিমা করাতে অনিচ্ছুক।

জীবন বিমা মানুষের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি মাধ্যম। আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করে মানুষ জীবন বিমা করে থাকেন। কিন্তু পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বছরগুলো ধরে টাকা না পাওয়ায় সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ভোগান্তিতে পরিণত হচ্ছে। ইডরার তথ্যও এ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করছে।

২০০৪ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে জীবন বিমায় পলিসি কমেছে ৫৪ লাখ। ২০২৪ সালে ১২,৯৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার দাবির বিপরীতে কোম্পানিগুলো পরিশোধ করেছে ৮,৫৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ দাবিকৃত প্রায় ৩৪ শতাংশ টাকা গ্রাহকরা পাননি। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে ৬,৩৭৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার দাবির মাত্র ৩৭ শতাংশই পরিশোধ হয়েছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের ক্লেইম পুরোপুরি পরিশোধ করেছে।

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী এস এম নুরুজ্জামান সোনালী নিউজকে বলেন, “দেশে দুর্বল প্রতিষ্ঠান যেমন আছে, তেমনি ভালো প্রতিষ্ঠানও আছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা একদিনেই ক্লেইম স্যাটেলমেন্ট করছে। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের জন্য সবার বদনাম হচ্ছে।”

বিমা খাতের দুর্বলতা এবং ক্ষতির জন্য দায়ীদের শাস্তি ও গ্রাহক সুরক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন। 

সংগঠনটির সভাপতি সাঈদ আহমেদ বলেন, “যারা প্রতারণা করছে, তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। দুর্বল বিমা কোম্পানিগুলোর জন্যও ব্যাংকের মতো লোনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে তারা স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারে এবং গ্রাহকরা তাদের অর্থ ফেরত পেতে পারেন।”

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (ইডরা) জানিয়েছে, দুর্বল কোম্পানিগুলিতে চলমান বিশেষ অডিট শেষ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ইডরার মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি বলেন, “জীবন বিমার মোট ১৫টি কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। আরও ১৫টি মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ অডিটের ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠানের ক্লেইম স্যাটেলমেন্ট নিশ্চিত করা হবে।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, গুটিকয়েক দুর্বল কোম্পানির কারণে পুরো খাতের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে নেতিবাচক খবরের চাপও খাতের সঠিক উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করছে। দেশের ৩৬টি জীবন বিমা কোম্পানির মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান।

ওএফ

Wordbridge School
Link copied!