দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নতুন পে-স্কেলের অপেক্ষায় থাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশা আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে জানা গেছে, নতুন পে কমিশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী নির্বাচিত সরকার। এই ঘোষণায় ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে।
গেল রোববার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নতুন পে কমিশন গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার।”
এই মন্তব্যের পর থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। তাদের দাবি, অর্থ উপদেষ্টা আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—২০২৬ সালের শুরুতেই নবম পে-স্কেল ঘোষণা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি হঠাৎ বদলে যাওয়ায় তারা নিজেদের ‘প্রতারণার শিকার’ মনে করছেন।
পে কমিশনের কাজ প্রায় শেষ, তবু অনিশ্চয়তা
সূত্র জানায়, গত ২৭ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পে কমিশন গঠন করে, যার চেয়ারম্যান করা হয় সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশে বলা হয়, নতুন স্কেলে মূল বেতন দ্বিগুণ হতে পারে।
নতুন কাঠামো অনুযায়ী প্রথম গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতন হতে পারে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, আর ২০তম গ্রেডের সর্বনিম্ন বেতন ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। বিদ্যমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে আনলে নিম্নতম বেতন আরও কিছুটা বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে।
তবে অর্থনৈতিক চাপ ও বাজেট ঘাটতির কারণে এখন সরকারের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। ফলে নবম পে-স্কেল ঘোষণার সম্ভাবনা আপাতত স্থগিত হয়ে পড়েছে।
ব্যয়ের চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। নতুন পে-স্কেল কার্যকর হলে এই ব্যয় আরও ৬৫ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
সরকারি ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভর্তুকি, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ। ফলে কৃচ্ছ্রসাধনের ঘোষণার পরও বাস্তবে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে—যা আগের মাসের তুলনায় বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়িত হলে বাজারে তার প্রভাব আরও বাড়বে, ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।
আন্দোলনের ইঙ্গিত
বিভিন্ন প্রশাসনিক ও দপ্তরভিত্তিক কর্মকর্তা সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও পে-স্কেল ঘোষণা না হওয়ায় তারা আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে ভাবছেন। একজন যুগ্ম সচিব (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “প্রতিবারই আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে কিছু হয় না। এবার যদি বিষয়টি নির্বাচনের পরের সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, আমরা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
সর্বশেষ অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণা করা হয় ২০১৫ সালে। এরপর থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও মহার্ঘ ভাতার মাধ্যমে সীমিত সুবিধা পেলেও বেতন কাঠামোয় বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।







































