• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়েজিদের ৬৪ জেলা ভ্রমণ


তরিকুল ইসলাম তুষার অক্টোবর ২৫, ২০২১, ০১:০০ পিএম
বায়েজিদের ৬৪ জেলা ভ্রমণ

ঢাকা : বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু দিকেই ভ্রমণের নেশাটা চেপে বসে তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নের সময় পরিচিত বন্ধুবান্ধবের সাথে বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছেন। তারপর মহামারি করোনার হানা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বন্দি সময় যখন বাড়িতে একনাগাড়ে কাটাচ্ছেন তখনই পুরা দেশ ঘুরে দেখার পরিকল্পনা আঁঁকেন তিনি। যার কথা বলছি তিনি বায়েজিদ সরকার। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

বাবার ব্যবসা আর আত্মীয়তার সম্পর্কের জন্য তার ছেলেবেলা কেটেছে নেত্রকোণায়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছেন সেখানে। মাধ্যমিক পড়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবং উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে।

পুরো বাংলাদেশ ঘুরার পেছনে নির্দিষ্টভাবে তার কোনো কারণ নেই। তবে দেশকে জানার, দেখার তীব্র ইচ্ছা থেকেই ঘুরে দেখাটা বলে তিনি মনে করেন।

২০২০ সালের জুনে ৬৪ জেলা ঘুরে দেখার যাত্রা শুরু করেন তিনি। তখন একনাগাড়ে দক্ষিণের ১৫টি জেলা ঘুরেছিলেন। এরপর উত্তরবঙ্গের ২০টি জেলা একসাথে, তারপর পুরো খুলনা বিভাগ ও ঢাকা বিভাগের কয়েকটি মিলে একসাথে ১৪টি জেলা, এরপর ৬টি জেলা-এভাবে কয়েকধাপে গত সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে ৬৪ জেলা ঘুরা শেষ করেন তিনি। সে হিসেবে তিনি ১৫ মাসে পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন।

ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষকে বার্তা দেওয়ার বিষয়ে বায়েজিদ সরকার বলেন, ‘এখন দেশের মানুষের নিজের দেশে ভ্রমণের প্রতি একটা অনীহা কাজ করে। অনেকেই বলে এ দেশে ঘুরার সুন্দর জায়গা নাই, দেখার মতো জায়গা নেই। আমি বুঝাতে চেয়েছি আমাদের দেশে ভ্রমণের মতো অনেক জায়গা রয়েছে।’

ভ্রমণে অনেক সুখকর ও ত্যাক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে তার। ত্যাক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ভ্রমণের ব্যয় পরিবারই বহন করেছে। হাতিয়ায় বিকাশে টাকা তোলার সময় ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে টাকা রকেট অ্যাকাউন্টে চলে যায়। লোকটার ব্যবহার প্রথমে ভালো থাকলেও পরে অনেক বাজে ব্যবহার করে।

সুখকর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বায়েজিদ বলেন, থানচি থেকে বাড়ি ফেরার পথে হিসাব করে দেখি টাকার সংকট। থানচিতে নেটওয়ার্ক নেই। তার ওপর ফোনে চার্জও নেই। তখন বাইকের ড্রাইভার থানচি গাইডকে টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে এই ভেবে যে, আলিকদম গিয়ে বাসা বা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টাকা আনার ব্যবস্থা করে ফেলব। আলিকদম এসে ঝামেলা হয়ে গেল। বাবাকে কল দিয়েছি, টাকা পাঠাবে কিন্তু বাবা ঢাকা থেকে বাসায় পৌঁছানোর মাঝ রাস্তায়। কোনোভাবেই যখন ম্যানেজ হচ্ছিল না, তখন একজন অপরিচিত ভদ্রলোক বাইকারের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। গাড়িতে ভদ্রলোকের সাথে অনেক কথা হয়, নম্বর দেয়। বাসায় এসে দুদিন রেস্ট নিয়ে পরে যেন টাকা পাঠাই সে কথাও তিনি বলেন। এমন হাজারো ঘটনা ভ্রমণ পথে ঘটেছে। যা কখনো ভোলার নয়।

ভ্রমণ নিয়ে উপলব্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই ভ্রমণের সময়গুলো আমার জীবণের সেরা সময়। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এখন আমি দেশের বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার চেষ্টা করব।

ভ্রমণ বিষয়ে বন্ধু-বান্ধবের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বায়েজিদ বলেন, কয়দিন পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার ভ্রমণের এতো এতো ছবি দেখে হয়তো বন্ধুবান্ধব, সিনিয়ার-জুনিয়ররা প্রথম দিকে বিরক্ত হয়েছে। কিন্তু এখন বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র-জুনিয়র সবাই ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছে। সবার কাছ থেকে অনেক ইতিবাচক প্রশংসা পাচ্ছি। অনেকে আমাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে, সাক্ষাতে বা অনলাইনে অনেকেই বলেছে আমার মতো সারা দেশ ঘুরতে চায়। অনেকে তথ্য নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে।

দেশের ট্যুরিস্ট স্পটের মধ্যে বারবার যেতে চায় বান্দরবান। এছাড়া নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, ভোলার মনপুরা, শেরপুর-জামালপুরের বর্ডার এরিয়া ইত্যাদি।

ভ্রমণ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বায়েজিদ বলেন, আমি পুরা পৃথিবী ঘুরে দেখতে চাই। দেশের বাহিরে ট্যুরের ক্ষেত্রে প্রিফারেবল হল দার্জিলিং, ভারত। সামনের মাসের ১৫ থেকে চালু হচ্ছে ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা। পাসপোর্ট করে রেখেছি। নভেম্বরের শেষের দিকে দার্জিলিং যাওয়ার প্ল্যান আছে। এ বয়সে এতটুকু পেরেছি, আশা করি হয়তো আমার স্বপ্ন পূরণ হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!