• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বিজয়ের ৫৪ বছরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন আর প্রত্যাশার মুখোমুখি বাংলাদেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫, ১২:২২ এএম
বিজয়ের ৫৪ বছরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন আর প্রত্যাশার মুখোমুখি বাংলাদেশ

ফাইল ছবি

পূর্ব দিগন্তে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একদিন কুয়াশা ভেদ করে বাংলার আকাশে উড্ডীন হয়েছিল লাল-সবুজ পতাকা। রক্তের দামে কেনা সেই স্বাধীনতার সকালে বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছিল আমার সোনার বাংলার সুর। আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে সেই দিনই জন্ম নিয়েছিল স্বজন হারানোর বেদনা, বুকভাঙা আর্তনাদ। বিজয় তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে একই সঙ্গে গৌরব আর শোকের নাম।

আজ মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবসের ৫৪ বছর পূর্তি। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নাম লিখে দেয়। নয় মাসের যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেন ৩০ লাখ মানুষ, সম্ভ্রম হারান অসংখ্য মা-বোন। সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই মুক্তির স্বীকৃতি পেয়েছিল জাতি।

২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার পর শুরু হয় প্রতিরোধ। কোনো প্রশিক্ষণ বা আধুনিক অস্ত্র ছাড়াই দেশের মানুষ যার কাছে যা ছিল, তা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। সব ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার মানুষ এক হয়ে লড়েছিলেন স্বাধীনতার জন্য। সেই অসম যুদ্ধের পরিণতিতেই আসে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়।

কিন্তু এই বিজয়ের পথ যে সব সময় মসৃণ ছিল, তা নয়। স্বাধীনতার পরের দশকগুলোতে বিভাজন, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা। সাম্প্রতিক সময়ে সেই প্রশ্ন আরও তীব্র হয়েছে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, এবারের বিজয় দিবস শুধু স্মৃতিচারণের নয়, আত্মসমালোচনারও দিন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর জাতির সামনে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হলেও তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গভীর শঙ্কা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের মতে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রপন্থী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। তার ভাষায়, জাতীয় ঐক্যকে জাতীয় শক্তিতে রূপ দিতে না পারলে শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ হবে না।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একাত্তরের বিজয় আত্মত্যাগের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সেই সংগ্রামকে পূর্ণতা দেওয়ার নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। বিভেদ ভুলে মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ার আহ্বান জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মনে করেন, ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানকে ১৯৭১-এর বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা ঐতিহাসিকভাবে ভুল। তার মতে, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থান—সবই একই ধারার লড়াই, মানুষের মর্যাদা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিজয় অর্জনের চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তা ধরে রাখা। একাত্তরের বিজয় ধরে রাখতে না পারার ইতিহাস আমাদের সামনে রয়েছে। চব্বিশের অভ্যুত্থানের অর্জনও যদি রক্ষা করা না যায়, তবে সেটি হবে নতুন ব্যর্থতা।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের ভাষায়, বিজয় কোনো স্থির অর্জন নয়, এটি নিরন্তর সংগ্রাম। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে বিজয় অসম্পূর্ণই থেকে যায়।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, একাত্তর রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি, আর চব্বিশ নতুন প্রত্যাশার দরজা খুলে দিয়েছে। একটিকে সামনে আনতে গিয়ে অন্যটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা আত্মঘাতী হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান মনে করেন, এবারের বিজয় দিবস নতুন প্রত্যাশার দ্বার উন্মোচন করেছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের সুযোগ এসেছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না শঙ্কার কথাও বলেন। তার মতে, নিরাপত্তাহীনতা ও রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কায় বিজয়ের আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। তবু গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়েই সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠতে হবে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, একাত্তরের পর যে হতাশা ও অস্থিরতা ছিল, তার ছায়া আবার দেখা যাচ্ছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে অর্জন হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বিজয় দিবসকে আত্মোপলব্ধির দিন হিসেবে দেখার কথা বলেন। তার মতে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকাই এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।

গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, অতীতের মতো চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বিজয় যেন রাজনৈতিক বাস্তবতায় হারিয়ে না যায়, সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

৫৪ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বিজয় দিবস তাই শুধু উৎসবের নয়, প্রশ্নেরও। একাত্তরের রক্ত আর চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে আজকের বাস্তবতা বলছে, বিজয় ধরে রাখার লড়াই এখনো শেষ হয়নি। এই লড়াইয়ে সফল হওয়াই হবে বিজয় দিবসের প্রকৃত সম্মান।

এসএইচ

Wordbridge School
Link copied!