• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বাঁচার লড়াইয়ে ভারতের যৌনকর্মীর মেয়ে সন্তানরা (ভিডিও)


ফিচার ডেস্ক আগস্ট ২৪, ২০১৭, ০১:১২ পিএম
বাঁচার লড়াইয়ে ভারতের যৌনকর্মীর মেয়ে সন্তানরা  (ভিডিও)

ফাইল ছবি

ঢাকা: ভারতের ব্যস্ত শহর মুম্বাই। দেশটির ২৯ প্রদেশের সব জায়গা থেকেই মানুষ এখানে আসে কর্মের খোঁজে, কেউ বা ঘুরতে। তাছাড়া দেশটির বিনোদন জগৎ বলিউডপাড়াও এখানেই, তাইতো কোটি কোটি মানুষের যাওয়া-আসা এই শহরে। শহরের একটি বিখ্যাত জায়গার নাম ‘কামাতিপুরা’। এটি এশিয়ার প্রথম যৌনপল্লী, শুধু তাই নয় এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ যৌনপল্লী হিসেবেও নাম ডাক আছে এর। এখানে প্রায় ১৬০০ যৌনকর্মী রয়েছেন। তাদেরই একজনের মেয়ে ২১ বছর বয়সী সানজায়া। সানজায়ার মতো এই এলাকায় প্রায় দুই হাজার তরুণী রয়েছে যাদের জন্মই এখানে, আবার কারো জন্ম অন্য কোথাও হলেও মায়ের সঙ্গে এখানে এসে ঠাঁই হয়েছে। 

স্ট্যাজ প্রোগ্রামে সানজায়া

সানজায়া যৌনপল্লীতে তার বসবাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা যৌনকর্মীর মেয়ে। সেখানে থাকার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ- ছেলেদের কুপ্রস্তাব, যৌননিগ্রহ ছাড়াও মানুষের কুকথা শুনতে হতো অনেক।’

সানজায়ার মত ১৫ জন যৌনকর্মীর মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ইডেনবার্গ ফ্রিঞ্জ ফেসটিবলে প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণের জন্য নিয়ে এসেছে ভারতের রেড লাইট এক্সপ্রেস নামের যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা।

বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে রানি

ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে যুক্তরাজ্যের ইডেনবার্গে দিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন সানজায়া। সানজায়া বলেছেন, ‘যখন ছোট ছিলাম তখন মনে হতো বাইরের লোকেরা যাই বলুক না কেন, যত খারাপই মনে করা হোক, আমার জন্য পৃথিবীর মধ্যে এটাই নিরাপদ জায়গা। কারণ, এখানে আমার মা থাকেন।’

‘তবে যখন আমি স্কুলে যেতে শুরু করলাম, আমার বন্ধু-বান্ধবীরা আমার সঙ্গে মিশত না। যৌনকর্মীর মেয়ে বলে তিরস্কার করতো, তখন বুঝলাম, সমাজে এই পেশাকে মানুষ কীভাবে দেখে।’

‘এভাবেই কিছু দিন যায়, এ সময় আমি অসংখ্যবার মহল্লায় ছেলেদের যৌননিগ্রহের শিকার হয়েছি। যখন আমার বয়স ১০ বছর তখন আমি ধর্ষিত হয়েছি।’ 

‘সেখানেও যারা খদ্দের হিসেবে আসতো তারা বেশি পছন্দ করে সুন্দরী ও ফর্সা চেহারার মেয়েদের, আর আমি তো দেখতে কালো তাই বৈষম্যের শিকার হতে হতো।’

বিবিসির সাক্ষাৎকারে সানজায়া

‘যে স্কুলে পড়তাম সেখানেও চেহারার কারণে বৈষম্যের শিকার হয়েছি। সবাই এক সঙ্গে থাকলেও আমি একাই থাকতাম কারণ, আমি দেখতে খারাপ।’ 

‘এক সময় ক্রান্তির (পিছিয়ে পড়া মেয়েদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন) একজনের মাধ্যমে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে আসি।’

সানাজায়ার মতই ইডেনবার্গের প্রতিযোগীতায় এসেছে ১৬ বছর বয়সী রানি। যৌনপল্লীতে বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়েছে। তার ভাষ্য- “আমার বয়স যখন ১১ বছর, বাবা মারা গেলেন। কয়েকদিন পরই মা একজনকে ঘরে নিয়ে এসে বললেন, ‘এ তোমার বাবা।’ তারপর থেকেই কারণে, আকারণে সে মা ও আমাকে মারতো। দুই বছর পর আমি ‘ক্রান্তি’তে আসি, মা সেখানেই থেকে যায়।”

যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে যাওয়ার আগে যৌনপল্লীর কন্যারা

‘ক্রান্তি’র এসব মেয়েদের রেড লাইট এক্সপ্রেস ইডেনবার্গ ফ্রিঞ্জ ফেসটিবলে নিয়ে গেছে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা এই বিশ্ব আসরে তুলে ধরতে। 

রানি জানিয়েছে, এখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি। সফল হলে আমার মা ও সৎ বাবাকে ওখান থেকে নিয়ে আসবো। এবং তাদের জানাবো তারা যে আচরণ করেছে তা ঠিক নয়।

রিহার্সেলে তারা

সানজায়া জানান, ‘বিশ্বের সব মানুষই তো চেষ্টা করেন সফল হতে, কেউ হতে পারে আবার কেউ হয় না। তবে আমার প্রতি যে নির্যাতন হয়েছে, তাতো আর ফিরে আনা সম্ভব নয়। আর কেউ যেন এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হন, সেই চেষ্টাই করবো।’

রানি তার যৌনপল্লীর অভিজ্ঞতাকে বাঁচার শক্তি হিসেবে দেখছে। তার ভাষ্য- ‘আমার অতীতই আমার শক্তি। কারণ, আমি যদি সেখানে না জন্ম নিতাম তাহলে হয়তো, আজ এখানে থাকতাম না। ভারতের অনেক মেয়েরাই তো অনেক কষ্টে আছে।’

ভিডিও:

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!