• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
কুয়েতের আদালতে সাজা

এমপি পদ হারাচ্ছেন পাপুল!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৯:৪৫ পিএম
এমপি পদ হারাচ্ছেন পাপুল!

ফাইল ছবি

ঢাকা: মানবপাচার, অবৈধ টাকা পাচার এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে আটক বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলের ৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন কুয়েতের আদালত।একইসঙ্গে তাকে ৫৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) এ রায় ঘোষণা করা হয়। 

কারাদণ্ড হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের স্বতন্ত্র এমপি পাপুল তার সংসদ সদস্য পদ হারাচ্ছেন!

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে—কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি—‘(ক) কোনো উপযুক্ত আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করেন। (খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় হতে অব্যাহতি না পেয়ে থাকেন। (গ) তিনি যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন। (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।’

এখন মুশকিল হলো কুয়েতের আইনে সাজাপ্রাপ্ত হলে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যের সদস্য পদ যাবে কী না- সেটি তর্কের বিষয়। আবার যদি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তাকে যদি শাস্তি দেওয়া হয় আর সেই শাস্তি যদি বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির আলোকে দুই বছরের বেশি পরিমাণ সাজা হয়, তাহলে সেই যুক্তিতে পাপুল সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। কিন্তু বিদেশে সাজাপ্রাপ্ত হলে কারো সংসদ সদস্য পদ যাবে কী না, সেটি বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ নেই।

গত বছরের নভেম্বরে সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ সংসদ সদস্য পাপুলের বিষয়টি নিয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি ফৌজদারি মামলায় বিদেশের মাটিতে গ্রেফতার পাপুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তখন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে ‘সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা’ সম্পর্কে বলা আছে। সেখানে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পাপুল কুয়েতের নাগরিক হলে তার এমপি পদ বাতিল হবে।

গত বছরের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাপুল কিন্তু স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। সে কিন্তু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নমিনেশন চেয়েছিল আমি দেইনি। সে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। নির্বাচন ওই সিট জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির নোমান নমিনেশন পেয়েছিল সে নির্বাচন করেনি ওই লোক জিতে আসে।

অন্যদিকে পাপুলের সংসদ সদস্য (এমপি) পদ বাতিলের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্থায়ী বাসিন্দা আবুল ফয়েজ ভূইয়া।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় নির্বাচন কমিশনে এ চিঠি দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্থায়ী বাসিন্দা আবুল ফয়েজ ভূইয়া।

২০২০ সালের ১৪ জুলাই স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আবুল ফয়েজ বলেন, গত ৬ মার্চ ২০২০ রোজ শুক্রবার পত্রিকায় ‘এমপি পাপুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নানা প্রশ্ন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সেখানে বলা হয়, শহিদ ইসলাম পাপুল নির্বাচনী হলফনামায় স্নাতকোত্তর পাশ উল্লেখ করেন, কিন্তু সার্টিফিকেট প্রদান করেন স্নাতক ডিগ্রির।

চিঠিতে আবুল ফয়েজ উল্লেখ করেন, শহিদ ইসলাম পাপুল কখনো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেননি, সেখানে স্নাতক ডিগ্রির যে সার্টিফিকেট জমা দেয়া হয়েছে তা ভুয়া এবং বানানো। নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রদান করে তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতাই হারিয়েছেন। 

এর আগে অর্থ ও মানবপাচার এবং ভিসা বাণিজ্যের অভিযোগে পাপুলকে বেসরকারি এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের পরিচালক পদে থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ও এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান পদ থেকেও বাদ পড়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৬ জুন রাতে পাপুলকে তার কুয়েতের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

এমপি পাপুলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মারাফিয়া কুয়েতিয়াকে এরই মধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করেছে কুয়েত সরকার। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সরকারের কয়েকটি চুক্তি ও কাজের আদেশও বাতিল করা হয়েছে।

কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল সাধারণ পাসপোর্ট নিয়ে কুয়েতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশেও পাপুল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!