• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

অবশেষে জীবিত হচ্ছেন ১৬৪১ ভোটার


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২০, ২০২১, ০২:০২ পিএম
অবশেষে জীবিত হচ্ছেন ১৬৪১ ভোটার

ফাইল ছবি

ঢাকা : বিগত জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে তারা ভোট দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটাবেজে এখন তাদের মৃত দেখা যাচ্ছে। ফলে এমন অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে কোনো কাজ করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে এসব নাগরিক ইসির শরণাপন্ন হচ্ছেন। জীবিত ব্যক্তি হঠাৎ মৃত হয়ে যাওয়া এমন অসংখ্য ব্যক্তি পুনরায় ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ইসিতে আবেদন করেছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, তথ্য সংগ্রহে গাফিলতি বা অর্থ লোভে তথ্যসংগ্রহকারীরা অনেকেই প্রকৃত ভোটারকে মৃত বানিয়েছেন। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই এক হাজার ৬৪১ জনকে তালিকায় মৃত থেকে জীবিত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ইসির ডাটাবেজে এ ধরনের আরো অনেকের তালিকা যুক্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

ইসির দেওয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫ জন, নারী ভোটার ৫ কোটি ৫১ লাখ ২২ হাজার ২২৩ জন ও ৪৪১ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তালিকায় জীবিত ভোটারকে মৃত হিসেবে দেখানোয় অসংখ্য ভুক্তভোগী স্থানীয় ইসি কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন সচিব, এনআইডির মহাপরিচালক ও পরিচালক (অপারেশনস) বরাবর আবেদন করেছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার হালনাগাদ করার সময় ইসির ডাটাবেজে এ ধরনের কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। আর তালিকায় জীবিত থেকে মৃত হয়ে যাওয়ায় এ ধরনের অনেকেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।

সূত্র জানায়, এসব নাগরিকের নাম রোলব্যাক করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মৃত ভোটার হিসাবে এদের নাম কর্তন করা হয়েছিল। শেরপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়- মো. আমির হোসেন (এনআইডি নং-৮৯১৩৭৫০৮৮৯২৮১) গ্রাম-বাতিয়াগাঁও, পোস্ট-হাতীবান্দা, উপজেলা-ঝিনাইগাতী, জেলা-শেরপুর-এর নাম মৃত্যুজনিত কারণে কর্তন হওয়ায় পুনরায় অন্তর্ভুক্তির জন্য তার দাখিলকৃত আবেদন উপজেলা নির্বাচন অফিসার, ঝিনাইগাতী, শেরপুর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।  বগুড়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়েছে, বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার জানান, মো. শাহাদৎ হোসেন (জাতীয় পরিচয়পত্র নং-১৯৬৭১০১৯৪৭৯১৭৪২৫৫) শিবগঞ্জ উপজেলাধীন রায়নগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের টেপাগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। বিদ্যমান ভোটার তালিকায় তার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভোটার তালিকার ডাটাবেজ যাচাই করে তার স্ট্যাটাস মৃত প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এই ব্যক্তি জীবিত আছেন। ওই ব্যক্তিকে পুনরায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
 
চট্টগ্রামের দক্ষিণ মোগলটুলীর মোহাম্মদ সাদেক হোসাইন (এনআইডি নং-১৯৮৪৩৩২৩০০১১৯০৭৪৫/১৫০৯৪০০০১০৮২), ভোটার তালিকা থেকে অজ্ঞাত কারণে তার নাম কর্তন করা হয়েছে মর্মে ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসার ও রেজিস্ট্রেশন অফিসার বরাবর আবেদন দাখিল করেছেন। ওই ব্যক্তি জনপ্রতিনিধির দেওয়া সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদসহ থানা নির্বাচন অফিস, ডবলমুরিং, চট্টগ্রামে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে জবানবন্দি দেন। সংশ্লিষ্ট অফিসার তার নাম পুনরায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন।

ইসি সূত্র জানায়, অনেক সময় যারা মৃত ভোটার কর্তনের দায়িত্বে থাকেন তাদের ভুলে জীবিত ভোটাররা মৃতদের তালিকায় চলে যান। অনেক সময় এনআইডি নম্বরের একটি সংখ্যা এদিক সেদিক বা একই নামের একজন মারা গেলে ভুল করে জীবিত আরেকজনের নাম কর্তন তালিকায় চলে যায়। মৃত ভোটার কর্তনের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা বেশিরভাগ সময় এমন ব্যাখ্যা দেন।

এছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের জন্য ৩০ টাকা এবং একটি মৃত ভোটার কর্তনের জন্য ২০ টাকা করে সম্মানী পান তথ্য সংগ্রহকারীরা। তবে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রমাণাদিসহ তথ্য সংগ্রহ করেন তথ্য সংগ্রহকারীরা। পক্ষান্তরে মানুষের মুখের তথ্যে মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেন তথ্য সংগ্রহকারীরা। এতে করে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিপুলসংখ্যক জীবিত ভোটারকে মৃত বানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, ভোটার মারা গেলে তার ছেলে-মেয়ে প্রত্যয়নপত্র দেবেন। ভোটার তালিকা থেকে কারো নাম বাদ দেওয়ার জন্য মৃত্যু সনদের সাপোর্টিং ডকুমেন্টসহ নির্ধারিত ফরমে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর থাকতে হয়। ভোটারের নাম কর্তনের তালিকায় চলে যাওয়ার বিষয়ে ভোটারকে দায়ী করা হয় না। এই কাজের জন্য দায়ী করা হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। কারো বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জীবিত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে কমিশন।

সম্প্রতি সকল আঞ্চলিক, সিনিয়র জেলা/জেলা ও উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারের কাছে পাঠানো জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, কোনো কোনো উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস থেকে জানানো হচ্ছে যে, ভোটার জীবিত কিন্তু ডাটাবেইজে মৃত দেখাচ্ছে। এতে করে ভোটার বা ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কোনো কাজ করতে পারছেন না।

এক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে ওই চিঠিতে জীবিত কিন্তু ডাটাবেজে মৃত স্ট্যাটাসে রয়েছে এমন ভোটারদের তথ্য উপজেলা অফিস চিঠি দিয়ে জেলা নির্বাচন অফিসকে জানাবে এবং জেলা অফিস জানাবে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসকে। আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস তথ্যগুলো সমন্বয় করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে পাঠাবে। আইসিটি বিভাগ এমন আবেদন পাওয়ার সংগে সংগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া এই ধরনের সকল আবেদন নিষ্পন্ন করার জন্য তখন ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

জীবিত ভোটারের নাম মৃতদের তালিকায় চলে যাওয়ায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ইসির উপ-সচিব মো. আব্দুল হালিম খান জানান, যার দোষে জীবিত ভোটার ‘মারা’ হচ্ছে বা যদি দেখা যায়, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জীবিত ভোটারকে মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছেন তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!