• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট উড়ছে কাল

আমেরিকার সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ


নিজস্ব প্রতিনিধি জুলাই ২৬, ২০২২, ০৯:২০ পিএম
আমেরিকার সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ

ফাইল ছবি

ঢাকা : রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স টরন্টোর উদ্দেশে অবশেষে পাখা মেলছে। বুধবার (২৭ জুলাই) ভোরে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাওয়া এই বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মাধ্যমে উত্তর আমেরিকার সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বিমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বুধবার ভোর সাড়ে ৩টায় বিমানের ফ্লাইট বিজি ৩০৫ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কানাডার টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে।

প্রাথমিকভাবে এই রুটে সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিরাপত্তা বিবেচনায় আপাতত রাশিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারছে না বিমান। এজন্য ফ্লাইটটি রি-ফুয়েলিংয়ের জন্য তুরস্কের ইস্তানবুলে এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি করবে। তবে এ সময় যাত্রীরা কেউই উড়োজাহাজ থেকে নামতে পারবেন না। তুরস্ক থেকে কোনো যাত্রীও এই ফ্লাইটে নেয়া হবে না।

বিজি-৩০৫ ফ্লাইট প্রতি বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৩টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টরন্টোর উদ্দেশে যাত্রা করবে। এটি রিফুয়েলিংয়ের জন্য ইস্তানবুলে অবতরণ করবে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায়। এক ঘণ্টা বিরতি শেষে ইস্তান্বুল থেকে রওনা দিয়ে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইটটি টরন্টোতে পৌঁছবে।

একইভাবে প্রতি রোববার ভোর ৩টায় বিজি-৩০৫ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে যাত্রা করে রিফুয়েলিংয়ের জন্য স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় ইস্তানবুলে নামবে। এক ঘণ্টা বিরতি শেষে ইস্তানবুল থেকে রওনা দিয়ে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে এটি টরন্টোতে পৌঁছবে।

ফিরতি ফ্লাইট বিজি-৩০৬ প্রতি বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টরন্টো থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। আসার সময় ফ্লাইটটি কোথাও যাত্রাবিরতি না দিয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। একইভাবে প্রতি রোববার টরন্টো থেকে স্থানীয় সময় রাত ৯টায় উড়াল দিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছবে সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১টায়।

রুটটিতে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের উড়োজাহাজ।

এর আগে ২৬ জুন টরন্টো রুটের টিকিট বিক্রি শুরু করে বিমান। সে সময় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণে একমুখী যাত্রার জন্য ভাড়া ঠিক করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৯০ হাজার ৫১০ টাকা। আর রিটার্ন টিকিটের ভাড়া ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭০ টাকা।

প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসের একমুখী ভাড়া ১ লাখ ২৭ হাজার ৩০০ টাকা আর রিটার্ন ভাড়া ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫৫ টাকা।

এছাড়া বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণে একমুখী ভাড়া ১ লাখ ৬৪ হাজার ১০০ টাকা এবং রিটার্ন টিকিটের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৩০২ টাকা।

টরন্টো থেকে যারা ঢাকায় আসবেন তাদের জন্য ইকোনমি ক্লাসে একমুখী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯০ কানাডিয়ান ডলার আর রিটার্ন টিকিটের দাম ১ হাজার ২৩৩ কানাডিয়ান ডলার।

প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসের ক্ষেত্রে একমুখী ভাড়া ১ হাজার ২৩০ কানাডিয়ান ডলার এবং রিটার্ন টিকিটের দাম ২ হাজার ১৭৮ কানাডিয়ান ডলার। আর বিজনেস ক্লাসের ক্ষেত্রে একমুখী ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬০ কানাডিয়ান ডলার এবং রিটার্ন টিকিটের দাম ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৭৮ কানাডিয়ান ডলার।

গত ২৬ মার্চ টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০জন যাত্রী নিয়ে উড়াল দেয় বিমানের প্রুভেন (পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক) ফ্লাইট। ঢাকা থেকে উড়াল দিয়ে টানা সাড়ে ১৮ ঘণ্টা আকাশে থেকে কানাডায় পৌঁছায় বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।

দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে একটানা এতক্ষণ আকাশে ওড়ার নজির আর নেই। বিশ্বেও এমন নজির খুব কম। যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং বলছে, যাত্রী নিয়ে ৭৮৭ উড়োজাহাজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একটানা ওড়ার রেকর্ড এটি।

ঢাকা থেকে আকাশপথে টরন্টোর যে দূরত্ব, এটিকে এভিয়েশনের পরিভাষায় বলা হয় ‘আল্ট্রা লং হওল’। বিশ্বে এ ধরনের গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চলার নজির খুব বেশি নেই।

এয়ারলাইনসগুলো সাধারণত তৃতীয় কোনো গন্তব্যে স্টপওভার করেই ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর একটি বড় কারণ, এ ধরনের দূরত্বে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে উড়োজাহাজে পর্যাপ্ত জ্বালানি বহন করতে হয়। বাড়তি জ্বালানি বহন করার কারণে উড়োজাহাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কমিয়ে রাখা হয় যাত্রীসংখ্যা। এভিয়েশনের পরিভাষায় এটিকে বলে লোড পেনাল্টি।

ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টো যেতে সময় লাগে প্রায় ১৬ ঘণ্টা। এই রুটে বিমান ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এই উড়োজাহাজগুলোর জ্বালানি খরচ অন্যগুলোর চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কম। আর এ কারণে এগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে একটানা ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় আকাশে উড়তে পারে।

সাড়ে ১৮ ঘণ্টা উড়াল দিয়ে বিমানের যে উড়োজাহাজটি টরন্টোয় গিয়েছিল, এই পথ পাড়ি দেয়ার জন্য সেটিতে বহন করা যেত সর্বোচ্চ ১৪০ যাত্রী। অথচ বিমানের ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ২৯৮ জন।

১৬ ঘণ্টায় টরন্টো পৌঁছানোর রুট ব্যবহার করে এই উড়োজাহাজ দিয়ে সরাসরি ফ্লাইট করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৩০ যাত্রী বহন করা যেত।

ঢাকা থেকে জাপানের নারিতা হয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং কানাডার টরন্টো হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যুক্ত হতে বেশ কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে বিমান। কিন্তু করোনার কারণে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি।

এ রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচল পুরোদমে শুরু হলে এয়ারলাইনসটি তার বহরে থাকা দূরপাল্লার উড়োজাহাজগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিমানের বহরে দীর্ঘ দূরত্বে উড়তে সক্ষম অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ থাকলেও রুট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সেগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং-৭৮৭ ও চারটি বোয়িং-৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজ। এর প্রতিটি টানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম।

বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা কোনো এয়ারলাইনসেরই ঢাকা থেকে টরন্টোয় সরাসরি ফ্লাইট নেই। বিমান আশা করছে, নারিতা ও টরন্টোয় ফ্লাইট শুরু করলে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক আন্তর্জাতিক যাত্রী তারা পাবে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!