• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেকোনো শর্তে সমঝোতায় মরিয়া হেফাজত


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৭, ২০২১, ০৩:০৪ পিএম
যেকোনো শর্তে সমঝোতায় মরিয়া হেফাজত

ঢাকা : একবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আরেকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। হেফাজত নেতাদের দিন কাটছে এখন দ্বারে দ্বারে। সমঝোতায় মরিয়া নেতারা যেকোনো শর্তেই রাজি। তারপরও কারো কাছ থেকেই আশ্বাসের সুর মিলছে না। যাদের কাছেই যাচ্ছেন সবাই সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাই বলছেন। সর্বশেষ গত ৪ মে হেফাজত নেতারা দ্বিতীয়বারের মতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে সেখান থেকেও তাদের প্রতি কোনো অনকুম্পা পাওয়ার তথ্য জানা যায়নি।

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার কেএম হাফিজ আক্তার বলেছেন, কারা কার সঙ্গে দেখা করছেন এটি আমাদের নিকট মুখ্য বিষয় নয়। তাণ্ডবের সঙ্গে হেফাজতের যারাই জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৪ মে রাতে ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি বাসভবনে সাক্ষাতে যান হেফাজতের চট্টগ্রামের তিনজন এবং ঢাকার তিনজন নেতা। তারা হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তার বন্ধসহ চারদফা তুলে ধরেন। বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, দেশজুড়ে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে আবারো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেছেন হেফাজতে ইসলামের এ ছয় নেতা। তবে এর মধ্যে হেফাজতের হেভিওয়েট নেতা মামুনুল হকের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তারা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট তুলে ধরা হেফাজতের দাবিগুলো-হেফাজতে ইসলামের গত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গ্রেপ্তার হওয়া আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া, আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের গ্রেপ্তার-হয়রানি আতঙ্ক থেকে মুক্তি দেওয়া, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নামে যে মামলাগুলো হয়েছে পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী সেগুলো প্রত্যাহার করা এবং দ্রুত কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে দাবি করে হেফাজত নেতারা জানান, হেফাজতের গত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গ্রেপ্তারকৃত আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলিমদের দেশব্যাপী গ্রেপ্তার অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে পবিত্র রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগি করতে না পেরে অজানা আতঙ্কে দিন পার করছেন আলেম-ওলামা ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক ও হয়রানি থেকে তাদের মুক্তি দেওয়ার আবেদন করা হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণগ্রেপ্তার চলছে। এতে করে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রমজান মাসে আলেম-ওলামা ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের হয়রানি বন্ধ করতে মন্ত্রীর কাছে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে।

হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, মামুনুলের বিষয়টি এখানে আনা হয়নি। এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা আছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়েছে। তার নারীঘটিত আলোচনা হেফাজতকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। তার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।

মন্ত্রীর বাসভবন থেকে বেরিয়ে নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, আমাদের দাবিগুলো মন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন, আশ্বাসও দিয়েছেন। প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী, মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি জসিমউদ্দিন প্রমুখ।

এদিকে এর আগেও হেফাজত নেতারা কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে তারা সংগঠনটির নেতাদের গ্রেপ্তার বন্ধের দাবি জানান। তবে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বরাবরই জানানো হয়েছে, সহিংসতায় যারা জড়িত ছিলেন তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতার জেরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডবের পর সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায়। দেশজুড়ে চলা গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে সমঝোতার প্রস্তাব দেয় হেফাজত নেতারা।

গত ২৬ এপ্রিল রাতে জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বধীন হেফাজতের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। ওই রাতে আবার ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করা হয়। আহ্বায়ক কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা করা হয় আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে, আর আমিরের দায়িত্বে রাখা হয় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার কেএম হাফিজ আক্তার বলেন, তাণ্ডবের সঙ্গে যুক্ত হেফাজতের প্রত্যেক নেতাকর্মীকেই আইনের আওতায় আনা হবে। যারা তাণ্ডবের সঙ্গে যুক্ত না তারা বাড়িঘরে ঠিকই আছেন। আর যারা যুক্ত তারা পলাতক রয়েছে। তবে পলাতকদের খুঁজে খুঁজে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিবি প্রধান বলেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী যে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছিল, ঠিক তখন থেকেই একটি কুচক্রী মহল দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। র্যাব এসব ব্যক্তি বা দলকে বিভিন্ন ভিডিওফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে। এসব অপরাধী শনাক্তে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন পুরোনো ভিডিও ‘লাইভ’ আকারে প্রচার করা হয়েছে। এভাবে পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে গুজব রটানোয় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে র্যাব হেফাজতের বেশকিছু নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!