ফাইল ছবি
ঢাকা: চার মাস চিকিৎসা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামীকাল মঙ্গলবার (৬ মে) দেশে ফিরছেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘চার মাস পর খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরছেন। স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগ কাজ করছে। তাকে অভ্যর্থনা জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’ তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে, যানজট সৃষ্টি না করে সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানাবেন।’
এ উপলক্ষে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর একাধিক সভা হয়েছে। শনিবার দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এবং গতকাল রবিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি সভা হয়েছে।
গতকাল নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, কোন সংগঠন কোথায় অবস্থান করবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি ও এর বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে কারা, কোথায় অবস্থান নেবেন, তারা কী করতে পারবেন, কী করতে পারবেন না, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি অবস্থান করবে বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান হোটেল পর্যন্ত। ছাত্রদল অবস্থান করবে লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত। যুবদল অবস্থান করবে খিলক্ষেত থেকে হোটেল র্যাডিসন পর্যন্ত।
তিনি আরও জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি অবস্থান করবে হোটেল র্যাডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম, সেখান থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক দল, বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত কৃষক দল, শ্রমিক দল অবস্থান করবে কাকলী মোড় থেকে বনানীর শেরাটন হোটেল পর্যন্ত। এ ছাড়া ওলামা দল, তাঁতী দল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল অবস্থান করবে শেরাটন হোটেল থেকে বনানী কাঁচাবাজার পর্যন্ত। মুক্তিযোদ্ধা দলসহ সব পেশাজীবী সংগঠন অবস্থান করবে বনানী কাঁচাবাজার থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত। মহিলা দল ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ রোড পর্যন্ত অবস্থান করবেন। আর বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা যার যার সুবিধামতো স্থানে অবস্থান করবেন।
রিজভী বলেন, ‘সব নেতাকর্মী দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তার এক পাশে দাঁড়াবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলে যাওয়া যাবে না। হেঁটে হেঁটেও যাওয়া যাবে না। এ ছাড়া বিমানবন্দর ও চেয়ারপারসনের বাসভবনে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।’
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার ঢাকায় ফেরা উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ভিড় হবে সকাল থেকেই। বিষয়টিকে সামনে রেখে ঢাকার ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গেও সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানবন্দর সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হবে। যে কারণে ট্রাফিক বিভাগ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বিএনপির পক্ষে।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া ছেলে তারেক রহমানের বাসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন। সেটিতেই তিনি লন্ডনে যান। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই আবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন তিনি।
প্রস্তুত মাহবুব ভবন : শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন পুত্রবধূ জোবাইদা রহমানও। যিনি ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছেড়েছিলেন একমাত্র মেয়ে জাইমাকে নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে। এক-এগারোর সরকার এবং পরে আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনার সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন জোবাইদাও।
তিনি উঠবেন মাহবুব ভবনে। সাবেক নৌবাহিনীপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসা ধানম-ির ৫ নম্বর সড়কে এই ‘মাহবুব ভবন’। এখানে এখন তার সহধর্মিণী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং বড় মেয়ে শাহীনা জামান ও তার পরিবার বসবাস করেন। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু কয়েক দিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার ছোট মেয়ে জোবাইদা রহমান ঢাকায় এসে বাবার বাসায় উঠবেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মন বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান আসবেন, তাই বাসার সাজসজ্জা, নিরাপত্তাব্যবস্থা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস, জেনারেটর প্রভৃতি কাজ চলছে। ইনশাআল্লাহ উনি (জোবাইদা রহমান) আসার আগেই সব কাজকর্ম শেষ হবে। ওনাকে রিসিভ করার জন্য বাসা প্রস্তুত।’
মরহুম মাহবুব আলী খানের দুই মেয়ের মধ্যে জোবাইদা রহমান ছোট। জন্ম সিলেটে। পড়ালেখা করেছেন ঢাকায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাবা-মায়ের আগ্রহে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিনি সেখান থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালে বিসিএস দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে। জোবাইদা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস-স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডন যাওয়ার পর শেখ হাসিনা সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। লন্ডন যাওয়ার পর জোবাইদা ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর-এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। জোবাইদা রহমানের বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এরপর হুসেইন রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি নৌবাহিনীর দায়িত্বের পাশাপাশি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জোবাইদা রহমানের চাচা।
ইতিমধ্যে গত ৩০ মে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে সশস্ত্র গানম্যান, পুলিশ প্রোটেকশন, বাসায় পুলিশ পাহারা, আর্চওয়ে বসানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন। রুম্মন জানান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তায় থাকা নিয়োজিত কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে এই বাসভবন দেখে করণীয় ঠিক করে গেছেন।
এসআই







































