ফাইল ছবি
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তবে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কে তৈরি হয়েছে জটিল কূটনৈতিক সংকট। ঢাকা প্রত্যর্পণ চাইছে, কিন্তু দিল্লি সে পথে হাঁটতে চাইছে না। ফলে রায়ের বাস্তবায়ন ঘিরে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
ভারত বলছে, ‘মানবিক বিবেচনায়’ শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন তাদের সামনে কঠিন হিসাব-পুরোনো মিত্রের জন্য কত দূর পর্যন্ত এগোবে, আর এর কূটনৈতিক মূল্য তারা কতটা বহন করতে প্রস্তুত।
দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, দিল্লির সামনে এখন চারটি পথ খোলা। প্রথমটি হলো শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা, যা ভারত মোটেও করতে চায় না। দ্বিতীয়টি বর্তমান অবস্থান বজায় রাখা, কিন্তু আগামী বছর নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে এই অবস্থান আরও অস্বস্তি বাড়াতে পারে। তৃতীয় পথ হলো—শেখ হাসিনাকে নীরব থাকতে চাপ দেওয়া। তবে তিনি এখনও আওয়ামী লীগের প্রধান হওয়ায় এ প্রস্তাবে রাজি হওয়ার সম্ভাবনা কম। আর ভারতও এমন চাপ প্রয়োগে আগ্রহী নয়।
সবশেষ বিকল্প হলো তাকে তৃতীয় দেশে পাঠানো। কিন্তু আইনি জটিলতা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় এমন ‘ঝুঁকিপূর্ণ অতিথি’ গ্রহণে খুব কম দেশই আগ্রহ দেখাবে।
কুগেলম্যান মনে করেন, ভারত সাধারণত মিত্রদের বিরুদ্ধে যায় না। শেখ হাসিনাও দিল্লির কাছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় মহলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবেই পরিচিত। তাই প্রত্যর্পণ এখনই আলোচনার বিষয় নয়।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। রেলপথ, ট্রানজিট, জ্বালানি সরবরাহ, শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে শুরু করে ৮–১০ বিলিয়ন ডলারের নমনীয় ঋণ-সব মিলিয়ে সম্পর্কটি অত্যন্ত পরস্পরনির্ভরশীল।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ভরতদ্বাজ মনে করেন, নদীর পানি, বিদ্যুৎ, বাণিজ্যসহ নানা খাতে দুই দেশ জটিল পারস্পরিক সম্পর্কে যুক্ত। ভারতের সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশের স্বাভাবিকভাবে চলাটা কঠিন বলেও তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের বিশ্লেষক বিয়ান সাই বলছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক কূটনৈতিক উদ্যোগে ভারতকেন্দ্রিক নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনার বিষয়টি সামলানোই ভারতের বড় চ্যালেঞ্জ নয়; আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষা এবং কৌশলগত স্বার্থ নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
লন্ডনের এসওএএস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অবিনাশ পলিওয়ালের ধারণা, দিল্লির এখন তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই। ঢাকার রাজনৈতিক পক্ষগুলো এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে ধৈর্য ধরে সংলাপ চালানোই হবে সমাধানের পথ। তার মতে, আগামী ১২ থেকে ১৮ মাস সম্পর্ক অস্থির থাকতে পারে। পরিস্থিতি শান্ত হবে কি না, তা নির্ভর করবে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতির ওপর।
কুগেলম্যানের মতে, সংকট চরমে গেলেও সম্পর্ক ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে এটি দীর্ঘ সময় নড়বড়ে অবস্থায় থাকতে পারে। তথ্য সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসএইচ







































