• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নবীজিকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা ঈমানের দাবি


মুফতি কাজী সিকান্দার নভেম্বর ২৩, ২০২০, ১২:৪৯ পিএম
নবীজিকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা ঈমানের দাবি

ঢাকা : ভালোবাসার শক্তি অপরিসীম। জোর করে বা চাপিয়ে দিয়ে যে কাজ আদায় করা যায় না, সে কাজ ভালোবাসার শক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই আদায় করা যায়। যাকে মানুষ ভালোবাসে তার জন্য প্রাণ বিসর্জন পর্যন্ত দিতে পারে। তাই ইসলাম ভালোবাসার শক্তিকে উজ্জীবিত করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন-‘বলে দাও, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জেহাদ করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে উঠে তোমাদের পিতা, সন্তান, ভাই, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দায় পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাড়িঘর, যা তোমরা পছন্দ করো, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত। আল্লাহ পাপাচারী সমপ্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেন না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত-২৪)। এখানে সবার চেয়ে এবং সবকিছু থেকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল এবং আল্লাহর রাস্তাকে বেশি প্রিয় করে নেওয়ার সবক দিচ্ছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা ছাড়া মুমিনও হওয়া যায় না।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্তুতি থেকে অধিক প্রিয় না হব। (বুখারি, হাদিস নং-১৩)। শুধু বাবা-মা-সন্তান থেকে নয়, নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে।

একদিন হজরত উমর (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! নিঃসন্দেহে আপনি আমার কাছে আমার প্রাণ ব্যতীত সবচেয়ে বেশি প্রিয়। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ওই সত্তার নামে শপথ করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ (তুমি পরিপূর্ণ ঈমানদার নও) যতক্ষণ না তোমার কাছে আমি তোমার প্রাণের চেয়ে বেশি প্রিয় হই। হজরত উমর (রা.) বললেন, আল্লাহর নামে শপথ! এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে উমর! এখন তোমার ঈমান পূণতা লাভ করল। (বুখারি শরিফ)। হাদিসের সারমর্ম হলো : অবশ্যই দুনিয়ার সব কিছু এমনকী প্রত্যেক মুসলিম তার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। আর আমরা যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসবো তখন আমাদের জন্য মহাপুরস্কার।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একসময় (যুল খোয়াইসিয়াহ

নামক) এক ব্যক্তি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেগে গিয়ে বললেন, কিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি নিয়েছ? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা ছাড়া আমি আর কিছুই প্রস্তুত করতে পারিনি। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি যাকে ভালোবাস তার সাথেই তুমি থাকবে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, মুসলমানরা এ কথা শুনে যে খুশি হয়েছে, ইসলাম গ্রহণের পর এরকম খুশি হতে আমি তাদেরকে আর কখনো দেখিনি। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)। অন্য হাদিসে উল্লেখ রয়েছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোক যারা আমার পরে দুনিয়ায় আসবে তারাও আমাকে অধিক ভালোবাসবে। তাদের অনেকে আশা করবে, হায় পরিবার-পরিজন এবং ধনসম্পদ বিসর্জন দিয়ে হলেও যদি তারা আমাকে দেখতে পারত।; (মুসলিম, মেশকাত)।

ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম একজন মুসলিমের আবেগ উচ্ছাস ও ভালোবাসা অবশ্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যই থাকবে। তবে এ ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম কী হবে এবং নবীজিকে কীভাবে ভালোবাসবে, তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলে দিয়েছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-একসময় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে বৎস! তোমার অন্তরে কারো সম্পর্কে হিংসা-বিদ্বেষবিহীন অবস্থায় যদি তুমি সকাল-সন্ধ্যা কাটাতে পার, তবে তুমি তা করো। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে বৎস! এটা আমার সুন্নাত। আর যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসল নিঃসন্দেহে সে আমাকে ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসল সে বেহেশতে আমার সাথেই থাকবে। (তিরমিযি, মিশকাত)। এখন আমদের কাছে স্পষ্ট হলো যে, প্রথমত, আমাদেরকে মুমিন হতে হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসলে আমরা তাঁর সাথে থাকতে পারব। তৃতীয়ত, এ ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম হলো আমাদের প্রতিটি কাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেখে যাওয়া সুন্নাত পালন করতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব সুন্নাহ যথাযথ অনুসরণই হলো নবীজির প্রতি ভালোবাসা।

লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলদেশ আশরাফাবাদ, ঢাকা

Wordbridge School
Link copied!