• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোগীকে সান্ত্বনা দেওয়া ইবাদত


ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ জানুয়ারি ২৪, ২০২১, ০১:২২ পিএম
রোগীকে সান্ত্বনা দেওয়া ইবাদত

ঢাকা : রোগীর দেখভাল করা, সেবা ও সান্ত্বনা দেওয়া ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে ইবাদত এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি মর্যাদাপূর্ণ সুন্নাত। কোনো কোনো ইসলামী আইনজ্ঞ এটাকে ওয়াজিবও বলেছেন। রোগীর সেবা প্রদানের মাধ্যমে সেবাকারীর ঈমান ও সমাজের সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। সামগ্রিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতার মাধ্যমে বড় ধরনের বিপর্যয় রোধ করা যায়। মহামারী করোনায় বিপর্যস্ত পুরো দুনিয়া। যেখানে কেউ কারো সেবা করা তো দূরের কথা, কারো করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে শুনলেই তাকে একঘরে বা বয়কট করছে। সে পরিস্থিতিতে অসুস্থ রোগীর সেবা করবে কীভাবে? এ পরিস্থিতিতেও সেবা করা সম্ভব। দূর থেকে তাকে সহযোগিতা করা। তার মনোবল চাঙ্গা রাখতে খোঁজ-খবর নেওয়া। সুস্থ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা। তার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ বা পথ্য এনে দেওয়াসহ তার সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে বেশি বেশি দোয়া করা। আর তাতেই ন্যূনতম অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার হক আদায় হবে।

রোগীর সেবা বা খোঁজ-খবর নেওয়া শুধু সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়; বরং এটি এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের দ্বীনি অধিকার। কোনো অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা আল্লাহ থেকে বিরত থাকার শামিল। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে সেবা করনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! আপনি তো সব সৃষ্টির প্রতিপালক, আমি কীভাবে আপনার সেবা করতাম? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, তুমি তার সেবা করনি, তুমি যদি তার সেবা করতে তাহলে সেখানে আমাকে পেতে!’ (সহিহ মুসলিম) অন্যত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ৬টি হক রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- কোনো মুসলমান যখন অসুস্থ হয়ে যাবে তখন তার সেবা করা।’ (মুসলিম)

অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেওয়া বা তাকে দেখতে যাওয়া বা তার কোনো সহযোগিতা করা অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা তার অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য যায় তখন একজন ফেরেশতা উচ্চস্বরে চিৎকারকারী আকাশ থেকে চিৎকার করে বলেন-‘তুমি ভালো থাক, তোমার চলাফেরা ভালো ছিল, তুমি বেহেশতে ঠিকানা করে নিয়েছ।’ (তিরমিযি) সুতরাং মহামারী করোনাসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত অন্য মুসলিম ভাইয়ের সেবায় নিজেদের সম্পৃক্ততা হবে কল্যাণের। কেননা, সাক্ষাৎ করা বা ধরাছোঁয়া ছাড়াও অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা সম্ভব। আর তাতে সে হতে পারে জান্নাতের অধিকারী। এছাড়া মুমিন মুসলমান অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার মাধ্যমে এ হক আদায় করতে পারে।

হাদিসে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একাধিক দোয়া রয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন তখন তার শিয়রে বসতেন তারপর সাতবার, উচ্চারণ করতেন-‘আসআলুল্লাহাল আজিমা রাব্বাল আরশিল আজিমি আই-ইয়াশফিয়াকা।’ অর্থ : ‘আমি মহান আরশের মালিক আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।’ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তার মৃত্যু নির্ধারিত হয়ে না থাকে তবে সে অবশ্যই সুস্থ হয়ে যাবে।’ (মিশকাত) রোগীর কাছে গিয়ে তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা। তার জন্য সুস্থতার দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে পৌঁছতেন তখন জিজ্ঞাসা করতেন, তোমার অবস্থা কেমন? অতঃপর সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন ‘লা বাসা তুহুরা ইনশাআল্লাহ’। অর্থ : ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই, আল্লাহর ইচ্ছায় সুস্থ হয়ে যাবে।’ রোগীর কষ্ট লাঘবে দোয়া, উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আজবিবিল বাসা রাব্বান্নাসি ইশফিহি ওয়া আংতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা লা ইয়ুগাদিরু সুক্বমা।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এ কষ্টকে দূর করে দাও। হে মানুষের প্রভু! তাকে সুস্থতা দান কর। তুমিই সুস্থতা দানকারী। তুমি ছাড়া আর কারো কাছে সুস্থতার আশা নেই। এমন সুস্থতা দান কর যে, রোগের নাম নিশানাও না থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মহামারী করোনার এ প্রাদুর্ভাবের সময় যারা অসুস্থ তাদের মনোবল বাড়াতে বেশি বেশি খোঁজখবর নেওয়াসহ মানসিকভাবে তাদের আশ্বস্ত করা সবার জন্য জরুরি। আর তাদের জন্য হাদিসে শেখানো দোয়াগুলোর মাধ্যমে তাদের সুস্থতা কামনা করা। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর সেবা ও তাদের জন্য দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

 

Wordbridge School
Link copied!