• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

অহমিকার পরিণাম খুবই ভয়ানক


রাশেদ নাইব মার্চ ২১, ২০২১, ০২:৫৫ পিএম
অহমিকার পরিণাম খুবই ভয়ানক

ঢাকা : নিজেকে অসাধারণ ভাবা কিংবা অহংকার-অহমিকা করে নিজেকেই সর্বদা প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? একজন অহংকারীকে আল্লাহতায়ালা অবশ্যই শাস্তি দেবেন। আল্লাহতায়ালা তার শাস্তি দুনিয়াতেও দেবেন এবং আখেরাতেও দেবেন।

একজন অহংকারীকে তার চাহিদার বিপরীত দান করার মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়। সে মানুষের নিকট চায় সম্মান; কিন্তু মানুষ তাকে বিপরীতটি উপহার দেয় অর্থাৎ ঘৃণা করে। অহংকারীকে লোকেরা নিকৃষ্ট মানুষ মনে করে এবং ঘৃণা করে। এটি হলো একজন অহংকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ শাস্তি। দুনিয়ার চিরন্তন নিয়মই হলো, অহংকারীকে কেউ ভালো চোখে দেখে না, সবাই তাকে ঘৃণা করে। আর যে ব্যক্তি অহংকার করে, নিজেকে বড় মনে করে আল্লাহতায়ালা তাকে ছোট করে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে, আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে। আর যে ব্যক্তি হকের বিপক্ষে বড়াই করে, আল্লাহতায়ালা তাকে অসম্মান ও অপমান করে। চিন্তা-ফিকির, উপদেশ গ্রহণ করা ও আল্লাহর আয়াতসমূহ হতে নছিহত অর্জন করা হতে বঞ্চিত হয় অহংকারী ব্যক্তি। ইরশাদ হয়েছে”যারা অন্যায়ভাবে জমিনে অহংকার করে আমার আয়াতসমূহ থেকে তাদের আমি অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা সকল আয়াত দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সঠিক পথ দেখলেও তাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে না। আর তারা ভ্রান্ত পথ দেখলে তা পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে, তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং সে সম্পর্কে তারা ছিল গাফেল। (সুরা আল-আ’রাফ, আয়াত : ১৪৬)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘একজন মানুষ সর্বদা অহংকার করতে থাকে। অতঃপর একটি সময় আসে তখন তার নাম জাব্বারিনদের খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়, তখন তাকে এমন আজাব আক্রান্ত বা গ্রাস করে, যা অহংকারীদের গ্রাস করেছিল।’ (তিরমিজি, হাদিস নং-২০০০)। সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, একদিন এক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে বাম হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করলে নবীজি তাকে বললেন, তুমি ডান হাত দিয়ে খাও। উত্তরে লোকটি বলল, আমি পারছি না। তার কথার প্রেক্ষাপটে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলল, তুমি পারবে না? মূলত নবীজির কথার অনুকরণ করা হতে তাকে তার অহংকারই বিরত রাখে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি আর কখনোই তার হাতকে তার মুখ পর্যন্ত ওঠাতে পারেনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২০২১)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের পূর্বের যুগের এক লোক একটি কাপড় ও লুঙ্গি পরিধান করে ও তার চুলগুলো তার কাঁধের ওপর ঝুলিয়ে অহংকার করে হাঁটছিল। কাপড়দ্বয় লোকটিকে অহংকারের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা লোকটিকে জমিনের অভ্যন্তরে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত পুঁততে থাকবে। আর সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এদিক-সেদিক নড়াচড়া করতে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫৭৮৯)।

অহংকারী ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের সাথে ধ্বংস হবে। ফুজালা ইবন উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তিন ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে তোমরা আমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। এক. যে ব্যক্তি আল্লাহ বড়ত্ব নিয়ে আল্লাহর সাথে ঝগড়া করে। কারণ বড়ত্ব হলো আল্লাহর চাদর আর তার পরিধেয় হলো ইজ্জত। দুই. যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে। তিন. যে ব্যক্তি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়।’ (ইবন হাব্বান, হাদিস নং-৪৫৫৯)।

অহংকারীরা কিয়ামত দিবসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ও অবস্থানের দিক দিয়ে অনেক দূরে হবে। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে তোমাদের মধ্যে যে আমার খুব প্রিয় ও মজলিশের দিক দিয়ে আমার একেবারে নিকটে অবস্থান করবে, সে হলো তোমাদের মধ্যে যারা আখলাক ও চরিত্রে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে যে সর্বাধিক ঘৃণিত এবং মজলিশের দিক দিয়ে আমার অনেক দূরে অবস্থান করবে সে হলো, যে অতিরিক্ত ও দীর্ঘ কথা বলে এবং মানুষের নিকট মুখ ভরে কথা বলে। সাহাবারা বললেন, যারা অতিরিক্ত ও দীর্ঘ কথা বলে, তাদের আমরা জানলাম; কিন্তু যারা মানুষের নিকট মুখ ভরে কথা বলে, তারা কারা? তিনি বললেন, অহংকারীরা।’ (তিরমিজি, হাদিস নং-২০১৮)।

অহংকারীরা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ অবস্থায় আল্লাহতায়ালা তার ওপর ক্ষুব্ধ থাকবে। আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মনে মনে নিজেকে বড় মনে করে এবং হাঁটার সময় অহংকার করে, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে যে অবস্থায় আল্লাহতায়ালা তার ওপর রাগান্বিত।’ (আহমদ, হাদিস নং ৫৯৫৯)।

অহংকারীদের আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন অত্যন্ত অপমান অপদস্থ করে একত্র করবে। আমর ইবন শোয়াইব থেকে বর্ণিত-রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘অহংকারীদের কিয়ামতের দিন বড় মানুষের আকৃতিতে ছোট ছোট পিঁপড়ার মতো করে একত্র করা হবে। অপমান অপদস্থ সব দিক থেকে তাকে গ্রাস করে ফেলবে। তারপর তাকে জাহান্নামের মধ্যে একটি জেলখানা যার নাম ‘বুলাস’, তার দিকে টেনেহেঁচড়ে নেওয়া হবে। তাদের জাহান্নামের প্রজ্বলিত আগুন চতুর্দিক থেকে গ্রাস করে ফেলবে। আর তাদের জাহান্নামিদের পিত্ত, পুঁজ ও বমি থেকে তাদের পানীয় দেওয়া হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং-২৪৯২)।

অহংকার জান্নাতে প্রবেশের প্রতিবন্ধক : আব্দুল্লাহ ইবন মাসুদ (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যার অন্তরে একটি অণু পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। নবীজি এ কথা বললে, এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, কোনো কোনো লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ করে, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহরতায়ালা নিজেই সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হলো, সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৯১)।

অহংকারীদের জন্য জাহান্নামের ওয়াদা দেওয়া আছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসুদ রাদিয়াল্লাহু (রা.) থেকে বর্ণিত-‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি তোমাদের থেকে কারা জান্নাতি, তাদের বিষয়ে খবর দেব কি? তারা হলো সব দুর্বল ও অসহায় লোকেরা তারা যদি আল্লাহর শপথ করে আল্লাহতায়ালা তাদের দায় মুক্ত করে। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদের কারা জাহান্নামে যাবে তাদের বিষয়ে খবর দেব? তারা হলো সব অহংকারী, দাম্ভিক ও হটকারী লোকেরা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৪৯১৮)।

অহংকারীদের অপমান অপদস্থ করে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর কাফিরদের দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদের বলবে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কি রাসুলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তেলাওয়াত করত এবং এদিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করত?’ তারা বলবে ‘অবশ্যই এসেছিল’। কিন্তু কাফিরদের ওপর আজাবের বাণী সত্যে পরিণত হলো। তাদের বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, চিরকাল তোমরা সেখানে অবস্থান করবে। অহংকারীদের বাসস্থান কতই না মন্দ।’ (সুরা আজ-জুমার, আয়াত : ৭১-৭২)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফির, আয়াত : ৬০)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, অহংকার হলো আমার চাদর আর বড়ত্ব হলো আমার পরিধেয়। যে ব্যক্তি আমার এ দুটির যে-কোনো একটি নিয়ে টানাটানি করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং-৪০৯০)।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক

 

Wordbridge School
Link copied!