ঢাকা : গুনাহ করা মানে হলো আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যাওয়া। গুনাহের মাধ্যমে মানুষ শয়তানের অনুসরণ করে। মানুষ যখন কোনো গুনাহ করে তখন শয়তান খুব খুশি হয়। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে যান। হাদিসে পাকে হুজুরপাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো মানুষ যখন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। সাথে সাথে যদি তওবা করে ফেলে তাহলে সেই দাগ মিটে যায়। কিন্তু যদি তওবা করার আগেই আরেকটি গুনাহ করে তাহলে আরো একটি দাগ পড়ে যায়। এভাবে দাগ পড়তে পড়তে অন্তরটা কালো কুচকুচে হয়ে যায়। তখন তার অন্তরটা পাপিষ্ঠদের অন্তর হয়ে যায়। আর আল্লাহর রহমত থেকে অনেক দূরে সরে যায়।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে গুনাহের মৌলিক তিনটি ক্ষতি নিয়ে আজকের লেখা। যদিও গুনাহের মাধ্যমে আদম সন্তানের অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে, তার মাঝে মৌলিক তিনটি বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা। গুনাহের সবচেয়ে বড় এবং ভয়াবহ ক্ষতি হলো, মানুষ আল্লাহর ইবাদত থেকে মাহরুম হয়ে যায়। আল্লাহর ইবাদত করতে মন চায় না। মনে কোনো আগ্রহ তৈরি হয় না। নেক কাজের প্রতি কোনো আকর্ষণ থাকে না। যদিও হাতে অনেক সময় থাকে, কিন্তু আল্লাহর হুকুম মানার মতো তৌফিক হয় না। আজানের শব্দ কানে আসে কিন্তু মসজিদে যেয়ে নামাজ আদায় করার মতো তৌফিক হয় না। দোকানে বসে আড্ডা দিবে, অযথা সময় নষ্ট করবে, অথচ মসজিদ একদম নিকটে তারপরেও মসজিদে যাবে না। হেলাফেলায় সময় নষ্ট করবে। আল্লাহর হুকুম পালন করার মতো সময় হবে না। পারিবারিক সমস্যার কারণে অথবা অসুস্থতার কারণে দিনের পর দিন দোকান বন্ধ রাখতে পারে, অথচ নামাজের জন্য দশ মিনিট দোকানটা বন্ধ রাখতে পারে না। মোবাইলে সময় দেওয়ার টাইম আছে। ফেসবুক, ইউটিউব দেখার সময় হয় কিন্তু নামাজের সময় হয় না। এগুলো হয় গুনাহের কারণে। আজকে যুবসমাজ মোবাইলের মাধ্যমে অনেক গুনাহে লিপ্ত। যুবক ভাইয়েরা মোবাইলে অযথা সময় নষ্ট করে। কিন্তু আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার মতো সময় হয় না। মসজিদে আজানের ধ্বনি হলে, অনেক মানুষ আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মসজিদে যেয়ে নামাজ আদায় করে, কিন্তু যাদের ওপর আল্লাহর রহমত নেই তারা মসজিদে যেতে পারে না। মানুষ মনে করে, আমি মসজিদে গেলাম নাতো কি হলো, নামাজ পড়লাম নাতো কি হলো। মানুষ কখনো এটা ভাবে না যে, আল্লাহর রহমত আমার ওপর নেই বিধায় আমি মসজিদে যেতে পারি না। আল্লাহ আমাকে ভালোবাসে না, তাই আমাকে মসজিদে নিয়ে যান না। এভাবে কখনো ভাবেনি। তাই আল্লাহর রহমত পেতে হলে অবশ্যই গুনাহ ছাড়তে হবে। গুনাহমুক্ত জীবন গড়ে তোলতে হবে।
গুনাহের দ্বিতীয় ক্ষতি : মানুষ গুনাহ করলে আল্লাহর রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যদিও তার অনেক ধনসম্পদ থাকে, কিন্তু সে এগুলো উপভোগ করতে পারে না। লক্ষ ও কোটি টাকার মালিক, কিন্তু সে নিজে কিছুই খেতে পারে না। এমন অনেক মানুষ আছে, ধনসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, কিন্তু ডাক্তার বলে দিছে দুই রুটির বেশি খাওয়া যাবে না। এটা খাওয়া যাবে না ওটা খাওয়া যাবে না। এমন অনেকেই আছেন, শুধু ঘুষ ও হারাম উপায়ে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছে। মানুষকে ঠকিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। গরিব অসহায়দের হক মেরে দিয়েছে। জনগণের সম্পদ লুটপাট করেছে, সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে নিজের নামে করে নিয়েছে। আরো কতো কি করেছে। কিন্তু শেষ জীবনে যেয়ে সে কিছুই উপভোগ করতে পারে না। কখনো এমন চিত্রও দেখা যায় যে, এই সম্পদের কারণেই তার জীবন দিতে হয়। সন্তান ও যেই প্রিয়জনদের কারণে এতো কিছু করেছে, উনারা তার চেয়ে তার সম্পদকেই বেশি ভালোবাসে। সে হয়ে যায় অবহেলিত ও বঞ্চিত। মানুষ কখনো এটা মনে করে না বা বুঝার চেষ্টা করে না যে, যাদের জন্য এতো কিছু করছি তারা কেউ তো আমার কবরে যাবে না। আমার হারাম উপার্জনের গুনাহের ভাগ নেবে না। এটা মনে রাখা উচিত যে আমার কবরে আমাকেই যেতে হবে, আমার আমলের হিসাব আমাকেই দিতে হবে। তাই কোনো গুনাহ করা যাবে না, বিশেষভাবে হারাম উপার্জন করা যাবে না।
গুনাহের তৃতীয় ক্ষতি : কোরআন-সুন্নাহর ইলম থেকে বঞ্চিত হওয়া। কোরআন পড়ার তৌফিক হয় না। কারণ, কোরআন-হাদিস হলো পবিত্র জিনিস, আর গুনাহগারের অন্তর হলো অপবিত্র। তাই পবিত্র এই এলেম আল্লাহ অপবিত্র পাত্রে রাখেন না। এলেম হলো আল্লাহর নূর। আর এই নূর আল্লাহতায়ালা কোনো গুনাহগার নাপাক অন্তরে দেন না। তাই গুনাহগার মানুষ আল্লাহর কালাম ও রাসুলের হাদিস থেকে মাহরুম থাকে। এ জন্য বিশেষভাবে যারা কোরআন ও হাদিসের ইলম অর্জন করতে চায় তাদেরকে সকল গুলাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। প্রকাশ্য ও গোপনে কোনো অবস্থাতেই গুনাহ করা যাবে না। গোপনীয় গুনাহ মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহরাব্বুল আলামীন আমাদের সব প্রকার অবস্থা জানেন। আমাদের অন্তরের ভেদ ও চোখের খেয়ানত সম্পর্কে আর কেউ না জানুক, আল্লাহতায়ালা কিন্তু সবকিছুই জানেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সব প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : পরিচালক, জামিয়া শায়েখ আরশাদ মাদানী, সদর, ময়মনসিংহ







































