• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

হতাশা কখনোই মুমিনদের স্পর্শ করে না


মাসুম আলভী জুন ৭, ২০২১, ১১:৪২ এএম
হতাশা কখনোই মুমিনদের স্পর্শ করে না

ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা : আশার প্রদীপ নিভু নিভু করে। মনকে বিষন্নতার চাদরে আবৃত করে ফেলে। আশা-নিরাশা; কি হারিয়েছি? কি আছে? কি হবে? নানা প্রশ্ন কল্পনায় খেলা করে। ফুটবলের মতো এপাশ ওপাশ করতে করতে মন পড়ে যায় বিপাকে। এছাড়াও উপার্জনের সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, বন্ধুমহল  ভুল বোঝাবুঝি নানা হিসাব কষে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আনন্দঘন জীবন হয়ে যায় ছন্দছাড়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত : ১০-১২) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান, তখন দুনিয়ায় তার দুঃখ-কষ্ট বাড়িয়ে দেন। কিন্তু যখন তিনি কারো জন্য অন্যথা চান, তখন তিনি তার দুর্ভোগ  উঠিয়ে নেন, যাতে বিচার দিবসে দুর্ভোগের বোঝা পুরোপুরি তার ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন।’ (তিরমিযি)

মনপ্রাসাদে যখন হতাশারা আধিপত্য বিস্তার করে তখন মানুষ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। শয়তান আনন্দ অনুভব করতে। কিন্তু প্রকৃত মুমিনরা কখনো হতাশ হয় না। মুমিন বান্দারা জানে আল্লাহর সব সিদ্ধান্ত কল্যাণকর। যে কোনো অবস্থায় ধৈর্যের পরিচয় দেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ’তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা করো। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-৪৫) আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আর শয়তান মানুষকে আশাহত করে। আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ করার জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমার রহমত সব বস্তুকে আবৃত করে আছে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত-১৫৬)

করোনা মহামারীতে পৃথিবী স্থবির হয়ে গেছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন টিউশনি হারিয়েছে অনেকেই। সব ধরনের পড়াশোনা বস্তাবন্দি করে নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীরা পরিবারের হাল ধরেছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত সমাজের শিক্ষার্থীরা বন্দি হতাশার বাহুডোরে। লোকলজ্জার ভয়ে আড়ষ্ট। প্রতিবেশীর কানা-ঘুষা, মা-বাবা পিড়াপীড়ি জীবন বিষিয়ে তুলছে। উপার্জনের বহু পথ খুঁজে ক্লান্ত প্রায়। অবশেষে নিষ্কৃতির পথ খুঁজে নেশাতে কেউ নারীর সংস্পর্শে আবার অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ২-৩)

নিত্যনতুন সংকট হন্য হয়ে তাড়া করছে। অর্থ আর ক্ষমতা ছাড়া মুক্তির সব রাস্তা অবরুদ্ধ। দুঃশ্চিতায় চোখ পর্দা পড়েছে। সামনে পেছনে শুধুই অন্ধকার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে, আল্লাহতায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ) মহামারী, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় সব কিছু মানুষের হাতের কামাই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আল্লাহ কখনো তাদের ওপর আজাব দেবেন না।’ (সুরা আল-আনফাল, আয়াত-৩৩) বিপদের বিষাদময় সময়ে ন্যায়ের ওপর অবিচল থেকে নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহ কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আর যারা এই কাজ করবে তাদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করবে; হোক সে পুরুষ কিংবা নারী; আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো। আর তারা যা করতো, তার তুলনায় অবশ্যই আমি উত্তম প্রতিদান দিবো।’ (সুরা নাহল, আয়াত-৯৭)

আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ। উত্তম আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তবুও পরশ্রীকাতর হয়ে হতাশার সাগরে ডুবে সৃষ্টিকর্তাকে কতশত প্রশ্ন করে। আল্লাহ আমাকে কালো বানালেন কেন? আমার আরেকটু লম্বা হওয়ার দরকার ছিল। চুল যদি একটু বড় হতো! নাক তো মাশাল্লাহ! একটু ছোটো হলে নাক মুখ এক হয়ে যেতো। আল্লাহ আমাকে প্রতিবন্ধী করল কেন? প্রশ্নবাণে মনের মধ্যে সংশয়ের কম্পন সৃষ্টি করে।  আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যা তোমার পালনকর্তা বলেন, তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হইও না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-৬০) অন্য এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি। তারই কাছে সবাইকে ফিরতে হবে।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত-৩)

আজকে ফিলিস্তিনের মাজলুম মানুষদের দেখে হাজার হাজার মুসলিম তরুণ মুসলমান জাতি নিয়ে হতাশ। পণ্য বর্জন করছে না কেন? মুসলিম জাতি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে না কেন? পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না কেন? পৃথিবীর সবচেয়ে অলস জাতি মুসলিম কেন? মুসলমানদের মধ্যে এতো মতভেদ কেন? আজ পৃথিবীর সকল প্রান্তে মুসলমান নির্যাতিত কেন? অভাব, অপমান, মারামারি, তবে কি ইসলাম মেনে ভুল করেছি! আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৯) মুসলমান জাতির স্বর্ণ যুগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভুলেও স্মরণ করে না আজকের তরুণরা। এক সময় মুসলিম শাসকরা অর্ধপৃথিবী  শাসন করেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের তীর্থস্থান ছিল মধ্যেপ্রচ্যের আরব দেশে। আর মুসলমান পণ্ডিতরা পৃথিবীময় জ্ঞান বিতরণ করতেন। আজকে যেসব তরুণ স্বজাতির বিপর্যয় দেখে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে। তারা শুধু ফেসবুকে নানা প্রশ্ন আওড়ায়। কখনো মুক্তির মহাগ্রন্থ আল  কোরআন ও হাদিস স্পর্শ করে দেখে না। হামজা, খালিদের মতো বীর সেনানী হওয়ার ইচ্ছা জাগে না। মুসলিম জাতির মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে কাঁদে না। অথচ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।’ (সুরা আল মুমিন, আয়াত-৬০) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ)

রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে। যখন কার ওপর বিপদ আসে তখন বিষন্ন স্বরে বলতে থাকে, আল্লাহ একের পর এক বিপদের জন্য আমাকেই কেন বাছাই করছেন? মা-বাবা আমাদের খুব ভালোবাসেন, তারা আমাদের কোনো অকল্যাণ চান না। আল্লাহ আমাদের মা-বাবর চেয়েও বহুগুণে বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহ আমাদের ওপর অকল্যাণ চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২৮৬)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোনো একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তো-বা কোনো একটা বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে তা অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২১৬)

অনেকেই ভগ্নহূদয় নিয়ে পীর বাবার কাছে হাজির হয়, বিপদ থেকে মুক্তির জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত-১০৭) সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে-আল্লাহতায়ালার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া। আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস নং-১৯৭০১) বিপদের সময় শয়তান নানাভাবে প্ররোচিত করে মুমিনদের হতাশাগ্রস্ত করতে চায়। মুমিনদের বুঝাতে চায়, আল্লাহ দুনিয়াতে সারাজীবন তোমাকে কষ্টের পর কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।’ (সুরা আল-ইনশিরাহ, আয়াত-৬)

হঠাৎ করেই আল্লাহ আমার পরিবারের ওপর এতো বড় সমস্যা কেন দিলেন? পরীক্ষার আগের রাতেই জ্বর দিতে হবে! আজকে যদি বাড়ি থেকে বের না হতাম তবে বিপদটা হতো না। কেন জীবনপাতায় এতো কাটাছেঁড়া? আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি ইহা সংঘটিত করার আগেই ইহা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহর পক্ষে ইহা খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত-২২) সত্তর বছরের জীবনে সুখ কি জিনিস দেখলাম না। আল্লাহ কালাম করেই বা কি পেলাম। খারাপ মানুষ তো জীবনটা আমার চেয়ে অধিক উপভোগ করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।’ (সুরা নাযিআত,  আয়াত-৪৬)

লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!