• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

জাকির নায়েকের ঢাকা সফর নিয়ে ভারতের উদ্বেগ, কী করবে বাংলাদেশ?


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
জাকির নায়েকের ঢাকা সফর নিয়ে ভারতের উদ্বেগ, কী করবে বাংলাদেশ?

ছবি: প্রতীকী

চলতি নভেম্বরের শেষ দিকে ঢাকায় আসার কথা ইসলামি বক্তা ডা. জাকির নায়েকের। বাংলাদেশের একটি দাতব্য অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার। কিন্তু এই সম্ভাব্য সফর নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ্যেই জানিয়েছে, জাকির নায়েক পলাতক আসামি এবং তিনি ভারতে ‘ওয়ান্টেড’। তাই তিনি যে দেশেই যান, সেখানে যেন তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়-এমন প্রত্যাশাই নয়াদিল্লির।

প্রশ্ন হচ্ছে, জাকির নায়েকের ঢাকায় আসা নিয়ে ভারতের এত মাথাব্যথা কেন? ভারতের দৃষ্টিতে জাকির নায়েক শুধু ধর্মপ্রচারক নন, তিনি ‘বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু’। ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশান হামলার পর তার বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়। পরে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তার বিরুদ্ধে ঘৃণাবক্তৃতা ছড়ানো, মানি লন্ডারিং এবং ধর্মীয় উসকানির অভিযোগে একাধিক মামলা করে।

২০১৭ সালে তার সংগঠন ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। এরপর থেকেই মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন আলোচিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েক।

ভারত মনে করে, জাকির নায়েকের মতো এক ব্যক্তির দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাগত পাওয়া তাদের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক অবস্থানের জন্য ‘সংবেদনশীল’ বিষয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর তার নাম ওঠায় নয়াদিল্লি এখন তার যেকোনো বিদেশ সফরকে নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে দেখে।

এ কারণেই গত ৩০ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল সরাসরি বলেন, ‘জাকির নায়েক একজন পলাতক আসামি। তিনি ভারতে ওয়ান্টেড। তাই আমরা আশা করি, তিনি যেখানেই যান না কেন, সংশ্লিষ্ট দেশ তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’

ভারতের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, জাকির নায়েকের সফর অনুমোদনের বিষয়টি তার এখতিয়ারে নয়। 

তার ভাষায়, ‘বিদেশি কোনো মেহমান যদি দেশে আসেন, সেটা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিল করে থাকে। তারা অনুমতি দিলে তিনি আসবেন।’

অন্যদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস. এম. মাহবুবুল আলমও বিষয়টি নিয়ে সংযত অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতের মন্তব্য বাংলাদেশের নজরে এসেছে এবং বাংলাদেশও বিশ্বাস করে যে, কোনো দেশের পলাতক ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি নিছক ধর্মীয় সফর নয়, বরং একটি কূটনৈতিক ভারসাম্যের পরীক্ষা। একদিকে ভারতের সঙ্গে গভীর রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের বিশাল একটি শ্রোতাগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় এক ধর্মীয় বক্তা জাকির নায়েক।

ঢাকায় তাকে স্বাগত জানানো হলে ভারত তা দেখবে ‘অসন্তোষের চোখে’, আবার তার সফর বাতিল করলে মুসলিম জনমতের একাংশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাকির নায়েকের আগমন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুরোপুরি নির্ভর করছে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা অনুমতি দিলে তিনি ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য দাতব্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন। তবে তার সফর ঘিরে ভারতের এই উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হয়তো অনেকটাই সতর্কভাবে এগোবে-এমনটাই ধারণা কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের।

এসএইচ 

Wordbridge School
Link copied!