• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বাংলাদেশের জয়ের ‘নায়ক’ কে এই পাপন


ক্রীড়া ডেস্ক নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
বাংলাদেশের জয়ের ‘নায়ক’ কে এই পাপন

ঢাকা: ইনজুরি সময়ে বদলি পাপন সিংয়ের গোলে মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারিয়ে বছরের শেষ ম্যাচটি উৎসবে মাতালো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।

শনিবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ইনজুরি সময়ে গোলটি করেছেন পাপন সিং। সোহেল রানার বদলি হিসেবে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেছিলেন আবাহনীর এই মিডফিল্ডার।

কিংস অ্যারেনার উপস্থিত দর্শকেরা আর কোনো আশাই দেখছিলেন না। তখন পর্যন্ত মালদ্বীপের বিপক্ষে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের গল্পটা আগের ম্যাচের মতোই। একের পর এক আক্রমণ, একের পর এক সুযোগ সৃষ্টি, কিন্তু গোল নেই। 

হেরে যাওয়া প্রথম ম্যাচের তুলনায় এ ম্যাচে উন্নতি বলতে তখন ১-১ সমতা। প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় গোলের জন্য হাপিত্যেশ করেছিল বাংলাদেশ। আর এবারের হাপিত্যেশটা ১-১ সমতা থেকে জয়সূচক গোলের জন্য।

৮৯তম মিনিটে সোহেল রানার পরিবর্তে মাঠে নামানো হলো পাপন সিংকে। তবে বদলিটা হয়তো মাঠের অনেকেরই নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। এখন আর বদলি নামিয়ে লাভ কি! এমনই ছিল আবহ।

তবে সহকারী রেফারি যখন ডিজিটাল বোর্ড তুলে ৭ মিনিট অতিরিক্ত সময়ের ঘোষণা দিলেন, তখন সবাই খানিকটা নড়েচড়ে বসলেন। নাহ্‌, একটু হলেও সুযোগ আছে। যেভাবে বাংলাদেশ দল মালদ্বীপকে চেপে ধরেছে, তাতে একটা গোল বেরিয়ে আসতেও পারে।

যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে সেই গোলটাই এনে দিলেন চার মিনিট আগে মাঠে নামা পাপন সিং। বাংলাদেশ দল মালদ্বীপের বিপক্ষে জিতে গেল ২-১ গোলে। এরপর থেকেই সবার মুখে পাপন সিং। কে এই পাপন সিং?

কাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে খুব ভালো মুডে ছিলেন না কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। দল জেতার পরও। আসলে প্রথম ম্যাচের দুঃখ কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না বাংলাদেশ দলের কোচ। 

প্রথম ম্যাচে হারার পর সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে যে সমালোচনা হয়েছে, সেটা মানতে পারেননি কাবরেরা। একবার তো বলেই দিলেন, ‘আজকের ম্যাচের (কাল) তুলনায় প্রথম ম্যাচেই ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। শুধু গোলটাই করতে পারেনি, কিন্তু কেউই দেখল না, দল কতটা ভালো ফুটবল খেলেছে সেই ম্যাচে।’

পাপন সিংয়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোচ কিছুটা ক্ষুব্ধই হন প্রশ্নকারীর ওপর, ‘কেন, এই পাপন সিং তো নতুন কেউ নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই সে প্রিমিয়ার লিগ খেলে। গত মৌসুমে আবাহনীতে খেলেছে। বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। যারা প্রিমিয়ার লিগ নিয়মিত অনুসরণ করেন, তাদের পক্ষে পাপন সিংকে চিনতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়।’

কোচের কথায় ক্ষোভ স্পষ্ট। অমূলকও নয়। প্রিমিয়ার লিগ, যেটি দেশের ফুটবলের প্রধানতম ঘরোয়া প্রতিযোগিতা, সেটির খবর যে খুব বেশি মানুষ রাখেন, সেটি বলা যাবে না। শেখ মোরছালিন জাতীয় দলের জার্সিতে গোল পেয়ে নিজেকে চিনিয়েছেন, অথচ, ঘরোয়া লিগেই মোহামেডান ও বসুন্ধরা কিংসের জার্সিতে তার আগেই মোরছালিনের বেশ কয়েকটি চোখধাঁধানো গোল ছিল। 

পাপন সিংও বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন, উত্তর বারিধারায় তিন মৌসুম খেলেছেন। এর আগে উত্তর বারিধারার হয়েই খেলেছেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, গত মৌসুমে খেলেছেন আবাহনীতে এবং খেলেছেন মোটামুটি নিয়মিতই। গোলও আছে তার।

তবে কালই যারা পাপন সিংয়ের নাম প্রথম শুনেছেন, তাদের চমকানোর পালা বাকি এখনো। এই পাপন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলছেন ২০২২ সাল থেকেই। সে বছর মালয়েশিয়াতে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের দলে ছিলেন। তার আগে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে জাকার্তায় আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে তার অভিষেকও হয়েছিল। কাল সেই পাপনকেই যেন নতুন করে আবিষ্কার করলেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা, আবিষ্কার করলেন জাতীয় দলের কোচ কাবরেরা।

নেত্রকোনার বারহাট্টার ছেলে পাপন। কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মস্থান। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গেও এই বারহাট্টার সংযোগ রয়েছে। তার নানাবাড়ি এই বারহাট্টায়। পাপন নিজেও জানেন এসব তথ্য। কাল সন্ধ্যা থেকে বারহাট্টার আরেক কৃতী সন্তান আলোচনায়। 

পাপন জানেন, গোল করে দেশকে জেতানোর কারণেই তার প্রতি সবার আগ্রহ, ‘আসলে আমি তো ফুটবল খেলি অনেক দিন ধরেই। প্রিমিয়ার লিগেও খেলছি সেই ২০২০ থেকে। এর আগে বিসিএল খেলেছি। জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ায়। তবে বুঝতে পারছি, দেশের হয়ে একটি গোলের গুরুত্ব কতটুকু। আর সেই গোলে যদি দেশ জেতে।’

৮৯তম মিনিটে যখন মাঠে নামলেন পাপন, কোচ কাবরেরা নাকি ভিন্ন কোনো নির্দেশনাই তাকে দেননি, ‘আমাদের পজিশনভিত্তিক দায়িত্ব থাকে। আমারও সেই দায়িত্ব ছিল। আমি সেটি আগে থেকেই জানতাম। ইমনের (শাহরিয়ার ইমন) ক্রস থেকে বলটা যখন আমি পাই, সেটি আমার জায়গাতে দাঁড়িয়েই। আমি শুধু বলটা গোলে পাঠিয়েছি।’

তবে পাপন সিং স্বীকার করেছেন, ৮৯তম মিনিটে মাঠে নেমেই যে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে তিনি ‘বীর’ হয়ে যাবেন, সেটি ভাবেননি, ‘গোল করার ব্যাপারটা মাথায় থাকে। মাঠে নামলে গোল করতে চাই, সেটি আবাহনী হোক, কিংবা জাতীয় দল। তবে কাল সত্যিই ভাবিনি যে সুযোগটা এসে যাবে।’

ফুটবলে নায়ক তৈরি হয় আসলে এভাবেই।

এআর

Wordbridge School
Link copied!