• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অটোমান সাম্রাজ্যের টিউলিপ ফুটছে বাংলাদেশে


গাজীপুর প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০, ০১:৫৯ পিএম
অটোমান সাম্রাজ্যের টিউলিপ ফুটছে বাংলাদেশে

ঢাকা : বর্তমানে নেদারল্যান্ড টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী প্রধান দেশ। ঐতিহাসিক যুগে অটোমান সাম্রাজ্য থেকে টিউলিপের বিস্তার হলেও বাণিজ্যিকভাবে নেদারল্যান্ডে এ ফুলের ব্যাপক আবাদ হয়। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। তাই দেশটি প্রতি বছরেই পালন করে টিউলিপ উৎসব। 

এমন দৃষ্টি জুড়ানো টিউলিপ ফুলের দেখা মেলা ভার এশিয়া মহাদেশের ভারত, আফগানিস্থান ও গুটিকয়েক দেশ ছাড়া। ষড়ঋতুর আমাদের দেশে এক সময়তো এই ফুলের কথা কল্পনাই করা যেত না। তাই মনের মাধুরীতেই এই ফুলের ভালবাসা হৃদয়াঙ্গম করতে হতো বাঙালীদের। তবে এখন সেই দুয়ার খুলে দিয়েছেন এক ফুল চাষী। তিনি তার নন্দকাননে টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে দেশ জুড়েই এর চাষে সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।
 
গাজীপুরের শ্রীপুরের ফুলচাষী দেলোয়ার হোসেনের বাগানে দীর্ঘ শীতের ক্লান্তি ভুলিয়ে এখন টিউলিপগুলো উঁকি দিয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই টিউলিপগুলো দেখতে উৎসুক মানুষেরও যেন বাড়ছে আগ্রহ। তার পুরো বাগান জুড়েই এখন টিউলিপময় ভালোবাসার গল্প।

টিউলিপ

ফুলচাষী দেলোয়ার হোসেন তার এই ফুল বাগানের নামকরণ করেছেন “মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স”। এর আগে ২০১২ সালে তিনি জারবেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশী বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন। একজন সফল ফুলচাষী হিসেবে তিনি ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকে ভূষিত হন। সম্প্রতি তিনি দেশে প্রথমবারের মত ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছেন।

দেলোয়ার হোসেনের ভাষ্য, আমাদের দেশে প্রতি বছর ব্যাপক ফুলের চাহিদা রয়েছে। এর চাহিদা মেটাতে হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানী করে। ফুল চাষে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে ছিলাম। অর্থনীতির ও চাহিদার কথা চিন্তা করেই বিভিন্ন বিদেশী ফুল দিয়ে তিনি তার স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেন। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও তিনি থেমে থাকেনি। তাই পেয়ে যাচ্ছেন একটির পর একটি সফলতা। জারবেরা, চায়না গোলাপের পর তিনি টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে ফের পেয়েছেন সফলতা। পরীক্ষামূলক কাজ শেষে তিনি শুরু করবেন এই ফুল চাষ সম্প্রসারণের কাজ। টিউলিপ বর্ষজীবী ও বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত। প্রজাতি অনুযায়ী এর উচ্চতাও ভিন্ন হয়।

তিনি জানান, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ থাকলেও তিনি গত ৮ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ড থেকে ১ প্রজাতির ৪ রঙের সহশ্রাধিক টিউলিপের বাল্ব এনে ১৫ ডিসেম্বর নিজের বাগানে রোপণ করেছিলেন। ৪৫ দিন পরিচর্যা শেষে জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে টিউলিপ ফোটা শুরু হয়। দেশীয় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে যার স্থায়ীত্ব হতে পারে ২০-২২ দিন।

তার মতে, টিউলিপ ফুলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শীতের গভীরতা। সাধারণত টিউলিপ ফুল চাষে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রার প্রয়োজন। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীত মৌসুমে তাপমাত্রা কম থাকে বিধায় সেখানে টিউলিপ ফুল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) উদ্যানতত্ব বিভাগের ফুল গবেষক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন খান জানান, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেকেই বাসা বাড়ির টবে বা শখের বশবর্তী হয়ে এ ফুলের চাষ করে আসছেন। বাণিজ্যিকভাবে এখনো এই ফুল চাষ শুরু হয়নি। তবে শীত মৌসুমে আবহাওয়া ফুলের অনূকুলে থাকলে এই ফুলের চাষ করা যেতে পারে বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে। ফুল চাষী দেলোয়ারের এ উদ্যোগ সফলতার বীজ বপন করেছে দেশের কৃষকদের মধ্যে।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মাহবুব আলম জানান, বর্তমানে উচ্চমূল্যে টিউলিপ ফুল আমদানী করে আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। একজন আদর্শ ফুলচাষী দেলোয়ারের টেউলিপ ফুল ফোটানোর সফলতায় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এই ফুলের চাষ ঘিরে। টিউলিপ চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতেও ছোঁয়া লাগবে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!