• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চোখের আলোহীন এক জনপ্রিয় প্রাথমিক শিক্ষকের গল্প


শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩০, ২০২০, ০৪:৪২ পিএম
চোখের আলোহীন এক জনপ্রিয় প্রাথমিক শিক্ষকের গল্প

শরীয়তপুর: ল্যাপটপে রিডিং সফটওয়্যারের সাহায্যে বইয়ের বিষয়বস্তু শুনছেন শিক্ষক। আর সামনে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। চতুর্থ শ্রেণিতে ক্লাস নেওয়া শেষে ঢোকেন পাশের শ্রেণিকক্ষে সংগীতের ক্লাস নিতে। সঙ্গে হারমোনিয়াম ও তবলা বাজানোও শেখান।

এত সব কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করছেন যে মানুষ, তাঁর চোখে আলো নেই। আলোহীন চোখ নিয়েই তিনি শিশুদের মধ্যে আলো বিলানোর মহান ব্রত নিয়েছেন। এ কাজ করতে গিয়ে দারুণ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছেন শরীয়তপুরের এই শিক্ষক।

নাম তাঁর আবদুল মালেক ছৈয়াল। নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাত বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন তিনি।

কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিতা রায় বলেন, মালেক আমাদের বিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর আমরা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু তিনি মেধা ও ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শিশুদের মন জয় করেছেন। বিদ্যালয়ে তিনি অনেক জনপ্রিয় শিক্ষক।

কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্র জানায়, নড়িয়া পৌরসভার বরুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক। জন্মের সময় সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। বছর তিনেক পর ১৯৯০ সালে টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান তখন। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তাঁকে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে আর সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়নি।

১৯৯২ সালে তাঁকে রাজধানীর একটি মিশনারি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতিবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

২০১৩ সালে বিভিন্ন স্থানে চাকরির আবেদন করতে থাকেন আবদুল মালেক। ওই বছরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁকে নড়িয়ার কেদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেন।

জানতে চাইলে আবদুল মালেকের মা রোকেয়া বেগম বলেন, আমাদের দরিদ্র পরিবার। ছয় সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হতো। এরই মধ্যে ২০০৬ সালে আমার স্বামী মারা যান। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও মালেক দমে থাকেনি। অদম্য ইচ্ছেশক্তিই তাকে আজকের অবস্থানে এনেছে।

পড়ালেখা করার সময় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও সহপাঠীরা সহায়তা করত। আর পরীক্ষার সময় শ্রুতলেখকের সহায়তা নিত। মালেক তার বিদ্যালয়ে অনেক জনপ্রিয়, এ দৃশ্য দেখলেই বুকটা গর্বে ভরে যায়। ২০১৩ সালেই তাকে বিয়ে করানো হয়। তার পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।

জানতে চাইলে মালেক বলেন, আল্লাহ হাজারো শিশুকে আলোকিত করার দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করেছেন। এ কাজটা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে চাই। শিক্ষকতার মতো একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সহায়তা ও ভালোবাসা পাচ্ছি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দৃষ্টিহীন মালেক অনেক দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক। নিজের চোখে আলো নেই, অথচ কত যত্ন নিয়ে শিশুদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছেন। বিদ্যালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে তিনি অনেক জনপ্রিয়। স্বল্প সময়ে তিনি এত ভালো করতে পারবেন, তা ভাবতেও পারিনি। পাঠদানের পাশাপাশি তিনি শিশুদের সংগীত, তবলা ও হারমোনিয়াম বাজানো শেখান।

সোনালীনিউজ/টিআই

Wordbridge School
Link copied!