• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন অবসরের গল্প


জবি প্রতিনিধি জুলাই ৩, ২০২০, ১০:৩৩ পিএম
শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন অবসরের গল্প

ছবি: প্রতিনিধি

ঢাকা: প্রায় চার মাস ধরে ঘরবন্দী আছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ব্যতিক্রম নন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরাও। তবে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে শুরু করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। জবিতে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে করোনা পরিস্থিতিতে তাদের অবসর সময় কাটানোর গল্প নিয়ে সোনালী নিউজের আয়োজন।

ঋতু সাহা, দ্বিতীয় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ:

পৃথিবীতে কোন কিছুই থাকে না করোর জন্য। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাস নামক এক পূর্ব অপরিচিত ভাইরাসের জন্য সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। প্রায় তিন মাস ধরে বাসায় অবস্থান করছি। প্রাণের ক্যাম্পাসকে অনেক মিস করছি। প্রিয় শিক্ষক মন্ডলী ও সহপাঠীদের কথাও অনেক মনে পড়ছে। বন্ধু-বান্ধবের সাথে চা খাওয়া, আড্ডা দেওয়া। জানি না কবে সবার সাথে দেখা হবে। জীবনটা ঘরবন্দী হয়ে আছে সবার। কিন্তু এই ঘরবন্দী সময়টাতে নিজের সাথে যোগাযোগ হয়েছে বেশি। 

গান রেওয়াজ, বই পড়া ও ছবি আঁকার মাধ্যমে সময় কাটানোর চেষ্টা করেছি। পেন্সিল আর রং তুলিতে সাজিয়ে কিছু ছবি এঁকেছি। তবে বেশিরভাগ সময় কেঁটে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে। বই মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠ বন্ধু। বই মানুষের চিন্তা শক্তি বিকাশিত করে। বেশ কিছু বই পড়েছি এই সময়টাতে। এর মধ্যে কিছু বই মনকে ছুঁয়ে গেছে। তাদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বই হল একাত্তরের দিনগুলি, অসমাপ্ত আত্মজীবনী (শেখ মুজিবুর রহমান) , পূর্ব -পশ্চিম, সেই সময়, চোখের বালি, গর্ভধারিণী। আরও কিছু বই পড়ার ইচ্ছে রয়েছে। যাই হোক মন থেকে শুধু এটাই চাই পৃথিবীর সবকিছু যেন আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যায়, ফিরে যেতে পারি যেন প্রাণের ক্যাম্পাসে।

'কবে যে রৌদ্রের মতো শান্তি দিয়ে সাজাবো পৃথিবী
পৃথিবীর বুক জুড়ে মুঠো সুন্দরের গান।
ওগো তুমি বলে দাও কতকাল পরে'
দিকে দিকে আমাদের স্বর্ণচ্ছটা জীবন নির্মান।

----পূর্ণেন্দু পত্রী

অভিজিৎ হালদার অভি, তৃতীয় বর্ষ, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ:

বহুদিন ধরে ঘর বন্দী অবস্থায় অতিবাহিত করছি।ভাল লাগছে না একা একা বন্দী ঘরে সময় কাটাতে, সারাদিন একা একা বাসায় বই, টেলিভিশন, মোবাইল, গান শোনার মধ্যে জীবন কাটাতে কাটাতে কেমন যেন নিজেকেই ভার্চুয়াল মনে হচ্ছে। ভাল লাগছে না কিছুই। ক্যম্পাসের আড্ডা টিএসসির চা, ক্যান্টিনের খাবার সবকিছুই ভীষণভাবে মনে পড়ছে। তাও একটা দিক ভালো যে পরিবার এর সাথে আছি, ব্যস্ত জীবনে হয়তো এটা সম্ভব হয়না। বাকি সবার মতো আমিও অবসর সময় কাটাচ্ছিলাম , তার মধ্যে নিজের মধ্যের সুপ্ত প্রতিভাটাকে খোঁজার চেষ্টা করছি। কিছু বানানোর চেষ্টা করছি। কিছু দিন আগে সুযোগ হয়েছে বর্তমানের আলোচিত বিষয় কোভিড ১৯ নিয়ে কাজ করার। এখন বলতে গেলে একটুব্যস্ত সময় পাড় করতেছি। পাশাপাশি ছেলে হয়েছি বলে কি রান্না করা বারণ, নিজের শখের বসে টুকটাক রান্না ও করছি। সৌখিনভাবে থাকতে ভীষণ ভালোবাসি। তাই একটু একটু করে নিজের রুমটাকে সাজাচ্ছি।তবে সবকিছুর মধ্যে নিজের প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসটাকে খুব মনে পড়ছে! প্রার্থনা করি সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, ঘরে থাকুন,নিরাপদে থাকুন।

সুমাইয়া ছাকা শিমু, প্রথম বর্ষ, দর্শন বিভাগ:

২০২০ সাল শুরু হয়েছিল খুব সুন্দরভাবে। চোখে একরাশি স্বপ্ন নিয়ে ক্যাম্পাসে পদার্পণ করেছিলাম। প্রথমদিকে কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও ধীরে ধীরে সবকিছু আপন করে নিতে পারায় সময়টা খুব মজার কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু ভয়াবহ করোনা এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিল। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল স্বাভাবিক কার্যক্রম থামিয়ে দিয়েছে। প্রায় ৪ মাস ঘরবন্দী আছি সকলেই। ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার পরই মনে পড়ছে বন্ধু-বান্ধব সিনিয়র ভাই বোনদের সাথে কাটানো সেই আনন্দঘন মুহূর্তগুলো। কতদিন দেখা হয় না সবার সাথে! চোখের সামনে ভেসে আসে, ক্লাস শেষ হলে সবাই মিলে কত মজাই না করতাম! সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে বাস জার্নিগুলো! কতদিন ভার্সিটির লালবাস প্রজন্ম-১ এ করে আসা যাওয়া হয় না! ভাইদের গাওয়া গান শোনা হয় না! 

ক্যাম্পাসে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই স্মৃতি পাতায় অমলিন রয়েছে! কিন্তু এত স্মৃতির ভিরে এটা বাস্তব যে, আজ আমরা গৃহবন্দী। তাই চাইলে সেই আগের মুহূর্তগুলো ফিরে পাব না। তাই অবসরে পরিবারের সাথে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করছি। ঘরের নানা ধরনের কাজ করে মাকে সাহায্য করছি! ইউটিউবে ভিডিও দেখে রান্না, সেলাই ও নাচও শিখেছি। স্পিকিং ইংলিশ এর একটি গ্রুপে এ্যাড হয়েছি। সেখান থেকে ইংলিশ বলা শেখার চেষ্টা করছি। এই পরিস্থিতিতে সবার সাথে দেখা না হলেও অনলাইনে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। অবসর সময়টাকে কোনভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। অপেক্ষায় আছি কবে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হবে! ইনশাআল্লাহ্ খুব শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবার সাথে দেখা হবে প্রিয় জবি ক্যাম্পাসে।

রিয়াজুর রহমান শোভন, তৃতীয় বর্ষ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ:

বিশ্বের এই করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়িয়েছে সেখানে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের  ক্লাসে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অার এজন্য সকল শিক্ষার্থীদের বাসায় বসেই সময় কাটাতে হচ্ছে। তেমনি অামিও এই অবসর সময়গুলো দারুণভাবেই উপভোগ করতেছি। বাসায় বসে পরিবারকে যেমন যথেষ্ট সময় দিতে পারছি তেমনি বাসার ছোটখাটো কাজও করা হচ্ছে, নতুন নতুন রেসিপিও শিখে বানানোর চেষ্টা করেছি, সাথে সাথে নিয়মিত বাবার ব্যবসাতেও সময় দিচ্ছি। একাডেমিক লেখাপড়ার চাপ না থাকায়  অাল্লাহ তায়ালা নিয়মিত  কুরঅান শরীফ পড়ার তৌফিক দান করেছেন। 

এছাড়াও গল্পের বই, উপন্যাস পড়ার যথেষ্ট সময় পাচ্ছি। বাহিরে খেলাধুলা করার কোনো সুযোগ না থাকায় আমার বিকেলটা কাটে বাসার ছাদে ঘুড়ি উড়িয়েই। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তো অাছেই, যেখানে বন্ধুদের সাথে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সবার প্রতি অামার একটাই অনুরোধ যতটা সম্ভব সচেতন হয়ে নিজে এবং পরিবারকে সুস্থ ও ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।

অন্তু হালদার, প্রথম বর্ষ, শিক্ষা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভাগ:

দীর্ঘদিন ঘর বন্দী অবস্থায় সময় অতিবাহিত করছি..খুব একটা ভালো লাগছে না যদিও, ঘর বন্দী থাকায় সমস্ত কিছু থেকে অনেকটা দুরে, ভালো না লাগারই কথা। তাও একটা দিক ভালো যে পরিবার এর সাথে আছি, ব্যস্ত জীবনে হয়তো এটা সম্ভব হয়না.আমারও বাকি সবার মতোই অবস্থা, কিছুটা বোরিং তবে এসময়টাকে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগাতে পারি, দেখা যাচ্ছে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের অন্য কোন ধরনের বই পড়া হয়ে ওঠেনা, কিন্তু এ সময়টায় সেই সুযোগটা হচ্ছে, বেশ কয়েকটা বই পড়েছি। সাহিত্যকে বালোবাসি,তাই এই সুযোগে সেটা করারও ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, ৫/৬টা কবিতা লিখেছি, ক্ষুদে গল্প লিখেছি। 

সত্যি বলতে পড়াশোনা যে খুব বেশি হচ্ছে তা কিন্তু নয়, তাও তো করতে হবে, ও হ্যাঁ বাসায় থেকে অল্প সল্প রান্না বান্নাও করছি। আর দিন গুনছি কবে সুস্থ জীবনে স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করবো। এত কিছুর পরও নিজের প্রিয় ক্যাম্পাসটাকে মিস করছি, ক্যাম্পাসে আমার খুব বেশিদিন না হলেও এর প্রতি টান ভালোবাসা আমার দীর্ঘদিনের কৃষ্ণচূড়া, পোগোজ, আইইআর, টিএসসি, শহীদ মিনার, শান্ত চত্ত্বর আমার প্রিয় জায়গা, খুব তাড়াতাড়ি যেতে চাই সেখানে, সবার জন্য প্রার্থনা করছি সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং ঘরে থাকুন...

মো.আরিফুল ইসলাম, দ্বিতীয় বর্ষ, গগণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ:

করোনা পরিস্থিতি আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম থামিয়ে দিয়েছে। প্রায় ৩ মাস যাবত গৃহবন্দী আছি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, অবসরে দিন কাটছে। এই অবসরে ঘরের কাজে পরিবারকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি। পরিবারের সাথে দীর্ঘসময় কাটানোর একটা সুযোগ তৈরী হয়েছে  এই অবসর সময়ে। গল্প, উপন্যাসের বই পড়েও কাটাচ্ছি এই সময়টাতে৷ ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে স্কিল ডেভেলপের চেষ্টাও চালাচ্ছি সামান্য। বাসার পাশে ছোট্ট বাগান পরিচর্যা করে সময় অতিবাহিত করছি অনেকটা। করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সরাসরি আড্ডা না দিতে পারলেও অনলাইনে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হয়। 

মোটামুটি অবসর সময়টাকে কাজে লাগানোর সামান্য চেষ্টা করছি। প্রাণের ক্যাম্পাস জবিকে মিস করছি। 
ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই এই পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্তি পাবো এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবো।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!