• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৭৩ বছরে পা দিলেন মির্জা ফখরুল


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৫:৩২ পিএম
৭৩ বছরে পা দিলেন মির্জা ফখরুল

ঢাকা: ৭৩ বছরে পা দিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি আজকের এই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মির্জা ফখরুলের বাবার নাম মির্জা রুহুল আমিন। তিনি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী। মির্জা ফখরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

লেখা পড়ুা শেষ করে মির্জা ফখরুল দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব পদে আছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন সজ্জন ব্যাক্তি হিসেবে সব মহলে তার পরিচিতি রয়েছে।

এছাড়া '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন মির্জা ফখরুল। ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমে তার রাজনীতি শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষে পরবর্তীতে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন। পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। বিএনপির মনোনয়নে তিনি দুবার এমপি হন। দুবার মন্ত্রীত্বের দায়িত্বও পালন করেন।

বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ২০১১ সালের মার্চে মৃত্যুবরণ করলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে মির্জা ফখরুল মহাসচিব পদে নির্বাচিত হন।

মির্জা ফখরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী: 

জন্ম: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার, আগস্ট ১, ১৯৪৮ এ ঠাকুরগাঁও জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।  তার পিতা মির্জা রুহুল আমিন ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ এবং সংসদ সদস্য।

ছাত্রজীবন: মির্জা আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও সন্মান ডিগ্রী অর্জন করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।  

তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (অধুনা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন) একজন সদস্য ছিলেন এবং সংগঠনটির এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন।

কর্মজীবন: ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে মির্জা আলমগীর ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ৭০’র দশকের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনে যোগ দেন। সরকারের পরিদর্শন ও আয়-ব্যায় পরীক্ষণ অধিদপ্তরে একজন অডিটর হিসেবে কাজ করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর সরকারের  উপ-প্রধানমন্ত্রী এস.এ. বারির একজন ব্যাক্তিগত সচিব ছিলেন, যে পদে তিনি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন। 

এস.এ. বারি উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করার পর মির্জা আলমগীর শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যান, এবং ১৯৮৬ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও সরকারী কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেন।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৮৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মির্জা আলমগীর তার শিক্ষকতা পেশা থেকে অব্যাহতি নেন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যখন দেশব্যাপী তুঙ্গে তখন মির্জা আলমগীর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি – তে যোগ দেন। 

১৯৯২ সালে মির্জা আলমগীর ঠাকুরগাঁও বিএনপির সভাপতি মনোনীত হন। মির্জা আলমগীর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান। নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে হেরে যান। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান এবং আবারও আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন। মির্জা ফখরুল ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের সাথে প্রতিযোগীতা করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। 

মির্জা আলমগীর এবার পেয়েছিলেন ১,৩৪,৯১০ ভোট, যা রমেশ চন্দ্র সেনের ভোটের চেয়ে ৩৭,৯৬২ বেশি ছিল। ২০০১ সালের নভেম্বরে নবনির্বাচিত বিএনপি সরকারের মন্ত্রীসভায় মির্জা আলমগীর কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এবং পরে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

মির্জা আলমগীর ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে স্বল্প ব্যবধানে পরাজিত হন। মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৮, ২০০৯ বিএনপির ৫ম জাতীয় সম্মেলন পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এর দায়িত্ব পান। ২০১১ সালের মার্চে বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করলে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রোববার, মার্চ ২০, ২০১১ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন।

ব্যক্তিগত জীবন: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুই মেয়ের জনক। তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন ও বর্তমানে ঢাকার একটি বীমা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তার বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে এই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকতা করেছেন। 

তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশীপ সম্পূর্ণ করার পর এখন অস্ট্রেলিয়ার সরকারের স্বাস্থ্য ডিপার্টমেন্টে বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। মির্জা আলমগীরের বাবা মির্জা রুহুল আমিন একজন আইনজীব ছিলেন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে স্বাধীনতার আগে ও পরে একাধিক বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে মির্জা আমিন বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।

মির্জা আলমগীরের চাচা মির্জা গোলাম হাফিজ – একাধারে বিএনপি’র জাতীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পীকার ছিলেন। মির্জা হাফিজ ১৯৭৮-১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম নেতৃত্বাধীন সরকারে ভুমি মন্ত্রী, ১৯৭৯-১৯৮২ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে স্পীকার এবং ১৯৯১-১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মির্জা আলমগীরের অপর চাচা উইং কমান্ডার এস আর মির্জা, এপ্রিল ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার, যেটি মুজিবনগর সরকার নামে খ্যাত, এই সরকার কর্তৃক ডাইরেক্টোরেট অফ ইয়ুথ ক্যাম্পের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!