• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে বেড়েছে খেলাপিও


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৫, ২০১৬, ১১:১৫ এএম
ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে বেড়েছে খেলাপিও

ব্যাংকিং খাতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা। জামানত না থাকায় বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডে খেলাপি হার যে কোনো ঋণের চেয়ে বেশি। তবে গ্রাহক প্রতি ঋণের পরিমাণ কম থাকায় ব্যাংকের জন্য এখনো তেমন কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করছে না। তবে ইদানিং ভুয়া ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করায় জড়িয়ে পড়ছেন খোদ ব্যাংক কর্মকর্তারাই।

গত কয়েক বছরে এ ধরনের বেশকিছু ঘটনা ধরাও পড়েছে। তারপরও সন্দেহজনকভাবে বাড়ছে ক্রেডিট কা্েরডর সংখ্যা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি- ওই তিন মাসে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা ক্রেডিট কার্ড ইস্যুতে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্ক হতে বলছেন। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে একের পর এক ঘটছে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। তারপরও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা। এর পেছনের কারণ হচ্ছে আগ্রাসী বিপণন কৌশল। তার সাথে তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রাহক সংগ্র প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের বাধ্যবাধকতাও অনেকটাই শিথিল।

সম্ভাব্য গ্রাহকের দেয়া সব তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই অনেক ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। এভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন ছাড়াই ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করায় ব্যাংকগুলোয় খেলাপি গ্রাহকের তালিকা বড় হচ্ছে। তারপরও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রতি মাসে কার্ড ইস্যুর লক্ষ্য বেঁধে দেয়। নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন না হলে সংশ্লিষ্টদের পারিশ্রমিক কেটে রাখা হয়। ফলে যাচাই-বাছাই না করেই অনেক সময় কার্ড দেয়া হয়। ওসব কারণে কার্ডের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে জালিয়াতির ঝুঁকিও।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী গত বছরের নভেম্বওে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬১৯। ডিসেম্বরে ২২ হাজার ৭০৯টি বেড়ে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ২০ হাজার ৩২৮। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ওই মাসে ব্যাংকগুলো ১ লাখ ৭ হাজার ২০৩টি নতুন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে।

সব মিলিয়ে জানুয়ারি শেষে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লাখ ২৭ হাজার ৫৩১। ফেব্রুয়ারিতে ১৫ হাজার ৯৭৬টি নতুন কার্ডসহ মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৫০৭। সব মিলিয়ে গতবছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৮টি।

সূত্র আরো জানায়, এদেশে ১৯৯১ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড সেবা চালু করে তৎকালীন এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক। তারপর ১৯৯৭ সালে স্থানীয় মুদ্রায় এই সেবা চালু করে ব্যাংকটি। ১৯৯৭ সালের মার্চে ন্যাশনাল ব্যাংক ও জুলাইয়ে ভানিক বাংলাদেশ এই সেবা নিয়ে আসে। প্রাইম ব্যাংক সেবাটি চালু করে ১৯৯৯ ও ঢাকা ব্যাংক ২০০১ সালে। পর্যায়ক্রমে সব ব্যাংকই এই সেবা চালু করে।

ভিসা, মাস্টার কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেসসহ কয়েক ধরনের ক্রেডিট কার্ড সেবা চালু রয়েছে দেশে। কিন্তু ২০১২ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। একই ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালেও। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় সেবার চারজনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চলতি বছরও একাধিক ব্যাংকে কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

এই পরিস্থিতিতে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি বৈশ্বিকভাবেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বেগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই ওই তিন মাসে ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ইস্যু করেছে। ব্যাংকগুলোর সেবার আওতায় ওই সময়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৬৭টি নতুন ক্রেডিট কার্ড যোগ হয়েছে। তারমধ্যে শুধু জানুয়ারিতেই বেসরকারি ব্যাংকগুলো নতুন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৭৮টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮০১টি। তবে ওই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি।

ফেব্রুয়ারি শেষে ওসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৯৩০ ও ৮৯ হাজার ৭৭৬। কিন্তু ডিসেম্বও থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বাড়লেও সে হারে বাড়েনি ডেবিট কার্ডের সংখ্যা। ওই সময়ে ডেবিট কার্ড বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংকগুলোর সব ধরনের কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫ লাখ ৪৮ হাজার।

অন্যদিকে অস্বাভাবিক ক্রেডিট কার্ড ইস্যু প্রসঙ্গে বেসরকারি ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন- দেশে ক্রেডিট কার্ড সেবা চালু হয়েছে প্রায় দুই দশক আগে। এই সময়ে সেবাটির আওতায় দেয়া হয়েছে ৬ লাখের কিছু বেশি কার্ড। অথচ এক মাসেই (জানুয়ারি) এক লাখের বেশি নতুন কার্ড ইস্যু হয়েছে। যা স্বাভাবিক নয়।

তবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও কার্ডের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলোয় লক্ষ রাখা হলে ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যাও বেড়েছে। পুরনো ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি নতুনরা ক্রেডিট কার্ড সেবায় এগিয়ে আসছে। মূলত গ্রাহক পর্যায়ে ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোও এই সেবায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ব্যাংকগুলোর বিক্রয় প্রচারণার প্রতিফলন হতে পারে। সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে কোনো ধরনের ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই। বরং এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর কার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা
 

Wordbridge School
Link copied!