• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুতুপালংই বৃহত্তম আশ্রয় শিবির


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৬, ২০১৮, ০৯:৪৫ পিএম
কুতুপালংই বৃহত্তম আশ্রয় শিবির

ঢাকা : কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির বর্তমান বিশ্বের ‘বৃহত্তম আশ্রয় শিবির’ বলে দাবি করেছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম। তিনি জানিয়েছেন, ১৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ওই আশ্রয় শিবিরে বর্তমানে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এই অতিরিক্ত সচিব বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে কথা বলেন। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল অবধি বাংলাদেশে আসা ১০ লাখ ৩৮ হাজার রোহিঙ্গাকে ‘বায়োমেট্রিক’ নিবন্ধনের আওতায় এনেছে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। এর ফলে তারা বাংলাদেশের কোনো জায়গা থেকে পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র করতে পারবে না।
বৈঠকে দেওয়া তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আশ্রয় শিবির রয়েছে কেনিয়ায়। সেখানে সাড়ে তিন লাখের মতো শরণার্থী রয়েছে।’

বৈঠকে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। সেই সঙ্গে কোনো রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট না পায়, সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা জারির কথা বলেছে কমিটি। এর প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের তথ্য একটি নির্দিষ্ট সার্ভারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে তারা দেশের অন্য কোথাও গিয়ে পাসপোর্ট করার চেষ্টা করলে আঙুলের ছাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পরিচয় পাওয়া যায়।’

মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ১১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া বায়োমেট্রিক নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ও ত্রাণ তহবিল এবং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৬ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, আনসার, টাইগার আইটি ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের ৭৪টি ওয়ার্ক স্টেশনে এই কাজ চলছে। এর আগে গত ৩ জানুয়ারি উনচিপ্রাং কেন্দ্রের কাজ শেষ হয়। সেখানে ৭৯ হাজার ১৭৪ জনের নিবন্ধন করা হয়।

বর্তমানে যেসব কেন্দ্রে নিবন্ধনের কাজ চলছে সেগুলোর মধ্যে কুতুপালং-০১-এর ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪, কুতুপালং-০২-এর ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৩৪, থাইংখালী-০১-এর ১ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৬, থাইংখালী-০২-এর ৮৪ হাজার ২২৩, নোয়াপাড়ার ১ লাখ ২৬ হাজার ৫০৩ এবং বালুখালীর ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৫৮ জন ওইদিন পর্যন্ত নিবন্ধনের আওতায় এসেছিলেন।

এই হিসাব অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ কেন্দ্রের ১০ লাখ ২০ হাজার ৬৮২ জন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। যার মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭০৮ এবং নারী ৪ লাখ ৯২ হাজার ৯৭৪ জন। গত ২২ দিনে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা।

বৈঠকের আলোচনা শেষে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কক্সবাজারে পুলিশের একটি বিশেষ থানা স্থাপনের সুপারিশ করে কমিটি। এ ব্যাপারে কমিটির সদস্য ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) এমপি ফখরুল ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আর্মড পুলিশ সেখানে কাজ করছে। কিন্তু বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার সংখ্যা তো এখন ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের সুরক্ষার বিষয়টিও দেখতে হবে। এজন্য আমরা পুলিশের একটি আলাদা থানা স্থাপন করার সুপারিশ করেছি।’ তিনি জানান, কমিটি কুতুপালং শিবিরসহ কক্সবাজারে অবস্থিত সকল আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রাচীর তৈরির কাজ দ্রুত করার তাগাদা দিয়েছে।

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কক্সবাজারের বনাঞ্চল যাতে হুমকির মুখে না পড়ে সে লক্ষ্যে রোহিঙ্গাদের রান্নার জন্য দ্রুততম সময়ে জ্বালানির ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে কমিটি। এর আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিও একাধিকবার একই ধরনের সুপারিশ করেছে। বন অধিদফতরের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে এই কমিটি জেনেছে, গত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গারা কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ৪ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৬০ একর বনভ‚মি ধ্বংস করেছে। ফলে প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকার বনজ সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গতকালের বৈঠকে আরো অংশ নেন কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মো. ফরিদুল হক খান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফখরুল ইমাম ও কামরুন নাহার চৌধুরী। এ সময় জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। রাখাইনে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার আগে তাদের ফেরত পাঠানোয় আপত্তি জানিয়ে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!