• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহাজাগরণের প্রস্তুতি বিএনপির!


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১১, ২০১৭, ০৪:২৩ পিএম
মহাজাগরণের প্রস্তুতি বিএনপির!

ঢাকা: বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত মাসে লন্ডন থেকে ফিরে আসার দিন থেকে দলটির রাজনীতিতে এ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। দুটি বড় ধরনের শোডাউনের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা এখন বেশ উদ্দীপ্ত।

খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরে যে জনস্রোত দেখা গেছে, তাতে দলটির বিশাল সমর্থকগোষ্ঠীও আশাবাদী হয়ে উঠেছে। শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে পাওয়া যাচ্ছে নতুন নতুন বার্তা। কূটনৈতিক সংযোগ বাড়িয়ে তাদের মাধ্যমে ফোকাস করা হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে।

এদিকে, বিএনপি-প্রধান প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দী দিচ্ছেন। ওই জবানবন্দিতে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বদলে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রসঙ্গও তুলে আনছেন তিনি। ১৯ মাস পর রোববার (১২ নভেম্বর) তিনি আসছেন রাজনৈতিক সমাবেশে।

দলটির নেতারা বলেছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া এই সমাবেশ থেকে আবারো সমঝোতার আহবান জানাবেন। সব পরিস্থিতির জন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত থাকার কথা বলবেন তিনি।

লন্ডন থেকে প্রায় তিন মাস পর গত মাসের শেষ দিকে দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দলীয় প্রধান দেশে ফিরে বিশ্রাম না নিয়েই তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো মোকাবেলায় আইনি লড়াই যেমন চালিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি রাজনৈতিক তৎপরতাও শুরু করেছেন সমানতালে।

গত ২২ দিনে বিএনপিকেও ভিন্ন চেহারায় দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের স্পেস পেয়ে দলটি মাঠে নেমেছে। নেত্রীর দেশে ফেরার দিন বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এর এক সপ্তাহ পর কক্সবাজারমুখী খালেদা জিয়ার চার দিনের সফরে পথে পথে জনস্রোত নেতাকর্মীদের মধ্যে জাগরণ তৈরি করে।

খালেদা জিয়া যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই নেতাকর্মীরা দলবেঁধে সমবেত হচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে তার আদালতে হাজিরা দেয়ার পথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। পুলিশের কড়াকড়িও আমলে নিচ্ছেন না তারা।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরের মধ্য দিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর মিলে গেছে। সরকার ভেবেছিল বিএনপির জনসমর্থন নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু তার যাত্রাপথে বিপুল মানুষের উপস্থিতি জানান দিয়েছে, বিএনপি এখনো গণমানুষের সবচেয়ে প্রিয় রাজনৈতিক দল।

এখন আরো একটি বড় সমাবেশের অপেক্ষায় বিএনপি। ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রোববার (১২ নভেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে দলটি। নেতারা বলছেন, এই সমাবেশে জনতার ঢল নামবে। আর এর মধ্য দিয়ে ১৯ মাস পর ঢাকায় রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া।

এর আগে ২০১৬ সালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এবং একই বছরের ৫ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। খালেদা জিয়ার উপস্থিতি সমাবেশকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেবে বলে দলের নেতারা বলছেন।

২০১৫ সালের পর থেকে বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের তেমন কোনো স্পেসই পায়নি। প্রতিটি সভা-সমাবেশ ছিল বিধিনিষেধে মোড়া। এমনকি ইনডোর প্রোগ্রামেও বাধা এসেছে। আগামীকালের সমাবেশই হতে যাচ্ছে গত দুই বছরের মধ্যে প্রকাশ্য জনসমাবেশ।

বিএনপির নির্বাচনমুখী রাজনীতিতেও ভিন্ন মাত্রা লক্ষ করা যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে এমন আশা করছেন নেতারা। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া কোনো নির্বাচন সম্ভব নয় বলে তারা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নেতাদের কথাবার্তায়ও পরিবর্তনের ঈঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দলের সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, বিএনপি আগামী দিনে তাদের কী লক্ষ্য তা স্থির করে ফেলেছে। সময় যত এগোবে, তা পর্যায়ক্রমে ফুটে উঠবে।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে সম্প্রতি এক সমাবেশে দুটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা বলছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঐক্য। নেতাকর্মীদের আগামী দিনে খালেদা জিয়া নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে বলেছেন তারেক রহমান, দলের অন্য কোনো নেতার নয়। খুব শিগগিরই সুসময় আসবে বলে নেতাকর্মীদের উদ্দীপ্তও করেছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশিদের এই প্রত্যাশা কেবল বিএনপির জন্য পজিটিভই নয়, সরকার যাতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো বিএনপিবিহীন একতরফা নির্বাচনে আর না যায়, পরোভাবে সরকারের প্রতিও এটি বিশেষ বার্তা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!