• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ার কেলেঙ্কারি: খালাস পেল আরো ২


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৩, ২০১৭, ০৮:৩৫ পিএম
শেয়ার কেলেঙ্কারি: খালাস পেল আরো ২

র‌্যাংগস গ্রুপের রউফ চৌধুরী ও এইচআরসি গ্রুপের সাঈদ হোসেন চৌধুরী

ঢাকা: ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযুক্ত র‌্যাংগস গ্রুপের কর্ণধার এম এ রউফ চৌধুরী ও এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরীকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। 

রোববার (২৩ এপ্রিল) বিচারক আকবর আলী শেখ এ রায় ঘোষণা করেন। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ২৪ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বি্এসইসি) প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান তা নিশ্চিত করেছেন।

১৯৯৬ সালে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি হয়। এতে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী। সবকিছু হারিয়ে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। এঘটনায় দায়ীদের শাস্তি দিতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই কমিটির সুপারিশের আলোকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের তৎকালীন চেয়ারম্যান রউফ ও পরিচালক সাঈদ ছাড়াও আনু জায়গীরদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিএসইসি। পরে পুঁজিবাজারের মামলা নিস্পত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে ওই মামলাটি এ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। রোববারের রায়ের বিষয়ে আইনজীবী মাসুদ বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ মামলায় মশিউর ও আনুর বিচারকাজ আগামী ২ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকায় বাকি দুজনের বিষয়ে রায় হয়েছে। 

বাকি দুইজনের বিচারকাজে দুই দফায় ৬ মাস করে এক বছরের স্থগিতাদেশ দেয় উচ্চ আদালত। প্রথমবার ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল এ বিচারকাজে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে গত ২৯ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। যা শেষ হবে আগামী ২ মে। তখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে বিচার কাজ বন্ধ থাকবে।

এ মামলায় সর্বশেষ ০ এপ্রিল বাদি ও বিবাদি উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ওইদিন আসামীপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন বলেছিলেন, বিএসইসি কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত করালেও সে সংক্রান্ত কোন রিপোর্ট জমা দেয়নি। রিপোর্ট নাকি হারিয়ে গেছে। কিন্তু কিভাবে এ রিপোর্ট হারিয়ে যায়। একইসঙ্গে অভিযুক্তরা শেয়ার কিনে লাভবান হয়েছে এবং কোন বিনিয়োগকারী তাদের দ্ধারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ এমন কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। শুধুমাত্র বিএসইসির দুই কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ও রুহুল কাদেরের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এ মামলা দায়ের করা হয়। যে তদন্ত করা হয়েছিল তড়িঘড়ি করে। 

অপরদিকে আইনজীবী মাসুদ রানা খান ও আব্দুল্লাহ এম রফিকুল ইসলাম রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তিতর্কে মাসুদ রানা বলেন, যোগসাজশের মাধ্যমে অভিযুক্তরা শেয়ারে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে। এ সময় এক নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। 

আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এ সব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করত। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারার ই(২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করা হয়। 

এর আগে এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানদের বিরুদ্ধে আলোচিত দুই মামলা বাতিল করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!