• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বরযাত্রীসহ নৌকাডুবি

বাবার দাড়ি ও জামা ধরে বেঁচে ফিরলেন দেড় বছরের শিশু


পটুয়াখালী প্রতিনিধি এপ্রিল ৩০, ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম
বাবার দাড়ি ও জামা ধরে বেঁচে ফিরলেন দেড় বছরের শিশু

পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছেন দেড় বছর বয়সী রাতুল। বাবা মনিরুল হাওলাদার ক্লান্ত হয়ে সন্তানকে মাঝ নদীতে ছেড়ে দিলেও তার দাড়ি ও জামা ধরেই বেঁচে ফিরেছে সে।

রনগোপালদী ইউনিয়নের মধ্য গুলি আউলিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা মনিরুল হাওলাদার। পেশায় জেলে হওয়ায় শুক্রবার বড় ছেলের বৌ নিয়ে নিজের মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে চর শাহজালাল থেকে ফিরছিলেন। তবে হঠাৎ মাঝ নদীতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় ঝড়ে নৌকায় থাকা ১৪ যাত্রীসহ ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ১৪ যাত্রীর মধ্যে ৯ জন উদ্ধার হলেও তখন একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে মনিরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো বেড়ার ভাঙ্গাচুরা একটি বাড়িতে বসবাস করেন মনিরুল হাওলাদার। এদিকে পুরো বাড়িতে শোকের মাতম বইছে। সবাই চুপচাপ বসে মনিরুল হাওলাদার ও তার সন্তানকে দেখছে। বাবার কোলে দেড় বছর বয়সী শিশু রাতুল বসে আছে আর আগত মানুষদের দিকে ছোট ছোট দুটি চোখ দিয়ে দেখছে।

মনিরুল হাওলাদার-এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চর শাহজালাল থেকে জুমার নামাজের পর আমরা রওনা দেই। আমরা ছোট নদী পার হয়ে বড় নদীর মাঝখানে পৌছানোর পর হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে আকাশে অনেক মেঘ করছে, বৃষ্টি পড়ে, অনেক বাতাস বইতে ছিল। নৌকাটা চারদিকে ঘুরতে ছিল এমন সময় নদীর তুফানে ট্রলারের দুই পাশ দিয়ে পানি উঠতে থাকে। আস্তে আস্তে ট্রলারটি পানিতে ভরে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকি নদীর অনেক দূরে একটি মাছ ধরার ট্রলার দেখা যায়। আমরা সবাই তখন চিল্লাচিল্লি শুরু করে সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকি কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনতে পারে না। তখনও ট্রলারটি পুরোপুরি ডুবে নাই। একপর্যায়ে ট্রলারটি ডুবে গেলে আমরা ভাইসা উঠি। একেক জন একেক দিকে ভেসে যায়। অনেকক্ষণ সাঁতার কাঁটার পর আমি ক্লান্ত হয়ে যাই। আমার ছেলের দাদি শাশুড়ি আমাকে ধরতে চাইলে আমি ডুব দিয়ে সরে যাই। উঠে দেখি আমার স্ত্রী রাতুল তুলে দিয়ে বলে ‘বাচ্চাটা বাচাও’। আমি বাম হাত দিয়ে তাকে হাত ধরি। একটু পর দেখি আমার স্ত্রী পাশে নেই। সাঁতরিয়ে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমি বাচ্চার হাত ছেড়ে দেই। দুই হাত দিয়ে সাঁতার কাটতে থাকি। 

তিনি বলেন, এরপরে আমার ট্রলারের চালি দেখতে পাই, সাঁতার কেটে চালির কাছে গিয়ে দু তিনটে তক্তা একসাথে করে আমি যখন বাঁচার জন্য তক্তার উপরে উঠি। তখন দেখি রাতুল এক হাত দিয়ে আমার দাড়ি ও আরেক হাত দিয়ে জামার কলার ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর একটা নৌকা আইয়া (আইসা) আমারে ও আমার বাচ্চারে উদ্ধার করে। একে একে আমাগো উদ্ধার করছে তারা।

উল্লেখ্য, নৌকাডুবির ঘটনায় নিউজ লেখা পর্যন্ত সর্বমোট ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো ১জন শিশু নিখোঁজ রয়েছেন।

পটুয়াখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আহম্মেদ জানান, পটুয়াখালীর ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের সঙ্গে বরিশাল থেকে আসা ডুবুরি দলের সদস্যরাও কাজ করছে। রোববার (৩০ এপ্রিল) সকালে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পরে দুপুর ১২ টা সময় আরও একজন শিশু কে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন।

দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাফিসা নাজ নীরা বলেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। নিখোঁজদের উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযান চলবে।

এছাড়াও নিহতদের পরিবারকে জন প্রতি ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/আরএইচ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!