• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

সিলিন্ডার আতঙ্কে দিন কাটছে শ্রমিক কলোনির ৬০০ ভাড়াটিয়ার


এমএস রুকুন, গাজীপুর  মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৩:৩২ পিএম
সিলিন্ডার আতঙ্কে দিন কাটছে শ্রমিক কলোনির ৬০০ ভাড়াটিয়ার

গাজীপুর: গাজীপুরের কালিয়াকৈরের তেলির চালা টপস্টার এলাকায় শ্রমিক কলোনিতে নিরবে-নিভৃতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ আতঙ্কে দিন কাটছে ৬০০ ঘরের প্রায় ২ হাজার ভাড়াটিয়া বাসিন্দাদের। 

শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে, তেলির চালা এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার (১৩ মার্চ) তেলিরচালার শফিকের শ্রমিক কলোনিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৩৬ জন দগ্ধ হয়। এর মধ্যে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে একে-একে ১৬ জন মারা গেছে। এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর তাদের কাছে ভয়ানক এক আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এখন তেলির চালা এলাকার সমস্ত শ্রমিক কলোনিগুলোতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ আতঙ্কে দিবারাত্রি পার করছেন।  

এদিকে ভয়াবহ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ দুর্ঘটনাস্থল শফিক কলোনিতে গিয়ে দেখা গেছে, কলোনিতে সারি-সারি টিন সেটের ৬০০ ঘর। একেকটা ঘর ১০ ফুট বাই ১০ ফুট। ছোট্ট আকারের এই ঘর গুলোতেই বসবাস করছেন একেকটি শ্রমিক পরিবার। কারো পরিবারে রয়েছে ২/৩ সদস্য আবার কারো পরিবারে রয়েছে ৪/৫ সদস্য। এসব ঘরের ভাড়াটিয়ারা কেউ কারখানার বা গোডাউনের শ্রমিক। কেউ গার্মেন্টস কর্মী। কেউ পরিবহনের শ্রমিক। কেউবা আবার বিভিন্ন পেশার দিন মজুরির শ্রমিক। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কিছুটা সংসারের খরচ কমাতে। এজন্য তারা কম মূল্যে এসব কলোনির বাসাতে ভাড়া থাকেন। তবে এখানে সব চেয়ে বড় ভয়ানক এক দৃশ্য দেখা গেলো, এসব ঘরের ভাড়াটিয়াদের রান্না করার জন্য আলাদা কোথাও যায়গা নেই। প্রতিটি পরিবার যার ঘরের মধ্যে ছোট্ট মেঝের এক কোণায় সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল রেখে রান্না করছে। যা মোটেও নিরাপদ না। যে কোন সময় অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। এক কথায় একটা অনিরাপদ ব্যবস্থার মধ্যে রান্নার কাজ করা হচ্ছে। 

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় এম এম গার্মেন্টেসে কাজ করেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, পাশের বাসায় গ্যাসের শব্দ শুনে আমার মেয়েটা দেখতে গিয়েছিল। তখন হঠাৎ আগুন ধরে যায় আর আমার মেয়েটার পা পুড়ে যায়। পোড়া পা নিয়ে মেয়েটা অনেক কষ্ট করছে। তিনি আরও বলেন, এছাড়া এখন আমাদের বড় আতঙ্ক রান্নার জন্য কলোনিতে আলাদা কোন যায়গা নাই। তাই বাধ্য হয়েই ঘরের মধ্যেই সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল রেখে রান্না করতে হয়। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, আমি যে উপার্জন করি তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্ট হচ্ছে। তাই চাইলেও বাসা পরিবর্তন করতে পারছিনা। আমির হোসেন আরও জানায়, এখানে শ্রমিক কলোনি গুলোতে প্রায় ২ হাজার লোকজনের বসবাস। তারা সবাই আতঙ্কে ও অনিরাপদের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

এই কলোনিতে সব চেয়ে বড় একটি মৃত্যুর ঘটনা বাসিন্দাদের পিড়া দেয়। এটা হলো, স্বামী মহিউদ্দিন ও নার্গিস দম্পতির মৃত্যু। তারা মৃত্যুকালে রেখে গেছেন সাড়ে তিন থেকে ৪ বছরের বয়স একটি শিশু সন্তান। এই সন্তান দেখবাল ও তার ফিটার দুধ খাওয়ানোর যোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছে তার স্বজনরা। একটা দুধের পেকেট কিনতে অনেক টাকা লাগছে। কেউ যদি সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে না দেয় তাহলে তাকে পালন পালন করা কঠিন হবে জানিয়েছেন নিহত দম্পত্তির স্বজনরা। 

ফরিদা (ছদ্মনাম) নামে কলোনির এক ভাড়াটিয়া বলেন, ‘স্যার, যারা মারা গেছে তাগরে সংসার শেষ। কিন্তু আমরা যারা বাইচা আছি। তারা ঘরের মধ্যে বোমা নিয়ে আছি। কখন জানি সেই বোমা দুর্ঘটনা ঘটায়। তিনি বলেন, বুঝছেন স্যার এই কলোনির সব ঘরেই সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল আছে। সবাই ঘরের মধ্যেই রান্না করে।’

এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সিলিন্ডারে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে জেলা প্রশাসক থেকে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

এমএস

Wordbridge School
Link copied!