• ঢাকা
  • রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চাল নেই ঘরে, এনজিওর কিস্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার জেলেদের, সহসাই মিলছে না বরাদ্দের চাল


তাপস মাহমুদ, বরগুনা  এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ০৯:২৩ পিএম
চাল নেই ঘরে, এনজিওর কিস্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার জেলেদের, সহসাই মিলছে না বরাদ্দের চাল

বরগুনা: মাছের বংশবিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য চলছে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের জলসীমায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাস করে ৬৫ দিনের বদলে ৫৮ দিনের নতুন সময় বেধে দেয় সরকার। 

সাগরে বিশাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ শেষে নিষেধাজ্ঞার সময় অভাবের সঙ্গে লড়াই এইতো তাদের জীবন। সরকারের নিষেধাজ্ঞার শুরুর সাতদিন পেরিয়ে গেলেও সরকারি বরাদ্দের চাল পায়নি বরগুনার সমুদ্রগামী ২৭ হাজার নিবন্ধিত জেলে। 

জেলা প্রশাসন মৎস বিভাগের দাবি এবছর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমিয়ে ৫৮ দিন করায় বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবছরই সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় দুই ধাপে ৮৬ কেজি চাল বিতরণ করা হয়। 

সমুদ্রে মাছের উৎপাদন বাড়াতে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতো। এবার উপকূলীয় জেলেদের দাবির প্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে সময় সমন্বয় করে এই নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।  বরগুনায় জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩৭ হাজার, যাদের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার ২শত। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঘাটে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে শত শত সমুদ্রগামী মাছ ধরা ট্রলার। এসময় জেলেদের মধ্যে কেউ জাল বুনছেন কেউবা ঘাটে অলস সময় পার করছেন। কেউ আবার ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত। কাজ না থাকায় অনেক জেলেই ফিরে গেছেন বাড়ি। 

নিষেধাজ্ঞায় সাগরে যেতে না পারায় একদিকে সংসারের চিন্তা অন্যদিকে এনজিওর কিস্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন জেলেরা। এমন বাস্তবতায় জেলেদের জন্য চাল দেওয়ার কথা থাকলেও তা পৌঁছায়নি সাতদিনেও। এতে অভাব অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে বেকার জেলেদের। ফলে খাদ্যসংকটে পড়েছে তাদের পরিবারগুলো।

চাল না পেয়ে আক্ষেপ করে ষাটোর্ধ্ব জেলে মোশাররফ বলেন, আমরাতো সরকারি আইন মাইন্যা চলি। সরকার অবরোধ দেছে তাই মোরা সাগরে যাইনা। এহন যদি সরকার আমাগো খাওয়াইয়া না রাহে তাইলে মোরা কি খামু! কই যামু!" 

সাগরে ডাকাত আতঙ্কের পাশাপাশি অবরোধের আগে মাছ না পেয়ে ফিরে আসা জেলে শহিদুল আলম বলেন,  এ বছর সাগরে মাছ তেমন পাইনি। তারমধ্যে সাগরে ডাকাতের আতঙ্কে ঠিকভাবে মাছ ধরতে পারিনি। এখন আবার  অবরোধ শুরু হয়েছে কিন্তু বরাদ্দের চাল  পাইনি। সরকারের কাছে আবেদন জানাই যাতে দ্রুত আমাদের বরাদ্দের চাল দেয়া হয়। 

এদিকে চাল না পাওয়ায় অভাব অনটন থাকায় পারিবারিক কলহ বাড়ছে দাবি করে বরগুনার পোটকাখালী এলাকার মোশারেফ খান বলেন, আজ অবরোধের ৭ দিন হওয়ার পরও চাল পাইনি৷ আমাদের কিস্তি আছে তাই আমার মত প্রায় জেলের বাড়িতে পরিবারের সাথে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। 

জেলেদের চাল প্রকৃত জেলেরা পায় না বলে অভিযোগ করে জহিরুল নামের এক সমুদ্রগামী এক জেলে বলেন, আমাদের একবার চাল দিলে দ্বিতীয়বার আর দেয় না। জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে আমাদের জন্য বরাদ্দের চাল পায় রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে অন্যান্য পেশার মানুষ। অথচ সাগরে মাছ ধরি আমরা। এসময়ে দেশেও তেমন কাজ থাকেনা। 

প্রতিবারের মতো এবারও চাল পায়নি বলে ফিরোজ আকন নামে এক জেলে বলেন, এ বছর ভারতের সাথে মিল রেখে অবরোধ দেওয়ায় আমরা খুশি হলেও প্রতিবারের মতো এবারও আমরা চাল পাইনি। অথচ এই দুই মাস আমাদের হাতে কোনো কাজ থাকবে না। এ সময় পরিবার নিয়ে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। 

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়নে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। এ বছরের বরাদ্দ এখনও আমরা পাইনি। তবে যেহেতু এবার সময় কমিয়ে আনা হয়েছে সে হারেই খুব দ্রুত জেলেদের মাঝে তাদের প্রণোদনের চাল আমরা পৌঁছে দেবো।

এদিকে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, মৎস সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সাগরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর আগে ঝাঁটকা সংরক্ষণ নিষেধাজ্ঞার সময়কালীন প্রণোদনার চাল বিতরণ করা হয়ে গেছে। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্নির্ধারণ হওয়ায় সহায়তার চাল বরাদ্দ পেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ভিজিএফ এর চাল আসা মাত্রই জেলেদের মাঝে দ্রুত বিতরণ করা হবে। এছাড়াও জেলেদের আরও কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়েও সরকার চেষ্টা করছে।

এআর

Wordbridge School
Link copied!