দিনাজপুর: নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজিউল ইসলাম (৩৩)।
নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এখন তার মত প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করছেন তিনি। তার সফলতা এখন এলাকার দৃষ্টান্ত। রাজিউল ইসলাম উপজেলার ২নং বিনোদনগর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল নারায়নপুর গ্রামের মুনছুর আলী ছেলে।
কয়েক বছর আগে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়ে তার কোমর থেকে নিচের অংশ বিকল হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসা করার পরেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে পারেন নি তিনি।
চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছে তিনি আর সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবেন না। নিথর শরীর নিয়েই তিনি শুরু করেন জীবন যুদ্ধ। গড়ে তোলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি এখন আর পরিবারের বোঝা নয়। বরং তার নিজের আয়ে এখন তিনি তার নিজের ও বাবা মার ভোরন পোষণ করছেন।
তার মত প্রতিবন্ধীরা যাতে পরিবারের বোঝা না হয়। সমাজের অবহেলিত না হয় সেই লক্ষ্যে তিনি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি সামাজিক সংগঠন। ঐ সংগঠনের সদস্যদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ স্বাবলম্বী করতে
নিয়েছেন নানা উদ্যোগ।
রাজিউল ইসলাম বলেন, এইচ এস সি পাস করে তিনি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদে টেকনিশিয়ান পদে চাকরি পান। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তিনি উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারে বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তার চোখে মুখে জল জল করছিল।
কিন্তু হঠাৎ ২০২১ সালের ৮ই জুন আম পাড়তে গিয়ে গাছের উঁচু ডাল থেকে নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। দীর্ঘদিন
চিকিৎসা গ্রহণের পর চিকিৎসকরা জানান সে আর সুস্থ হতে পারবেনা। তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। পড়ে যান হতাশায়। অন্যের সাহায্য ছাড়া সে চলতে পারেনা তার পরেও তিনি দৃঢ় মনবল ও বৃদ্ধ বাবার সহায়তায় তার ডিজিটাল সেন্টারে গড়ে তোলেন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
হুইল চেয়ারে বসেই প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কম্পিউটার কম্পোজ, অলনাইনের যাবতীয় কাজসহ কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট নানা কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিক মানুষের মতই তিনি হুইল চেয়ারে বসেই দিনভর করেন পরিশ্রম। এখন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কর্মসংস্থান ৩/৪ জন বেকার যুবকের। নিজের মত উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রতিবন্ধী যুবকদের চিকিৎসায় সহায়তা, কর্মমুখী করে গড়ে তোলায় তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ফতে বলেন, রাজিউল ইসলামের দুর্ঘটনার পর অনেকেই বলেছিল ছেলেটির ভবিষ্যৎ কি হবে। কিন্তু রাজিউল ইসলাম এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। বিভিন্ন সকল প্রকার বাধা অতিক্রম করে এখন তিনি সফল। স্বাভাবিক জীবনের অনেকের চেয়ে তিনি এখন ভাল আছেন।
পাশাপাশি তার মত প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করতে গড়ে তুলেছেন একটি সংগঠন। সেই সংগঠনের মাধ্যমে কর্মমুখী প্রশিক্ষণসহ সচ্ছল প্রতিবন্ধীদের অর্থায়নে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের মাঝে দিচ্ছেন নানা সহযোগিতা।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শুভ্র প্রকাশ চক্রবর্তী বলেন, রাজিউলের শারীরিক সক্ষমতা না থাকলেও তার দৃঢ় মনবল কঠোর পরিশ্রম তার সফলতা এনে দিয়েছে। তিনি এখন সমাজের দৃষ্টান্ত। উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে রাজিউল ইসলামকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামীতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এআর







































