২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষাপটে ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহারের বিরোধিতা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি দাবি করেছেন, ‘শাপলা চত্বরে কোনো গণহত্যা হয়নি। আর যদি হতেও পারে, তা হলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতেন না।’
সোমবার (২৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী আমির হোসেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই শুনানি গ্রহণ করে। যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, শাপলা চত্বরে সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষাপট ছিল সহিংস। হেফাজতের কর্মীরা সেদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘তাণ্ডব’ চালিয়েছিল, সড়কে গাছ কেটে ফেলে, বাড়িঘরে হামলা ও গাড়িতে আগুন দেয়।
তিনি বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈধ উপায়ে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করেছে। এটিকে গণহত্যা বলার কোনো ভিত্তি নেই।’
তবে ট্রাইব্যুনাল এ সময় পাল্টা প্রশ্ন তোলে, ‘তবে কি এজন্য বাচ্চাদের মেরে ফেলতে হবে?’
জবাবে আমির হোসেন বলেন, ‘আমি তো বলছি না যে তাদের মারা হয়েছে। তবে যারা এতিম শিশুদের এনে রাজপথে বসিয়েছে, আমি তাদের ধিক্কার জানাই। ছোট ছোট ছেলেরা কী বুঝবে আন্দোলনের কথা?’
বিচারপতিরা তাকে স্মরণ করিয়ে দেন, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় ৬১ জন নিহত হন। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে শাপলা চত্বরে ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তবে এসব প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের তথ্য বাইবেলের মতো চূড়ান্ত প্রমাণ নয়। আদালত চাইলে তা রেকর্ডে নিতে পারেন, কিন্তু সেগুলো যাচাই করে দেখার দরকার আছে।’
তিনি যুক্তি তুলে ধরেন, “ধরে নিলাম কিছু মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু কোনো অভিভাবক কি তখন এসে বলেছেন, ‘আমার সন্তান নিখোঁজ?’ কোথাও এমন কোনো জবানবন্দি বা অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে আসেনি।”
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম রাজধানীতে ‘তৌহিদী জনতার’ সমাবেশ করে। রাতভর অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা এ ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির অভিযোগ তোলে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ওই সময়ের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারকাজ চলছে।
এম







































