• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চাল-তেলের দামে দিশেহারা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৬, ২০২১, ০১:১৩ পিএম
চাল-তেলের দামে দিশেহারা

ঢাকা : কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় দুই পণ্য চাল ও তেলের দামের। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এখন আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সাথে সমন্বয় করলে তেলের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাই আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে এখনই তেলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে চাল-তেলের পাশাপাশি ডাল-আটার বাড়তি দামও ভাঁজ ফেলছে সাধারণ মানুষের কপালে।

করোনাকালে সাধারণ মানুষের অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়ে। অনেকের আয় কমে যায়। আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে অনেককেই পরিবর্তন আনতে হয়েছে খাদ্যাভ্যাসে। এতে চাল-ডাল-তেলে-আলুর মতো পণ্যের ওপর সাধারণ মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। কিন্তু এসব পণ্যের লাগামহীন দাম বাড়ায় দিশেহারা অনেকের।

শুক্রবার (৫ মার্চ) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি লিটার রূপচাঁদা তেল ১৩৫-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া তীর মার্কা তেল ১৩২ টাকা, চাঁন তেল ১৩০ টাকা ও পুষ্টি তেল ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু বোতলজাত তেলই নয়, দাম বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলেরও।

শুক্রবার খোলা তেল বিক্রি হয়েছে ১১২ থেকে ১১৫ টাকায়। কোথাও খুচরা বিক্রেতারা ১২০-১২৫ টাকাতেও বিক্রি করছেন খোলা তেল। আবার পাঁচ লিটারের বোতলের ক্ষেত্রে রূপচাঁদার তেলের ৬৮৫, ফ্রেশ, তীর ও পুষ্টির ৬৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

এদিকে তেলের মূল্য বাড়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ট্রাক সেলের মাধ্যমে ৯০ টাকা কেজি দরে ভোজ্য তেল বিক্রি করলেও অনেকেই কিনতে পারছেন না। কারণ ডিলাররা তেল কিনতে ১০ কেজি আমদানিকৃত নিন্মমানের পেঁয়াজ কেনার বাধ্যবাধকতা রেখেছেন।

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে গত কয়েক মাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দফায় দফায় বৈঠক আর চিঠি চালাচালি করলেও বাজারে কোনো প্রভাব পড়ছে না। আবার ভোজ্য তেলের বর্তমান কর কাঠামোর কারণেও তেলের মূল্য বাড়ছে। বর্তমান কাঠামোয় বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম যত বাড়ে, ভ্যাটের পরিমাণও তত বাড়তে থাকে। যার প্রভাব পড়ছে ক্রেতা পর্যায়ে।

জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ভোজ্য তেলের ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর এক স্তরের বদলে তিন স্তরে আরোপ করা হয়। এতে বর্তমানে এক লিটার তেলে সরকার করবাবদ পাচ্ছে প্রায় ২৫ টাকা।

তেলের করকাঠামো নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে চিঠি চালাচালি করছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। উপরোন্ত বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব এখনো বাংলাদেশে পড়েনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।

গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এ-সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন দেয় বিটিটিসি।

এতে বলা হয়, গত ৭ জুলাই বিশ্ববাজারে এক টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭৪৩ ডলার, যা গত ফেব্রুয়ারিতে ১১৫০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ দরে সয়াবিন তেল দেশের বাজারে ঢুকলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দাঁড়াবে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। ফলে আরো বাড়তি দামে তেল কিনতে হতে পারে ক্রেতাদের।

এদিকে বাজারে সব ধরনের চালের দামও কেজিতে ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, প্রতি কেজি পাইজাম ৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬৮ টাকা নাজিরশাইল চাল ৬৮ টাকা, কাটারিভোগ ৯০ টাকা, চিনিগুঁড়া পোলাও চাল ৯৫ টাকা, ও জিরা নাজির ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুর ডাল ১০০ টাকা ও ক্যাঙ্গারু মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।

শুক্রবার (৫ মার্চ) রাজধানীর বাজারে পাকিস্তানি কক মুরগি প্রতি পিস ১৭০ টাকা ও ফার্মের মুরগি কেজি প্রতি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৬০ থেকে ৬১০ এবং খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়। প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০-৫০ টাকা, রসুন ১১০ টাকা ও আদা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চাষের রুই  মাছ প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ টাকা, পুঁটি ৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৫০ টাকা, শোল মাছ ২০০-৪০০ টাকা, আকারভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০০ টাকায়। মৃগেল মাছ ১৭০-১৮০ টাকা, আকারভেদে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, সরপুঁটি মাছ ১৫০-১৭০ টাকা, বোয়াল মাছ ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত কয়েক মাস ধরেই চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। এ জন্য মিল মালিক আর আড়তদারদের কারসাজিকে দায়ী করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে খুব বেশি অ্যাকশন নেওয়া যায় না। বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে চাল আমদানি করে। চাল আমদানির কথা শুনে বাজারে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও তা কমেনি।

এ প্রসঙ্গে মিরপুরের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, ভারত থেকে যে চাল আমদানি করা হয়েছে, তা নিম্ন মানের হওয়ায় বাজারে দামের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়েনি।

চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেন, কিছু কিছু অটো-রাইস মিল বিশালাকার হওয়ার কারণে আইন মেনেই ধান ও চাল উদ্বৃত্ত রাখতে সক্ষম। সেখানে তাদের দোষারোপের জায়গা নেই। এ ক্ষেত্রে হয় সরকারকে মজুত আইন বাতিল করতে হবে নাহলে সংস্কার করতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!