• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ব্যারেলপ্রতি দাম এখন ৬৮ ডলার

কমবে জ্বালানি তেলের দাম!


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৯, ২০২১, ১২:৩৪ পিএম
কমবে জ্বালানি তেলের দাম!

ঢাকা : প্রতিবেশী দেশে পাচার হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গত ৪ নভেম্বর দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়।

এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার, যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবহন সেক্টর থেকে শুরু করে দেশের প্রায় প্রতিটি খাতে। তবে  দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর কয়েকদিন পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী হতে শুরু করে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় দরপতন হয় শনিবার। একদিনের ব্যবধানে দাম ব্যারেল প্রতি ১০ ডলার ২২ সেন্ট বা ১৩ শতাংশের বেশি কমে ৬৮ ডলারে নেমে এসেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিলের পর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সবচেয়ে বড় দরপতন এটি।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসায় বাংলাদেশেও কমানোর বিষয়ে আভাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। দাম কমছে। তবে এই কমার প্রভাব এখনো বাজারে পড়েনি। যদি পড়ে তাহলে আমরাও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করব। আমরা যদি কেনার সময় কম দামে পাই তাহলে অবশ্যই কমাব।’

শনিবার প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেল ৬৮ ডলার ১৭ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। যা আগের দিনের তুলনায় ১০ ডলার ২২ সেন্ট বা ১৩ দশমিক ০৪ শতাংশ কম।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার পরই হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের এই বড় দরপতন হয়েছে। রয়টার্সের তথ্য বলছে, কোভিড-১৯-এর এই নতুন ধরনের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরো কমে যেতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার এই নতুন ধরনের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে সংকট দেখা দিতে পারে। কমে যেতে পারে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তার ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদাও কমে যেতে পারে। আর এই ভয়েই তেলের দামে বড় পতন হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ওমিক্রন’ নামে করোনা ভাইরাসের নতুন যে ধরন শনাক্ত করেছে তা এখন উদ্বেগের কারণ। সেই উদ্বেগ থেকেই প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের মূল্য এক দিনের ব্যবধানে ১৩ শতাংশের বেশি কমেছে। এর আগে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ও ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম গত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম।

শনিবার বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয়েছে ৭৩ ডলার ৮১ সেন্টে, যা আগের দিনের চেয়ে ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ কম।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।

গত ২৭ অক্টোবর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে ৮৫ দশমিক ০৭ ডলারে ওঠে। এরপর থেকেই তা কমতে থাকে। ৮ নভেম্বর এর দর ছিল ৮২ দশমিক ৫ ডলার। এক মাস আগে ১৬ অক্টোবর দাম ছিল ৮০ ডলার। আর এক বছর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার।

প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) গত জুলাইয়ের শুরুতে এক পূর্বাভাসে বলেছিল, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ আবার বাড়তে শুরু করায় বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা আগামী বছরের শেষের দিকে আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।

আইইএ’র মতে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা মোটামুটি বাড়বে। তবে আগামী বছর জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা বেড়ে ১০ কোটি ৬ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ কোম্পানি ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাক্সও মাস তিনেক আগে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, কোভিড-১৯-এর কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় যে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছিল তা দূর হচ্ছে। পাশাপাশি দেশে দেশে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে এ বছরের জানুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে প্রতি ব্যারেল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবর মাসে এই দাম ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছিল, শিগগিরই তা ১০০ ডলার হয়ে যেতে পারে।

তবে চলতি নভেম্বর থেকে দাম নিম্নমুখী হয়। তারপরও দামটা নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনতে নিজ দেশের পেট্রোলিয়াম ভান্ডার থেকে পাঁছ কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

গত ২৩ নভেম্বর টুইট বার্তায় বাইডেন ঘোষণা দেন, ‘আমেরিকান পরিবারগুলোর জন্য তেল ও গ্যাসের দাম কমাতে পদক্ষেপের কথা আজ ঘোষণা করছি। আমেরিকাবাসীর জন্য স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) থেকে পাঁচ কোটি ব্যারেল তেল ছাড়ব আমরা, যাতে তেল ও গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে।’

দেশে তেল ও গ্যাসের মতো জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি রুখতে এই পদক্ষেপ নেন জো বাইডেন। এর জেরে সে দেশে জ্বালানির দাম কমবে বলে মনে করা হচ্ছিল। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দামেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছিলেন অনেকে। যদিও বাইডেনের এই ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম খুব একটা কমেনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!