• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরকূলের দ্বীপে পর্যটনের হাতছানি


ভোলা প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৭, ২০২১, ০৩:৫০ পিএম
সাগরকূলের দ্বীপে পর্যটনের হাতছানি


ভোলা : মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলে ঢেউয়ের তোড়ে পলি জমে জেগে উঠেছে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ বালির সৈকত। এর পাশেই মাথা উঁচু করে থাকা সারি সারি কেওড়াগাছের সবুজের সমারোহ আর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। ওই বনে হরিণের ছুটে চলা, সৈকতে অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো যে কাউকে মুগ্ধ করবে। প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুরে।

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা দ্বীপকন্যার নীল আকাশ আর সাগরের ঢেউয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই বালির সৈকত দেখে মনে হবে কক্সবাজার অথবা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। স্থানীয়রা যার নাম দিয়েছে ‘দখিনা হাওয়া, সি-বিচ’। যেখানে একই সঙ্গে দেখা মিলবে নীল আকাশের জলরাশি, ম্যানগ্রোভ বন, হরিণ, নানা প্রজাতির অতিথি

পাখি আর সূর্য উদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। রাতের অন্ধকারে ‘দখিনা হাওয়া, সি-বিচ’ ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এ সময় তাঁবুতে রাত কাটানো, সাথে ক্যাম্প ফায়ার, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন নিয়ে হই-হুল্লোড় আর বারবিকিউ পার্টির মজাই আলাদা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সাগর মোহনার মনপুরা দ্বীপের খ্যাতি রয়েছে অনেক আগে থেকেই। সেই সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সাগরের ঢেউয়ে গা ভাসানোর সুযোগ।

এই ‘দখিনা হাওয়া, সি-বিচকে’ ঘিরেই মনপুরা হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট। এ বছর শীত মৌসুমের শুরু থেকে এই পর্যটন স্পটে মানুষের ঢল নামে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিচারক, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, ইউএনওসহ সরকারের নানা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সৈকতটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলবেধে, অনেকে আবার লঞ্চ রিজার্ভ করে এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত। পিকনিক স্পট হিসেবেও বিভিন্ন সংগঠন এই বিচটিকে বেছে নিয়েছে। সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপশি পর্যটকদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য অর্ধশতাধিক ছাতা ও বেঞ্চ বসানো হয়েছে। আছে ছনের তৈরি একাধিক গোলঘর, বৈঠকখানা, দোলনা। পাশাপাশি পর্যটকদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা করা হয়েছে লাইফ জ্যাকেটের।

বিচে ঘুরতে আসা পর্যটক জসিম রানা, মাসুদা আক্তার ও হাসান মাহামুদ জানান, জায়গাটা খুবই ভালো। পরিবার ও পরিজনই নিয়ে ভালো সময় কাটানো যায়। ‘দখিনা হাওয়া সি-বিচ’ সমুদ্র সৈকত হিসেবে এক অন্য রকম যায়গা। কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সৈকত থেকেও আলাদা কিছু। তাই মনপুরাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা এখন সময়ের দাবি বলে জানান ঘুরতে আসা এসব পর্যটক।

সরেজমিন স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ অলি উল্লা কাজল ও তার স্ত্রী সাথী কাজলের উদ্যোগ ও ব্যক্তিগত অর্থায়নে দখিনা হাওয়া সি-বিচটির শোভা বর্ধনের কাজ শুরু হয়। কয়েক মাস আগেই এই সি-বিচের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে শুরু হয় প্রচার-প্রচারণা। এছাড়া ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য ২০ সদস্যের স্থানীয় একটি তরুণ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

এই ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী জানান, স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে দখিনা হাওয়া সি-বিচের শোভাবর্ধনের পাশাপাশি সরকারি অনুদানে বিচের পাকা গেট নির্মাণের কাজ চলছে।  সি-বিচের শোভা বর্ধনের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে দখিনা হাওয়া সি-বিচকে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম মিয়া জানান, জেলা প্রশাসন থেকে গত সেপ্টেম্বরে ভোলার উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেখানে মনপুরা উপজেলাকে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব রয়েছে। মার্চের মধ্যে এই উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া ঘুরতে আসা পর্যটকদের হয়রানি থেকে মুক্ত রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মনপুরায় পর্যটনের অপার সম্ভবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

যেভাবে যাবেন : ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫টায় এমভি ফারহান ও সাড়ে ৫টায় এফবি তাসরিফ লঞ্চে ডেকে ৩৫০ টাকা ও কেবিনে ১২০০ টাকায় সরাসরি মনপুরায় আসতে পারেন। এছাড়া বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে ভোলার ভেদুরিয়া হয়ে বাসযোগে তজুমুদ্দিন সিট্রাক ঘাট। সেখান থেকে লঞ্চ করে সন্ধ্যায় মনপুরায়। অপরদিকে ভোলার ভেদুরিয়া থেকে বাসযোগে চরফ্যাশন লঞ্চঘাট। সেখান থেকে লঞ্চ করে সরাসরি মনপুরার জনতা ঘাট হয়ে দখিনা হাওয়া সি-বিচে যেতে পারেন।

পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা : সি-বিচ সংলগ্ন থাকার ব্যবস্থা নেই। তবে উপজেলা শহরে জেলা পরিষদের চারতলা ও দুইতলা দুটি ডাকবাংলো ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের রয়েছে একটি ডাকবাংলো। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে আধুনিক আবাসিক হোটেল। মনপুরা সদর থেকে অটোরিকশা ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল করে বিচে যাওয়া যায়। এখানকার খাবার হিসেবে শীতের হাঁস, বনমোরগ, তাজা ইলিশ, রূপসী মাছ ও মহিষের দুধের টক দইয়ের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় হোটেলে খুব সহজেই মিলবে এসব খাবার। আর দামও হাতের নাগালে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!