• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

নখদন্তহীন অধিদপ্তরের অভিযানে বন্ধ হয়নি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক


লাইজুল ইসলাম ডিসেম্বর ৩০, ২০২২, ০২:২২ পিএম
নখদন্তহীন অধিদপ্তরের অভিযানে বন্ধ হয়নি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক

ঢাকা: অভিযান চালিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বন্ধ করে দেয় রাজধনীর বেশির ভাগ অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক আবারো তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে কোনো ধরনের লাইসেন্স ছাড়া। অধিদপ্তরের অনুমোদন না পেয়ে এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক কিভাবে আবার কার্যক্রম শুরু করলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নখ-দন্তহীন অধিদপ্তরের অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছেন লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকের মালিকরা।

রাজধানীতে চলতি বছরের আগস্ট মাসে অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই অভিযানে বন্ধ ঘোষণা করা হয় বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। কিন্তু অভিযানের তিন মাস পরেই সেই সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক আবারও খুলে গেছে। এতে অভিযানের কোনো সুফল পায়নি সাধারণ মানুষ। অভিযানে বন্ধ হওয়া হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো আবারও তাদের ব্যবসা শুরু করেছে।

অধিদপ্তরের কর্মকরতারা বলছেন, হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় কোনো ভাবেই এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। আর হাসপাতাল পরিচালকরা বলছেন, আবেদন করেই শুরু করা যাবে কার্যক্রম। তাই আমরা আবেদন করেই আবার শুরু করেছি।

যদিও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব কিছুতেই এক ধরনে গা-ছাড়া ভাব রয়েছে। কিভাবে একটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক চলবে তা ঠিক করা নেই। লাইসেন্স দেয়ার যে নিয়ম সেটাও বেশ ঝামেলার। ওদিকে অধিদপ্তরের হাতে কোনো ক্ষমতা না থাকলেও তাদের দিয়ে প্রতি দুই মাস পরপর অভিযান চালানো হয়। কঠোর পদক্ষেপ নিতে না পারলে এসব অভিযানের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এখন এসব অভিযান লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিকে সারাদেশে শুরু হয় অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান। এই অভিযানে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় এসব অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোকে। ঢাকায় বন্ধ করা হয় ২০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। তখন অধিদপ্তর বলেছিলো, লাইসেন্স না হওয়া পর্যন্ত কোনো ভাবেই হাসপাতাল বা ক্লিনিক চলতে পারবে না।

কিন্তু অভিযানের মাত্র তিন মাস পার না হতেই বেশির ভাগ হাসপাতাল ও ক্লিনিক চালু করেছেন মালিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় মিরপুরের হলি হোম ক্লিনিকটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। মিরপুরের শেখ সেবা মেডিকেল হল বন্ধ করা হয়েছিলো সেই সময়। কিন্তু সেটাও লাইসেন্স না করেই আবার তাদের কার্ক্রম শুরু করেছে। কামরাঙ্গীরচর, রায়েরবাজার ও খিলগাওয়ের ৭টি ক্লিনিক বন্ধ করা হয়। এগুলোও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। যদিও এগুলো দেখ ভালের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিন্তু জনবল কম থাকায় সব দেখা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

সোনালী নিউজকে ফেয়ার নার্সিং হোমের এক কর্মকর্তা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, এটি আমরা আবার নতুন করে শুরু করেছি সবাইকে ম্যানেজ করে। প্রথম দিকে পুলিশকে ম্যানেজ করেছি। এরপর অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আবেদন করেছি। কিন্তু কিছু কাগজ আমাদের সমস্যা আছে। তাই পুরোপুরি অনুমোদনের জন্য যেসব প্রক্রিয়া শেষ করা দরকার তা আমরা করতে পারিনি।

কামরাঙ্গীরচরের ইনান ডায়গনস্টিক সেন্টারের আয়া জুকরেখা আক্তার বলেন, ‘স্যার এটা তো বন্ধ করার মাস খানেকের মধ্যেই আবার খুলে দিছে। মালিকরা কিভাবে যেনো সবাইরে ম্যানেজ করে খুলে ফেলছে। এখন তো রোগী আসে নিয়মিত। বন্ধ হইলে আমাদের চলাফেরা খুব কষ্ট হয়ে যায়। আমাদের পেট চলেই এখানের আয় দিয়ে।

অধিদপ্তরের হাসপাতাল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। একটা ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে আমরা সর্বোচ্চ পারি সেটা বন্ধ করে দিতে। কিন্তু এটা দেখভাল করার ক্ষমতা আমাদের নেই। কারণ লোকবল নেই। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নেই আমাদের কাছে। এই ভাবে অভিযান চালিয়ে ফল পাওয়া কঠিন।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবীর বলেন, যারা এখন আবার লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা এই ভুয়া ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আবার অভিযান শুরু করবো। এবারে যাদের আমরা অবৈধ পাবো তাদের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালানো হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সোনালী নিউজকে বলেন, দেশে এক সময় ক্লিনিক ও হাসপাতালের লাইসেন্স লাগতোই না। সিটি করপোরেশন থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিক খোলা যেতো। এরপর হঠাৎ করে সিটি করপোরেশন হাসপাতালের ট্রেড লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দিলো। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লাইসেন্স দেয়ার নিয়ম বের করলো। কিন্তু সেটা এত কঠিন করা হলো যে আবেদনই করা বন্ধ হয়ে গেলো। দুই দিকেই টানাপোড়েনে অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সহীন হয়ে পরলো।

তিনি আরো বলেন, এখন লাইসেন্স দেয়ার নিয়ম অনেক খানি সহজ করেছে অধিদপ্তর। ট্রেড লাইসেন্স দেয়া শুরু করেছে দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন। কিন্তু ঐ যে অভ্যাস হয়ে গেছে লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালনা করার। সেটাই রয়ে গেছে মানুষের মধ্যে। এই যে খাপ ছাড়া ব্যবস্থা এখান থেকে এখনো অধিদপ্তর বের হয়ে আসতে পারেনি।

আরেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রশীদ ই মাহবুব সোনালী নিউজকে বলেন, একটা নখ ও দাঁত ছাড়া অধিদপ্তর। যাদের কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এই অভিযানগুলো কিভাবে হওয়া উচিৎ তাই তো বোঝে না অধিদপ্তর। বন্ধ করলে এমন ভাবে বন্ধ করতে হবে যাতে লাইসেন্স না করা পর্যন্ত আর খুলতে না পারে। এ অভিযান এক ধরনের ছেলে খেলায় পরিণত হয়েছে। হাতে ক্ষমতা আনতে হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। আরো লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দৌরত্ব বন্ধ করা যাবে না।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!