ঢাকা : বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার কারণে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা না থাকায় মশা নিধন কর্মসূচিও বন্ধ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হতে পারে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে জানায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ২৮৯ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, বৃষ্টির ধরন বদলে যাওয়া, গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুর একই সেরোটাইপ (ধরন), তাপমাত্রা বেশি থাকায়, এডিস মশা প্রজননের উপযোগী না হওয়া—এই তিন কারণে এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর সংক্রমণ গত বছরের তুলনায় কম।
তবে সংক্রমণের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি। তাই কম বলে আত্মতৃপ্তির কারণ নেই। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের এখন এডিস মশা নিধনে সক্রিয় হওয়া জরুরি। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও ভাবতে হবে।হাসপাতালকেন্দ্রিক চিন্তা না করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
সাধারণত বর্ষা-পরবর্তী সময়, অর্থাৎ আগস্ট থেকে অক্টোবর ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, এডিস মশার ঘনত্ব অনুযায়ী এই সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদ ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে গত এক দশকে (২০১৪-২৩) সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ হয় পাঁচবার। অক্টোবরে তিনবার, আগস্ট ও নভেম্বরে একবার করে পিক সিজন হতে দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় ধারণা করা হতো, বর্ষাকাল মানেই ডেঙ্গুর মৌসুম। কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলে যাওয়ার সময় এসেছে। কারণ এখন শুধু বর্ষা নয়, শীত-গ্রীষ্মেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, অক্টোবর মাসে কী হবে, সেটা বলতে পারছি না। তবে আমাদের ফোরকাস্টিং মডেল (পূর্বাভাস) বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। এমনকি ‘পিক সিজনও’ হতে পারে।
কবিরুল বাশার বলেন, গত আগস্টে বর্ষাকালীন জরিপে ঢাকায় গড় ব্রুটো ইনডেক্স ছিল ২০ শতাংশের ওপরে। সর্বোচ্চ ছিল ৭০ শতাংশ। ঢাকার বাইরে সাভার এলাকায় ২০ শতাংশের ওপরে ব্রুটো ইনডেক্স পেয়েছি। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা ও বরিশালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে। অর্থাৎ এই জেলাগুলোর যেসব এলাকায় এডিস মশা ও রোগী আছে, সেখানে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে।
গত বছর ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যু ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। ওই বছর আগস্টে বর্ষাকালীন জরিপে ঢাকার উত্তর সিটির ৭৫ শতাংশ এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি ছিল। দক্ষিণ সিটির ১৯ শতাংশ এলাকায় বিআইয়ের পরিমাণ ২০-এর বেশি। সেই তুলনায় এবার বর্ষা জরিপে মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। তবে ভরা বর্ষায় মশার লার্ভা একটু বেশি পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য মতে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৮৭ জন। এর আগে গত বছরে একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ ২৭ হাজার ৬৯৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৬১৮ জনের। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত কমছে ৯০ শতাংশ, মৃত্যু ৮৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ৪২.৯৫ শতাংশ ঢাকা মহানগর এবং ৫৭.০৫ শতাংশ ঢাকার বাইরের। মৃতদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ঢাকা এবং ৩০ শতাংশ ঢাকার বাইরের।
এমটিআই