• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ব্রয়লার মুরগিতে বিপদজনক ‘সুপারবাগ’, মানুষ কতটা নিরাপদ?


সোনালী ডেস্ক নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম
ব্রয়লার মুরগিতে বিপদজনক ‘সুপারবাগ’, মানুষ কতটা নিরাপদ?

ফাইল ছবি

দেশের পোলট্রি খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের অযথা ব্যবহার এখন সাধারণ সমস্যা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্রয়লার মুরগিতে ‘মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ বা সুপারবাগের বিস্তার ও এর মানব শরীরে বিপজ্জনক প্রভাব।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট ব্রয়লার উৎপাদনের ৭০-৮০ শতাংশই আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের কাছ থেকে। অধিকাংশ খামারি ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ফিড ডিলার বা ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির কথায় রোগ হওয়ার আগেই ‘সুরক্ষা’ হিসেবে মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াচ্ছেন।

নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুচরা বাজারের ব্রয়লার মাংসের ২২ শতাংশে ফ্লোরোকুইনোলোন এবং ১৮ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিনের অবশিষ্টাংশ রয়েছে। পোলট্রি খামার থেকে সংগৃহীত ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়ার ৭৫ শতাংশেরও বেশি মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট। সবচেয়ে আতঙ্কজনক হলো, মুরগির অন্ত্রে ‘এমসিআর-১’ জিন পাওয়া গেছে, যা কোলিস্টিন নামক গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে দেয়।

ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রয়লারশিল্প আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করেছে, কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক সংকট এই অর্জনকে ম্লান করতে পারে। মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

খাদ্যচক্রের মাধ্যমে অল্পমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকের দীর্ঘমেয়াদি প্রবেশ মানুষের অ্যালার্জি, অঙ্গপ্রতঙ্গের বিষক্রিয়া এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। একে কেন্দ্র করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

পরিবেশেও বিপদ বড়। একটি ব্রয়লার মুরগি জীবদ্দশায় ১.৫-২ কেজি বর্জ্য উৎপন্ন করে। দেশে বছরে ২০০ মিলিয়নের বেশি মুরগি উৎপাদিত হয়, যার অধিকাংশ বর্জ্য জমি বা জলাশয়ে ফেলে দিচ্ছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানি ও নদীনালায় নাইট্রেট ও ফসফরাস মিশছে, অ্যামোনিয়া গ্যাস নিঃসরণ ঘটছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকি।

গবেষকরা সুপারিশ করেছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক ব্যবহারের সম্প্রসারণ, বায়োসিকিউরিটি জোরদার, টিকাদান কর্মসূচি নিশ্চিত, নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারের কঠোর নীতি বাস্তবায়ন। এছাড়া নিরাপদ ও টেকসইভাবে উৎপাদিত মুরগির চাহিদা বাড়ানোও জরুরি।

ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সময় থাকতে যদি আমরা সচেতন হই এবং সমন্বিতভাবে কাজ করি, তাহলে এই শিল্পকে নিরাপদ, লাভজনক ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আজকের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আগামী প্রজন্মের নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের ভবিষ্যৎ।’

এসএইচ 
 

Wordbridge School
Link copied!