• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
জিনিসপত্রের মূল্য চড়া

আয় কমছে সাধারণ মানুষের, বাড়ছে পণ্যের দাম


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১২, ২০২১, ০২:০৬ পিএম
আয় কমছে সাধারণ মানুষের, বাড়ছে পণ্যের দাম

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : প্রস্তাবিত ২০২১-২২ বাজেটে কৃষি ও খাদ্যপণ্যে নতুন করে কর আরোপ করা হয়নি। তবুও বেড়েছে চাল, ডাল, তেল ও মাছ-মুরগির দাম। এসব পণ্যে দাম বাড়ার পেছনে নানা অজুহাত ব্যবসায়ীদের। কেউ বলছেন সরবরাহ কম, আর কেউ দোষ চাপান লকডাউনের ওপর। এদিকে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, করোনায় আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও বেতন বাড়ে না, ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার ফলে মধ্যবিত্তদের যে কষ্টও হয় তা কেউ বোঝে না।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের দাম বেশি থাকার কারণে সব ধরনের চালের দাম বাড়ছে। এছাড়া লকডাউনের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার চাল আসতে পারছে না। যে কারণে চালের দাম বাড়ছে। মাছ ব্যবসায়ীদের অজুহাত হলো বাজারে সরবরাহ কম। মুরগি ব্যবসায়ীর দাবি মূল আড়তে দাম চড়া।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন ও পুরনো দুই ধরনের চালের দামই বেড়েছে। যদিও প্রতিবছর এই সময়ে চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি চিকন চাল নাজির শাইল ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। চার দিন আগে এই চালের দাম ছিল ৬৩ টাকা কেজি। অর্থাৎ চার দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে দুই টাকা। মোটা ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা করে। ২৮ ও ২৯ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজিতে। এই চাল ৫০-৫২ টাকা কেজি বিক্রি হতো। এ ছাড়াও ৪৬-৪৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মোটা পাইজম চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে। আর গরিবের মোটা চাল দাম বেড়ে হয়েছে ৪৮ টাকা কেজি। চার দিন আগে এই চালের দাম ছিল ৪৬ টাকা। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সব ধরনের চালের দাম ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। দুদিন আগে মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। সেই মসুর ডাল এখন ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ৯০ টাকার মসুর ডাল হয়েছে ১০০ টাকা কেজি।
 
চাল, ডালের মতো দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ভোজ্যতেলও। চার দিন আগে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৬৬০ টাকা, এখন সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা। অর্থাৎ দুই দিনের ব্যবধানে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। সরবরাহ কমের অজুহাতে বাজারে বেড়েছে মাছের দাম। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, ঘাটে মাছের দাম চড়া। গত সপ্তাহে টেংরা বিক্রি করেছি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আজকে বিক্রি করছি ৬০০ টাকা। বাইলা মাছও ৬০০ টাকা। বেশিরভাগ মাছের দামই বাড়তি। 

এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি রুই, কাতলা ৩০০-৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৭০, আইড় ৪০০-৫০০ টাকা, মেনি মাছ ৩০০-৩৫০, বাইন মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা, পুঁটি ৩৫০-৪০০ টাকা, পোয়া ৩০০-৪০০ টাকা, মলা ৩০০-৩৫০ টাকা, পাবদা ২৫০-৩৫০ টাকা, বোয়াল ৪০০-৫০০ টাকা, শিং ও দেশি মাগুর আকার ভেদে ৩০০-৬০০, শোল মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, টাকি মাছ ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১৪০-১৬০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। বড় ইলিশের কেজি ১২শ থেকে ১৪শ টাকা।

বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে  ১৫ থেকে ২০ টাকা। মুরগি ব্যবসায়ী সুমন জানান, গত শুক্রবারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছি ১২০ টাকা কেজি দরে। পরে সোমবার পর্যন্ত ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় ছিল। এরপর দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। আজকে ব্রয়লার বিক্রি করছি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সোনালিকা (কক) ২২০ থেকে ২৩০  টাকা, লেয়ার (লাল) ২২০ টাকা।
 
দুদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে তিন টাকা করে। ২২ টাকা কেজি আলু তারা এখন ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। দেশি ও আমদানি করা আদা প্রতি কেজি আদায় বেড়েছে ২০ টাকা। দুইদিন আগে যে আদা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত এখন সেই আদা কিনতে ১২০ টাকা লাগছে।  গত সপ্তাহে যে ডিম বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা হালি এখন সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা হালি।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ডিমের দাম প্রতিদিন উঠানামা করে। কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে।  চাহিদা বেশি সাপ্লাই কম থাকলেই বাড়ে। আবার চাহিদা কম সাপ্লাই বেশি তখন কমে।

হঠাৎ করেই বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গিয়েছিল, যে কারণে দাম বেড়ে যায়। ৪০ টাকা থেকে লাফিয়ে দাম বেড়ে কেজি ৬০ টাকা হয়ে যায়। তবে এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে এখন খুচরায় ৪৮ টাকায় নেমে এসেছে।

মুগদা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে কিছু সবজি আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। আর কয়েকটির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে বেগুন, করলা ও পটল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। গতকালও একই দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। টমেটো আগে ছিল ৪০ এখন হয়েছে ৫০ টাকা কেজি। এছাড়া প্রতিকেজি ঝিঙে ও চিচিঙ্গা, ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। কচুর লতি ও বরবটি  বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ঢ্যাঁড়স ও পেঁপে ৪০ টাকায়, আলু ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ও চালকুমড়া আকার ভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। লেবুর হালি আকার ভেদে ১৫-২৪ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ টাকা, ধনিয়াপাতা ও পুদিনাপাতা  ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুঁইশাক, লাউশাক, কলমিশাক, ডাঁটাশাক, লালশাক ও পাটশাক আঁটিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!