ঢাকা : মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন দুইজন উপদেষ্টা নিয়ে আপত্তি ও ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে সরকারের সঙ্গে 'দ্বান্দ্বিক' সম্পর্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) বাংলামোটরে প্লাটফর্মটির প্রধান কার্যালয়ে চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ।
তিনি বলেন, সাংগঠনিক জায়গা থেকে সিদ্ধান্তে এসেছি সরকারের সাথে আমাদের 'দ্বান্দ্বিক' সম্পর্ক হবে। সরকারের ভালো কাজগুলোতে আমরা সঙ্গ দেব। তারা যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তাদের সমালোচনা করব এবং তাদের পাশে থেকে ভুল শোধরানোর চেষ্টা করব।
দীর্ঘ এই আলোচনায় কী নিয়ে কথা হয়েছে- এই প্রশ্নে হান্নান বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন সমন্বয়হীনতা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। যেগুলো উঠে এসেছে সেগুলো কীভাবে উৎরানো যায় এবং একটি রূপরেখা কীভাবে দেওয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
আমরা এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা নিয়েছি এবং এ প্রস্তাবনা ফাইনাল করে আমরা ১০ দিনের মধ্যে একটা রূপরেখা তুলে ধরব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গত রোববার নতুন উপদেষ্টা পরিষদে ব্যবসায়ী শেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর যোগদানের পর বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিক্ষোভে তাদেরকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সমন্বয়ক সারজিস আলম আবার ফেইসবুক প্রোফাইল লাল করেছেন।
বশির উদ্দিন যশোরে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের সৎ ভাই। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় ফারুকীর ফেইসবুক পোস্টগুলো এখন ভাইরাল হচ্ছে নতুন করে, সেগুলোতে তিনি সে সময় সরকারের পক্ষে কথা বলেছেন।
বশির জানিয়েছেন, তিনি ও আফিল উদ্দিন সৎ ভাই, তাদের ব্যবসা এবং রাজনৈতিক চিন্তাও আলাদা ছিল সব সময়। ফারুকী দাবি করেছেন, তিনি ২০১২ সাল থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের পতন চাইতেন এবং আমেরিকান ক্লাবে গিয়ে এ নিয়ে গোপনে আলোচনাও করতেন।
গত রোববার নতুন তিন উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার পর শেখ বশির উদ্দিন ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গত রোববার নতুন তিন উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার পর শেখ বশির উদ্দিন ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে কোনো বিভাজন রয়েছে কি না- এক সংবাদ কর্মীর এমন প্রশ্নে হান্নান বলেন, কোনো ধরনের বিভাজন নেই। আজকে আমাদের প্রায় চার ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে যে বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানটি হয়েছে, তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে আগামী দিনের জন্যে কিছু রূপরেখা তারা দিয়েছেন।
সভায় যেসব সিদ্ধান্ত
সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে:
প্রথমত. এক সপ্তাহের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি নির্বাহী কমিটি গঠন।জনবল কাঠামোতে থাকা চারজনের বাইরে হবে এই কমিটি।
হান্নান বলেন, একটা নির্বাহী কমিটি করে বিভিন্ন সেল করা হবে। সেখানে মানুষের সাথে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম সংগঠিত হবে।
দ্বিতীয়ত. সরকার পতনের ১০০ দিন পূর্তিতে কর্মসূচি পালন।
হান্নান বলেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি। ঢাকায় শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় হবে। পরবর্তীতে জেলা পর্যায়েও করা হবে।
তৃতীয়ত. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি ‘অর্গানাইজিং টিম’ ঘোষণা।
হান্নান বলেন, এই টিম একাধিক সেলে বিভক্ত থাকবে এবং সেল অনুযায়ী কাজ করবে। এই মাসের মধ্যে এই টিম গঠন করার জন্য বলা হয়েছে।
এমটিআই