• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মসজিদে পানির ব্যবহার


মাহমুদ আহমদ সুমন এপ্রিল ৩০, ২০১৬, ০৪:২৫ পিএম
মসজিদে পানির ব্যবহার

মসজিদ আল্লাহর ঘর। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান। মসজিদ মুসলমানের শান্তির নীড়। সবার জন্য কল্যাণকর। পাড়ায় বা মহল্লায় যে মসজিদটি আছে তা আমাদের সবার জন্য যদি কল্যাণকর এবং উপকারী না হয় তাহলে মসজিদ নির্মাণের যে উদ্দেশ্য তা পূর্ণতা পায় না। মসজিদ নির্মাণ শুধু নামাজ আদায়ের জন্য নয় বরং মসজিদ নির্মাণ করা হয়ে থাকে সবার কল্যাণের জন্য।

মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য হল লোকেরা এখানে এসে প্রশান্তি লাভ করবে। পথহারা মানুষ সঠিক পথের দিশা পাবে, বঞ্চিতদের অধিকার প্রদান করা হবে, গরিব-দুঃখী থেকে নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের আশ্রয়স্থল এবং কল্যাণকর হবে মসজিদ।

আমরা কি পারি না, আমাদের মসজিদগুলোকে সবার জন্য কল্যাণকর হিসেবে উপস্থাপন করতে? আমাদের মসজিদটি শুধু পাঁচ বেলার নামাজিদের জন্য উন্মুক্ত না রেখে বরং সব সময়ের জন্য লোকদের উপকারের চিন্তা করে খোলা রাখতে পারি না? আমরা যদি প্রকৃতভাবেই সেই মহান রাসূল ও নবী এবং খাতামান্নাবেইন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী হওয়ার দাবি করি তাহলে তা শুধু দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আমাদের সেই মহান রাসূলের শিক্ষার ওপর আমলও করতে হবে। আমরা যদি তার শিক্ষা মোতাবেক না চলি আর মুখে শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার দাবি করে গর্ববোধ করি তাহলে এটা হজরত রাসূল করিম (সা.)-এর অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা যদি মানুষের উপকারের জন্য কোন ব্যবস্থা না করি তাহলে আমাদের শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার সার্থকতা কি রয়েছে? যেভাবে হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে কেউ সৃষ্টিজীবের প্রতি সদয় হয় আল্লাহও তার প্রতি সদয় হন। অতএব পৃথিবীর সব মানুষের প্রতি দয়ালু হও, সে ভালো হোক বা মন্দ। আর মন্দ লোকের প্রতি সদয় হওয়ার অর্থ তাকে মন্দ হতে নিবৃত্ত করা।’ কতই না চমৎকার শিক্ষা বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর। আমরা কি আদৌ এই শিক্ষাকে বাস্তবে মেনে চলি?

সংবাদপত্রের পাতা উল্টালেই দেখা যায়, পানির জন্য হাহাকার। শত শত মানুষ পানির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে এমনকি পানির গাড়ি পর্যন্ত ছিনতাই করতে বাধ্য হচ্ছে। এই খরার মৌসুমে রাজধানীতে পানির সমস্যা প্রতি বছরই প্রকট হারে দেখা দেয় কিন্তু এর সমাধানের জন্য কেউ কোন চিন্তা-ভাবনা করে না বললেই চলে। অথচ আমরা সবাই যদি সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেই তাহলে হয়তো এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে। আর এর জন্য এলাকার যে মসজিদগুলো রয়েছে সেগুলো সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

অলি-গলিতে বড় বড় মসজিদ আমাদের সবারই দৃষ্টিতে পড়ে। আর প্রতিটি মসজিদে পানির ব্যবস্থা ভালো। কোথাও পানি না থাকলেও মসজিদে সব সময় ঠিকই পানি থাকে। এর কারণ হল মসজিদে পানির ব্যবস্থা করা হয় অনেক লোকের জন্য কিন্তু সারা দিন যেহেতু মসজিদ বন্ধ থাকে আর পাঁচ বেলার নামাজে যে ক’জন মুসলি নামাজে আসেন তাদের অধিকাংশই দেখা যায় বাসা থেকে পানির কাজ সেরে আসেন যার ফলে মসজিদের পানির ব্যবহার তেমনভাবে হয় না। আর এ কারণে মসজিদের পানির রিজার্ভ ট্যাংকি সব সময় ভরা থাকে। অথচ মসজিদের পাশের যে বাড়িটি রয়েছে তাদের কিন্তু পানির জন্য রান্না বন্ধ, কখন পানি সংগ্রহ করবে আর রান্নাসহ যাবতীয় কাজ করবে এ চিন্তায় তারা অস্থির।

মসজিদের পানি কি সবার জন্য উন্মুক্ত হতে পারে না? শুধু মোয়াজ্জিন আর ইমাম সাহেব কেন মসজিদের পানি ব্যবহার করবে। তারা তো পারে এলাকার অন্যান্য লোকদের জন্যও মসজিদের পানি উন্মুক্ত রাখতে। পানি হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। আমরা যদি এই নেয়ামতের কদর করে আল্লাহর সৃষ্ট জীবের উপকার করি তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। একটি উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাদে দাঁড়ালে দেখা যায়, রাজধানীতে শত শত মসজিদের সুউচ্চ মিনার। আর এসব মসজিদের মিনার যেমন উচ্চতায় তেমন দেখতেও জাঁকজমকপূর্ণ। এসব মসজিদের দরজা পাঁচ বেলার নামাজের সময় ছাড়া হয়তো খোলাও হয় না। সারাদিনই বন্ধ করে রাখা হয়। শুধু পাঁচ বেলার নামাজের সময় কিছু নামাজির আনাগোনা হয়। সব মসজিদে যদি মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে সব সময় খোলা রাখে এতে কিন্তু মসজিদের মুসল্লির সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাবে অপর দিকে মসজিদটি এলাকার জন্য কল্যাণকর হবে। মসজিদ থেকে কেউ পানি নেবে, কেউবা টয়লেট ব্যবহার করবে আবার কেউবা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে এক কথায় বলা যায়, যার যে প্রয়োজন রয়েছে সে মসজিদে এসে তার প্রয়োজন মেটাবে।

তাহলেই আমাদের মসজিদগুলোতে প্রাণ সঞ্চার হবে, মসজিদ ফিরে পাবে হারানো গৌরব আর মসজিদ হবে সবার জন্য কল্যাণকর। বিশ্বের মসজিদগুলো সবার জন্য কল্যাণকর হোক এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা কি মসজিদ কমিটি করতে পারে না? আমরা জানি, আমাদের নবী করিম (সা.)-এর মসজিদ ছিল সব শ্রেণীর মানুষের জন্য উন্মুক্ত। সবার প্রয়োজন মসজিদ থেকেই তিনি (সা.) মেটাতেন। আমরা সবাই যদি তার শিক্ষার ওপর আমল করতাম তাহলে পৃথিবীতে দারিদ্র্য ও অশান্তি বলতে কোন কিছু থাকত না। না খেয়ে কেউ দিনাতিপাত করত না।

আর বিশ্বময় এত অরাজকতাও দেখা দিত না। পৃথিবীর সব সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে আজ আমরা শ্রেষ্ঠ নবীর আদর্শকে ভুলে গেছি। আমরা যদি তার আদর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালিত করতাম তাহলে আমাদের সমাজ ও দেশ হতো শান্তিময়। পৃথিবীময় এত নৈরাজ্যও দেখা দিত না আর দেশে হানাহানি-মারামারিও হতো না। তাই আমাদের রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ আবার পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাহলেই আমরা তার উম্মত বলে পরিচয় দেয়ার অধিকার লাভ করব।

মসজিদগুলোতে মূল্যবান কার্পেট, মোজাইক, টাইলস এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার কথা চিন্তা না করে আমাদের মসজিদের মুসলি বৃদ্ধির কথা ভাবতে হবে আর এর জন্য মসজিদটিকে সবার উপকারী হিসেবে সমাজে চিহ্নিত করতে হবে। এখন যেহেতু পানির খুবই সমস্যা দেখা দিচ্ছে তাই মসজিদের পানি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলে অনেকের উপকার হবে। এ সেবা প্রদানে শুধু মসজিদ কেন অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও এ ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আশা করব এই বিষয়টি নিয়ে আলেম সমাজ এবং সরকার ভেবে দেখবেন। (সংকলিত)

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!