• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আপনার মিজানকে ভার করুন


মাওলানা মনিরুজ্জামান মার্চ ৭, ২০২১, ০১:৪৪ পিএম
আপনার মিজানকে ভার করুন

ঢাকা : কিয়ামতের ময়দান। হিসাব নেওয়া হয়ে গেছে। একদল মানুষ হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি পেয়ে গেছে। আরেক দল মানুষের নেওয়া হয়েছে সহজ হিসাব। আর তৃতীয় দলের মানুষদের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব নেওয়া হয়েছে। একদল লোক তাদের আমলনামা পেল ডান হাতে। আরেকদল পেল বাম হাতে। হিসাবের মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে কী কী কাজ করেছিল তা জানতে পেরেছে। কিন্তু কোনো কাজের পরিণাম কী তা এখনো জানা যায়নি। সেটা জানার জন্যই সবার সামনে নিয়ে আসা হবে ‘মিজান’।

মিজানের সহজ বাংলা হলো দাঁড়িপাল্লা। এই দাঁড়িপাল্লা বা মিজান কেমন হবে, তা কল্পনা করা আমাদের জন্য সম্ভব না। রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: কেয়ামতের দিন মিজান আনা হবে। তাতে গোটা আসমান জমিনকে ওজন করতে চাইলেও করা যাবে। অতএব এই মিজানের কল্পনা আমাদের আসবে না।  শুধু এতোটুকুই জানি এখানে ছোট-বড় সব ধরনের আমলই ওজন করা হবে। যে সকল আমল ইখলাসের সাথে, শুধু আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে, তাঁর প্রেরিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা মোতাবেক করা হয়েছিল সে সকল আমল ক্ষুদ্র হলেও মীযানে তাদের ভার হবে অনেক। আর কোনো কাজ যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে খুশি করার জন্য হয়ে থাকে বা রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে না করা হয়ে থাকে সেই কাজ সংখ্যায় যতই হোক না কেন মিজান তার কোনো মূল্যই থাকবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘দুটি কথা আছে যা জিহ্বায় অত্যন্ত হালকা কিন্তু মিজানে অত্যন্ত ভারী। আর আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। কথা দুটি হলো- সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ও সুবহানাল্লাহিল আযীম।

তিরমিযির এক হাদিসে বর্ণিত আছে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ আমার উম্মতের এক লোককে সবার সামনে নিয়ে আসবেন। তার পাপের ৯৯ টি আমলনামা বিছিয়ে দেওয়া হবে। যার প্রত্যেকটি যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকবে। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি এর কোনো কিছুকে অস্বীকার করো? আমার আমল সংরক্ষক ফেরেশতা কি তোমার প্রতি কোনো অন্যায় করেছে? লোকটি বলবে না, হে আমার প্রতিপালক! আল্লাহ বলবেন তোমার কি পেশ করার মতো কোনো অজুহাত বা কোনো নেকি আছে? লোকটি হতবাক হয়ে বলবে, না হে আমার প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, অবশ্যই আমাদের কাছে তোমার একটি নেকি আছে। আজ তোমার প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না। এরপর এক টুকরো কাগজ বের করা হবে। যাতে লেখা থাকবে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকালাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’ আল্লাহ মিজান আনতে আদেশ করবেন। লোকটি বলবে, হে আমার প্রতিপালক এতগুলো বড় বড় আমলনামার কাছে এই ছোট্ট কাগজের ওজন আর কী হবে? আল্লাহ বলবেন, তোমার প্রতি অবিচার করা হবে না। অতঃপর আমলনামাগুলোকে দাঁড়ির এক পাল্লায় এবং ওই ছোট কাগজটিকে অন্য পাল্লায় চড়ানো হবে। দেখা যাবে পাপের আমলনামার ওজন হালকা এবং সেই ছোট্ট কাগজটির ওজন ভারী হয়ে গেছে।

এছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে নিয়মিত যিকির আজকারের কথা উল্লেখ আছে। যেগুলোর ওজন মিজানের পাল্লায় ভারী হবে। আমরা অনেক সময় সংখ্যায় বেশি আমল করার দিকে নজর দেই কিন্তু আন্তরিকতার সাথে আমল করার ব্যাপারে উদাস থাকি। অথচ মিজানের বর্ণনাগুলো শুনলে এব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকে না যে, আমলে আন্তরিকতার ওপর অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এমন কিছুই নেই, যা মিজানে সুন্দর চরিত্রের চেয়ে বেশি ভারী হবে।’ (আবু দাউদ) আমরা সাধারণত ইবাদত বলতে যা বুঝি তা ইখলাসের সাথে করলে সেগুলো মিজানের পাল্লা ভারী করবে ইনশাল্লাহ। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা যেন সুন্দর চরিত্র বজায় রাখার দিকে নজর দেই। রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়া বা নফল রোজা রাখা বা বেশি বেশি সাদকা করাকে উল্লেখ না করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্দর আচরণকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এর একটি ব্যাখ্যা হলো, যে ব্যক্তি কষ্ট করে এত এত নফল ইবাদত করে। কিন্তু তার আচরণ ভালো না। সে তার খারাপ আচরণের মাধ্যমে তার ভালো কাজগুলোকে কেয়ামতের দিবসে হারিয়ে ফেলবে। সে হয়তো কারো ব্যাপারে গিবত করল, সে ব্যক্তি তার তাহাজ্জুদের নেকি নিয়ে যাবে। আরেক ব্যক্তিকে সে গালমন্দ করল, সে ব্যক্তি তার সাদকার নেকি নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর তার ভালো কাজ অল্প হলেও কেয়ামত দিবসে তা নিজের কাছেই রয়ে যাবে। আমরা যেন প্রত্যেকেই আন্তরিকতাপূর্ণ ছোট ছোট ভালো কাজ দিয়ে আমাদের জীবনকে সাজাতে পারি। আর যেসব ভুল হয়ে গেছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে পাপের পাল্লা হাল্কা করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলুম হাটহাজারী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম

 

Wordbridge School
Link copied!